রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সুন্দরগঞ্জে তিস্তানদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে সাংসদ শামীম। কালের খবর চাঁপাইনবাবগঞ্জ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার মৃত্যু বার্ষিকী পালিত। কালের খবর কটিয়াদীর করগাঁও ইউনিয়নে এম পি নূর মোহাম্মদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর তিতাসের আ.লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধাদের মানববন্ধন। কালের খবর কিশোরগঞ্জের দানাপাটুলী ইউনিয়নে জন অংশগ্রহণ মূলক বাজেট সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সোনামসজিদ সীমান্তে বিদেশী পিস্তল-গুলিসহ যুবক আটক। কালের খবর বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠন সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সুন্দরগঞ্জে মীরগঞ্জ শাখার জনতা ব্যাংক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে দোকান মালিক,গ্রাহকদের মানববন্ধন। কালের খবর মিশনে যাওয়া হলনা সেনা সদস্য সাইফুর রহমানের। কালের খবর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি,কিশোরগঞ্জে সেই বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা। কালের খবর
রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। কালের খবর

রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে আমন ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি। কালের খবর

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি, কালের খবর :
প্রায় তিন হাজার হেক্টর আয়তনের চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলেএবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিলের চারপাশে ছয় ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের কৃষকের চোখে মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
হেক্টরপ্রতি উৎপাদনও গতবারের চেয়ে বেশি হয়েছে।
চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের বাঁ পাশের বিশাল এলাকার কৃষিজমি গুমাই বিল নামে পরিচিত। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিলগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়। প্রবাদ আছে গুমাই বিলে এক মৌসুমের উৎপাদিত মোট ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্য চাহিদা মেটানো যায়। সেই গুমাই বিলে এবার রেকর্ড পরিমাণ ধান উৎপাদিত হতে যাচ্ছে। অন্যবার হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন চার থেকে সাড়ে চার টন হলেও এবার তা বেড়ে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় টন পর্যন্ত হতে পারে। সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাত ব্রি-৫১, ব্রি-৫২ ধানে। গুমাই বিলে এবার বেশি চাষাবাদ হয়েছে বন্যা ও জলমগ্ন সহনশীল ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ জাতের ধান। গতবছর টানা তিনবারের বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের কারণে কপাল পুড়ে গুমাই বিলের কৃষকদের।

সে কারণে এবার কৃষকদের জলমগ্ন সহনশীল উন্নত জাতের ধানচাষে উদ্বুদ্ধ করেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। তবে এবার বন্যা না হওয়ায় সঠিক সময়ে চাষাবাদ করতে পেরেছেন কৃষকরা। বৃহত্তর গুমাই বিলে এখন সোনালি ধানের উৎসব চলছে। এখন বাম্পার ফলনের ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর কৃষকরা। গুমাই বিল এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিশাল এ বিলে চাষিদের কেউ ধান কাটায়, কেউবা কাঁধে করে ধান বাড়িতে নিতে ব্যস্ত। বাম্পার ফলন হলেও বিলের কিছু অংশে চাষাবাদ না হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। বৃহত্তর এই বিলের প্রায় দুই হাজার পাঁচ শ হেক্টর জমিতে এবার আমনের চাষাবাদ হয়েছে এবং বাকি পাঁচ শ হেক্টর জমিতে সেচ সংকট, অতিরিক্ত ব্যয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে চাষাবাদ হয়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
গুমাই বিলের প্রান্তিক কৃষক মোহাম্মদ আলী, কবির আহমদ, সেলিম উদ্দিন, ইদ্রিছ মিয়া ও নারায়ণ চন্দ্র দাশ দাবি করেছেন, অনাবাদি জমির পরিমাণ ৮০০ হেক্টর ছাড়িয়ে যাবে। কৃষি বিভাগের হিসাব নিকাশ কাগজে কলমে। বাস্তব চিত্র ভিন্ন। মাঝের বিল, নিশ্চিন্তাপুর, চারাবটতল, কদমতলী সংলগ্ন গুমাই বিলের বিভিন্ন অংশে গিয়ে দেখা গেছে, ধান কাটার বর্ণিল উৎসবে মাতোয়ারা কৃষাণ-কৃষাণি, দিনমজুর, গৃহস্থ সবাই। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেদিকে দু’চোখ যাচ্ছে, দেখা যাচ্ছে কৃষকদের ধানকাটার দৃশ্য। মাঝে মাঝে দূর বিল থেকে মাথায় কিংবা কাঁধে করে কৃষক নিয়ে আসছে কাটা ধানের বড় বড় আঁটি। হাসি-ঠাট্টায় মেতে উঠছেন কৃষক, মজুর সবাই পরস্পরের সঙ্গে। সোনাফলা ধান তুলে নিচ্ছেন মনের সুখে।

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকার দিগন্ত জুড়ে আছে বৃহত্তর গুমাই বিল। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনিয়ার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১৪ হাজার ৯৬০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। হেক্টর প্রতি গড়ে ৫.১৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতে চাষাবাদ শুরু করলেও অনুকূল আবহাওয়া, সঠিক জাত নির্বাচন ও কৃষকদের আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৭৭ হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে এবং প্রতি হেক্টরে গড়ে ৩ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আকতার।

তিনি বলেন, ‘চারদিকে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন বিলের কৃষকরা তাদের কঠোর পরিশ্রম ও ঘামের বিনিময়ে সোনাফলা ধান কাটছে মনের সুখে। সেই সঙ্গে উপজেলার ৪৫ হাজার কৃষকের মনে এখন বয়ে যাচ্ছে সোনালি উৎসব। রাঙ্গুনিয়ার ১৪ হাজার ৯’শ ৬০ হেক্টর জমিতে এবার ব্রি-৪৯, ব্রি-৫১, ব্রি-৫২, ব্রি-৭৫, পাইজাম, বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩ জাতের ধানের চাষ হয়েছে বেশি। তত্মধ্যে পাইজামের মতো সরু চালের ফলন ভালো হওয়ায় নতুন জাতের ব্রি-৪৯ এর দিকে বেশি ঝুঁকেছে কৃষকরা। ব্রি-৭৫ জাতের ধানের চাল সুগন্ধি ও আগাম কেটে ফেলতে পারায় এ জাতের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে। ’

উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘সারাদেশের মতো শস্যভাণ্ডার গুমাই বিলসহ রাঙ্গুনিয়ায় আমন ধানকাটার নবান্ন উৎসব শুরু হয়েছে চলতি সপ্তাহে। কয়েক বছর ধরে গুমাই বিলে বন্যার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। তাই এবার গুমাই বিলে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ করানো হয়েছে বন্যা সহনশীল ব্রি-৫১ ও ব্রি-৫২ জাতের ধান। এই জাতের ধানের ছড়া ১৪ দিন পানির নিচে থাকলেও কোনো ক্ষতি হয় না। ’

এবার গুমাই বিলে ১৩ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন আমন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস।

কর্ণফুলী সেচ প্রকল্পের আওতায় গুমাই বিলে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো ফলন হয়েছে জানিয়ে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে আগামীতে বিলের অভ্যন্তরের ১২টি খালকে সংস্কার করে অনাবাদি থাকা জমিগুলো চাষাবাদের আওতায় আনা হবে এবং এতে ফলনও বাড়বে। ’

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com