শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন
জেফ আমার অফিসে এলে আমার অফিসের সহকারীরা সজাগ হয়ে যায়। ও একজন নভোবিজ্ঞানী সে কারণে নয়। তাদের সজাগ হওয়ার কারণ আমি জেফের সঙ্গে কথা বলার সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জেফ আমার এক যুগেরও বেশি সময়ের পরিচিত। ও আমার অফিসে এলে তার চিকিৎসা সেবার বাইরে বিস্তর আলাপ হয় আমাদের।
জেফের জন্ম ফ্রান্সে। ছোটবেলায় তার মা বাবার সঙ্গে আলাবামার একটি ছোট্ট শহরে চলে আসে তারা। তার বাবা ছিলেন গণিতের অধ্যাপক। মা কাজ করতেন ব্যাংকে। ছোটবেলা থেকেই জেফের স্বপ্ন ছিল নভোবিজ্ঞানী হওয়ার।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) অধ্যয়ন শেষ করেই নাসাতে গবেষণার কাজ পেয়ে যায় সে। নাসা অরলান্ডো থেকে চল্লিশ মিনিটের পথ। জায়গাটার নাম ‘কেপ কানেভেরাল’। আটলান্টিকের পাশে হাজার হাজার বর্গমাইল নিয়ে অবস্থান এ বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির।
সারা জীবনের স্বপ্ন তার ধরা দিলো নাসাতে। দীর্ঘদিন কাজ করেছে নভোযান তৈরিতে। আমার মহাকাশ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন। তার খানিকটার উত্তর সে আমাকে দিয়ে যায় মাঝে মধ্যে। জেফের সুবাদে দু’বার নাসার রকেট উৎক্ষেপণ দেখার সুযোগ পেয়েছি আমরা।
বছর চারেক আগে নাসার কাজ ছেড়ে ‘স্পেস এক্স’ নামের এক বেসরকারি নভোযান তৈরি করার প্রতিষ্ঠানে বড়কর্তার কাজ নিয়েছে সে। বেসরকারি খাতে নভোযান গবেষণার বিস্তর সুযোগ এখন। এমনকি নভোচারী না হয়েও এসব বেসরকারি নভোযানে চড়ে মহাকাশে ঘুরে আসা যায়, যদি অনেক টাকা থাকে।
এখন তার প্রতিষ্ঠান মহাশূন্যে উপগ্রহ পাঠাচ্ছে নিয়মিত। প্রথম উৎক্ষেপণটি সফল হয়নি তাদের। তবে তার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাই ছিল, ‘না হারলে জিতবে কেমন করে?’
জেফ একদিন আমাকে বলেছিল প্রায় এক হাজার দুইশর মতো উপগ্রহ মহাশূন্যে আছে। অর্ধেকেরও বেশি উৎক্ষেপিত হয়েছে কেপ কানেভেরাল থেকে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের, এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের উপগ্রহ এখান থেকে উৎক্ষেপিত হয়।
একদিন জেফ আমার অফিসে ফোন করে আমার সহকারীকে জানালো, আমি যেন তাকে সময় সুযোগ করে একটি ফোন করি। আমি ফোন করতেই প্রায় চিৎকার করে সে আমাকে জানালো তাদের প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহটি উৎক্ষেপণের দায়িত্বভার নিয়েছে।
আমি ভীষণ উল্লসিত। আমার আবদার সেই নভোযানটি দেখার। জেফ জানালো উপগ্রহের মূল অংশটি তৈরি হচ্ছে অন্য স্থানে। উৎক্ষেপণের নভোযানটি তৈরি করছে তারা। ভীষণ আগ্রহে আমাদের পুরো পরিবার দেখতে গেলাম সেটি।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এসেছিলেন নাসাতে। ভাগ্যক্রমে তার সঙ্গে কথা হয় আমাদের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী স্বাধীনতার মাস মার্চে উপগ্রহটি উৎক্ষেপিত হবে। উপগ্রহের নাম ‘বঙ্গবন্ধু’। এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?
স্বাধীনতার মাস মার্চে এক দল বাংলাদেশিদের নিয়ে নাসাতে যাবো বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহ ‘বঙ্গবন্ধু’ উৎক্ষেপণের স্মরণীয় মুহূর্তটি মনে রাখার জন্য। সেদিন জোর গলায় গাইবো, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’