শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ অপরাহ্ন
মাগুরা প্রতিনিধি, কালের খবর : মাগুরার শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়া হাট-বাজারের বেহাল দশা। এই হাটের জনসাধারণ হাট-বাজারের উন্নয়নের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কাছে বারবার মৌখিক ও লিখিতি অভিযোগ করেছেন।
স্থানীয় প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতার কারণেই শালিখায় হাট-বাজারে উন্নয়ন কার্যক্রম নেই বলে জানান এলাকাবাসী। কিন্তু কোন প্রকার ফল পায়নি বলে হাটের ব্যবসায়ীগণ ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জানান। যেখানে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার সর্বাধিক রাজস্ব আদায় হয়ে থাকে আড়পাড়া হাট-বাজার থেকে। সপ্তাহে দুইদিন শনি ও বুধবার এখানে হাট হয়ে থাকে। শনিবার গোহাটা ও বুধবার সাধারণ হাট বসে। এক সময় আড়পাড়া বাজারের ফটকি নদীর পাশে সিএন্ডবির জায়গায় আড়পাড়া হাট-বাজারের নির্ধারিত জায়গা ছিল। কিন্তু এলাকার কতিপয় প্রভাবশালীর দখলে গিয়ে তা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে। দুঃখের বিষয়, এই হাটের এখন কোনো নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় আজ এখানে কাল ওখানে হাট বসে। এ ছাড়াও হাটে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আশা ব্যবসায়ীগণ হাটে আসা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন। গত শনিবার আড়পাড়া হাট-বাজার ঘুরে বাজারের বেহাল দশা চোখে পড়ে। বাজারের মাছ ও চাল বিক্রির জন্য পাশপাশি দুইটা নির্ধারিত শেড থাকলেও কাঁচাবাজারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র বিক্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট স্থান না থাকায় এলোমেলোভাবে রাস্তার উপর হাট বসিয়ে তাদের মালামাল বিক্রয় করছেন। যার ফলে হাট ইজারাদার ব্যক্তিকে এই সকল ব্যবসায়ী খাজনাপাতি না দেওয়ায় ব্যাপকভাবে খতিগ্রস্ত হচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে আড়পাড়া বাজারের চালের শেডের পাশে সরকারি জায়গা থাকলেও সেখানে এলাকার প্রভাবশালীদের দখলের কারণে এই কাঁচামাল ও কৃষিপণ্য রাস্তার উপরই পাইকারি ও খুচরা বিক্রয় হচ্ছে। এমনকি তরিতরকারি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় তারা যশোর-মাগুরা মহাসড়কসহ আড়পাড়া-কালীগঞ্জ সড়কের দু’পাশজুড়ে দোকানপাট খুলে বসেছেন। ফলে প্রায়ই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। পাশাপাশি প্রত্যহ যানজট সৃষ্টি হওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে এখানে নিয়ন্ত্রণ হারানো গাড়ির চাপায় কয়েকজনের মৃত্যুও হয়। সবজি কাঁচামাল ও গরু-ছাগল বিকিকিনির এখানে কোন সুনির্দিষ্ট স্থান না থাকায় খেওয়াল খুশিমত যত্রতত্র হাট-বাজার বসে আসছে। আড়পাড়া বাজারের সুনির্দিষ্ট জায়গার জন্য কারও কোনো মাথাব্যথা নেই বলে হাটে ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য আসা অধিকাংশ ব্যবসায়ীর অভিযোগ। এ ছাড়াও বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণ শৌচাগার না থাকায় হাটে আসা মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করছেন। আড়পাড়া বাজারে সপ্তাহে ২ দিনের মধ্যে শনিবার গোহাটা বসে। গোহাটার কারণেই উপজেলার সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় এই হাট থেকে আদায় হয় বলে হাটের ইজারাদার মোঃ শহিদুজ্জামান শহিদ জানান। তিনি আরো বলেন, গত বছর গরুর হাটটি আড়পাড়া বাজার থেকে প্রায় ১ কি.মি. দূরে কানুদার খালপাড় নামক স্থানে বসানো হতো। সেখানে হসপিটাল হওয়ায় এখন আর ওখানে গরুর হাট বসানো হয় না। কিছুদিন আড়পাড়া আইডিয়াল হাইস্কুল মাঠেও গরু-ছাগলের হাট বসানো হতো। সেখানেও স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগে পশুর হাট গোটাতে হয়েছে। এর পর হাটের জায়গা না থাকায় যশোর-মাগুরা মহাসড়কের আড়পাড়া ডিগ্রী কলেজ মাঠের পূর্ব পাশে পশুর হাট বসানো হয়। যেখানে ২৫/২৬ লাখ টাকা দিয়ে হাট ক্রয় করা হয়েছে। সেখানে পশুর হাটের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে প্রতি সপ্তাহ ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। যে কারণে আমাকে দুই দিক থেকে খতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে। একদিকে সরকারকে লাখ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষকেও টাকা দিতে হচ্ছে। এদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষ নোটিশ করে আমাকে জানিয়েছেন যে পশুর হাট এখান থেকে গুটিয়ে নিয়ে যান, তা না হলে হাটটি বিলপ্ত করে দেয়া হবে। যেখানে সামান্যতম বৃষ্টি হলেই দূরদূরান্ত থেকে আশা ব্যাপারীগণ গরু ও ছাগল ক্রয় ও বিক্রয় বন্ধ করে দেয়। ফলে যশোর-মাগুরা মহাসড়কে চরম যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সেখানে কোন গণশৌচাগার ও নামাজের জায়গা না থাকায় হাটে আশা অসংখ্য মানুষ হাটের ভিতরেই কোন রকম নামাজ আদায় করে থাকেন এবং যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করেও থাকেন। হাটের নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় দূরদূরান্ত থেকে আশা ব্যবসায়ীরা এখন ঠিকমত আর আসতে চায় না। এ ছাড়াও হাটের বেহাল দশার কারণে কেনাবেচা অনেকটাই কমে গেছে। ধান ও পাট আড়ৎদারির মালামাল বিক্রির জন্য কোন সুনির্দিষ্ট জায়গা নেই। রাস্তার উপরই এ সকল মালামালের হাট বসে থাকে। ফলে প্রতি বছর প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের। : :