শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
ফরিদপুর প্রতিনিধি, কালের খবর : ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌরসভায় পাকা সড়ক নেই বললেই চলে। বহু এলাকা বছরের বেশির ভাগ সময় জলাবদ্ধতায় থাকে।
এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করতে না পারলে জনগণের ভোগান্তি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
আড়াই বছরের বেশি সময় হলেও নিজস্ব ভবন না থাকায় পৌরবাসীকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী।
পৌর কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ১১.৮৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ও ১১ হাজার ভোটার নিয়ে সদর ইউনিয়নের অধিকাংশ, গোপালপুর, বুড়াইচ ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে আলফাডাঙ্গা পৌরসভা গঠিত হয়।
পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিয়মিত পৌর কর দিতে হচ্ছে নাগরিকদের। কিন্তু এখানে সমস্যার অন্ত নেই। পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বলে কিছু নেই। কিছু পাকা সড়ক থাকলেও নেই সড়ক বাতি।
একটু বৃষ্টিতেই বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে থাকে। পৌরসভার নেই নিজস্ব ভবন। তাই পৌরবাসী এটাকে নামমাত্র পৌরসভা বলে থাকে।
পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথম মেয়র নির্বাচিত মো. সাইফুর রহমান সাইফার। ‘গ’ শ্রেণির এই পৌরসভার নাগরিকরা ১০ থেকে ১২ ধরনের সেবা পাওয়ার কথা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সরবরাহ, পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যাত্রীছাউনি, সড়ক বাতি, যানবাহনের পার্কিং স্থান ও বাসস্ট্যান্ড নির্মাণ, শিক্ষা, খেলাধুলা, চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ।
পৌরসভার বাজার এলাকার ব্যবসায়ী সারোয়ার হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নাগরিক জানান, বর্তমানে জন্ম-মৃত্যুর নিবন্ধন, নাগরিক সনদপত্র, ব্যবসার ছাড়পত্র এ ধরনের সেবা ছাড়া আর কোনো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
এখানকার অধিকাংশ সড়কই স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং জেলা পরিষদের।
পৌরসভার নিয়ন্ত্রণাধীন পাকা সড়কের সংখ্যা কম। শহরের প্রধান সড়ক গুলোর কোনোটিই সংস্কার কাজ হয়নি। অধিকাংশ সড়ক চওড়া কম থাকায় অল্প যানবাহনে চলাচলেই যানজট লেগে থাকে। ফুটপাত বলে কিছু নেই। যে টুকু রয়েছে সে টুকুও ব্যবসায়ীদের দখলে।
এলাকাবাসী জানায়, পৌর শহরে চৌরাস্তা থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার ড্রেন ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া শহরের কোথাও কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। ফলে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নাজুক। সামান্য বৃষ্টিতেই আলফাডাঙ্গা বাজার এলাকা, মালো পট্টি, কুণ্ডু পাড়া, নীলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা , কুশুমদী ও শ্রীরামপুর এলাকায় পানিতে সয়লাব হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তখন ময়লা-আবর্জনাযুক্ত পানি দোকান ও বাসায় ঢোকে।
এতে পৌরবাসীকে যাতায়াতে চরম সমস্যায় পড়তে হয়। পানি বের হয়ে যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সড়কের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পড়ে আছে। এসব থেকে দুর্গন্ধ বের হয়ে পরিবেশ দূষণ করছে। পৌরসভার আধুনিক দুইটি বর্জ্য অপসারণের ট্রাক থাকলেও তার ব্যবহার নেই।
মালো পট্টির বাসিন্দা দুর্গা রাণী মালো, নারায়ণ দাস ও হাফিজ মণ্ডলসহ বেশ কয়েকজন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকার মানুষ কষ্টের মধ্যে রয়েছে। অল্প বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। অফিস ও স্কুলে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তারা অবিলম্বে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে বলেন, জানি না কবে এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাব?
নীলাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকা রুবেল মোল্লা ও করিম শেখসহ কয়েকজন বলেন, যারাই ভোটে দাঁড়ান, তারাই বলেন জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু ভোট শেষ হওয়ার পর আর কোনো কাজ হয় না। আমরা আসলেই বড় অসহায়। দেখার কেউ নেই। এ রকম পরিবেশে বসবাস করা যায় না।
আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত কুসুমদী -বারাসিয়া নদী পর্যন্ত এবং বিশ্বাসপাড়া থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত দুটি খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন করলে জলাবদ্ধতা সমস্যার সামাধান হতে পারে। ‘
আলফাডাঙ্গা পৌরসভার সচিব মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের একটি টিনশেড ঘরে পৌরসভার কাজ চলছে। জায়গার স্বল্পতায় দাপ্তরিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি। জনবল ও অর্থ সংকট থাকায় কাজে ধীরগতি রয়েছে। ‘
এ ব্যাপারে মেয়র সাইফুর রহমান সাইফার বলেন, ‘অল্প সময় হলো মেয়রের দায়িত্ব নিয়েছি। সীমিত সামর্থ্যে কাঙ্খিত নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে কাজ করছি। পৌরসভার ফান্ড সমস্যা রয়েছে। যে বরাদ্দ পেয়েছি তা দিয়ে রাতারাতি সব সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
মেয়র আরো বলেন, পৌরভবন নির্মাণ, সড়ক সংস্কার, বর্জ্য অপসারণ এবং ড্রেনেজ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ সব উন্নয়ন কাজ শেষ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।