শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খরর : রাজধানীর এয়ারপোর্ট রেলক্রসিং থেকে দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতের অন্যতম প্রধান বাহন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই থানা এলাকায় প্রায় ৫-৬ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। ঝুঁকিপূর্ণ ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন এই যানটি রাজধানীতে নিষিদ্ধ হলেও পুলিশ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাসোয়ারা দিয়ে বেশ দাপটের সঙ্গেই চলছে দক্ষিণখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন অটোচালক ভোরের কাগজকে জানান, প্রতি মাসের ১ তারিখে থানা পুলিশের টাকা বুঝিয়ে দিতে হয়। টাকা দিলে এক ধরনের স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়। এই স্টিকার থাকলে রাস্তায় চলাচল করতে বাধা থাকে না। প্রতি মাসেই স্টিকারের রং পরিবর্তন করা হয়।
খালেক নামে এক অটোরিকশা চালক ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশের নামে ৬০০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। প্রতি মাসের ১ তারিখে আমরা ৬০০ টাকা জমা দিয়ে একটি স্টিকার নেই। এই স্টিকার না থাকলে আমাদের অটোরিকশা আটক করা হয়। থাকলে কিছু বলে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাহিন ও দেলোয়ারসহ ৮-১০ জন লাইনম্যান পুলিশের নামে টাকা উঠায়। অটোরিকশাপ্রতি সাড়ে ৪০০ টাকা জমা পড়ে থানা পুলিশের কাছে। বাকিটা লাইনম্যানরা ভাগ করে নেয়। এ হিসেবে ৫-৬ হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করছে থানা পুলিশ।
দক্ষিণখান থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. শফিকুল গনি সাবু ভোরের কাগজকে বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেয়া হয় না। আমরা অবৈধ এই যানের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই এলাকায় যাতায়াতের জন্য এগুলোই একমাত্র ভরসা। তাই জনস্বার্থে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে এটি চলতে দেয়া হয়। তবে বিআরটিএ বা সিটি করপোরেশন যদি মনে করে এই যান চলতে দেয়া হবে না, তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।
এদিকে চারতলা একটি ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ভাড়া নিয়ে চলা দক্ষিণখান থানায়ও রয়েছে স্থান সংকটসহ বেশ কিছু সমস্যা। ওই ভবনের নিচতলাটি মার্কেট হওয়ায় নেই পার্কিং ব্যবস্থা। বিভিন্ন মামলায় জব্দকৃত গাড়ি ময়লার ভাগাড়ের মতো রাখা হয়েছে রাস্তার ওপর। আবাসিক ও গাড়ির সমস্যাও প্রকট। নেই বাবুর্চি ও ক্লিনার। একজন ঝাড়–দার দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিতে হয়।
গত ২১ জুন সরেজমিন দেখা যায়, জায়গার অভাবে দুইতলায় থাই গøাস দিয়ে আটকিয়ে নারী ও শিশু ডেস্ক করা হয়েছে। তবে, সেখানে কোনো লোক দেখা যায়নি। দুপুরের দিকে জিডি করতে আসা ১ যুবক ও ১ মহিলা জানান, এই থানায় জিডি করতে কোনো টাকা লাগে না। তারা খুব হেল্পফুল।
থানা সূত্র জানায়, থানাটিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৫২টি, ফেব্রæয়ারিতে ৪৬টি, মার্চে ৫৪টি, এপ্রিলে ৫৪টি, মে মাসে ৬২টি ও চলতি মাসে ২২টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই মাদক মামলা। এই থানা এলাকায় তুলনামূলক নিম্ন আয়ের লোক বাস করায় মাদকের ব্যাপকতা বেশি বলে জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীর নর্দা, হলান বাজার, এশিয়ান সিটি, সোনারখোলা রোড, কাউলা, আশকোনা, নোয়াপাড়া, হাজীপাড়া, মোল্লাপাড়া, আজমপুর, দেওয়ানপাড়া, চালাবন, গোলটেক, গণকবরস্থান, আতিপাড়া, কোটবাড়ী, আলুরবাগ, সাইয়েদনগর, দক্ষিণখান রোড ও হাতিমবাগ এলাকা নিয়ে থানাটি গঠিত। এ থানায় ১ জন অফিসার ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৪ জন এসআই, ২৯ জন এএসআই ও ৪১ জন কনস্টেবল কর্মরত রয়েছেন।