রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৮:২৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সোনামসজিদ সীমান্তে বিদেশী পিস্তল-গুলিসহ যুবক আটক। কালের খবর বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠন সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সুন্দরগঞ্জে মীরগঞ্জ শাখার জনতা ব্যাংক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে দোকান মালিক,গ্রাহকদের মানববন্ধন। কালের খবর মিশনে যাওয়া হলনা সেনা সদস্য সাইফুর রহমানের। কালের খবর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি,কিশোরগঞ্জে সেই বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা। কালের খবর ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা তাড়াশে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আবদুস সালাম বি.এস.সি। কালের খবর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা মৎস্যজীবীদের সভাপতি শাহ আলম সাউদের উদ্যোগে ২০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত। কালের খবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকির, প্রতিবাদে সুন্দরগঞ্জে বিক্ষোভ সমাবেশ। কালের খবর শিগগিরই সরকার পতনের আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায় । কালের খবর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ নিলো মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর দায়িত্ব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ নিলো মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর দায়িত্ব

 

 

সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি,কালের  খবর :

টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ধাবিত বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর দায়িত্ব নিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ। মন্তাজের বাড়ি সরাইলের অরুয়াইল ইউনিয়নের হাওর এলাকার মেঘনা পাড়ের রাজাপুর গ্রামে। মন্তাজ আলী (৭২) বয়সের ভারে ন্যূব্জ। ছেলের বাদাম বিক্রির টাকায় চলে সংসার। নলকূপ নেই। অন্যের বাড়ি থেকে পানি আনতে হয়। নেই ভালো একটি টয়লেটও। ভিটেমাটিহীন মন্তাজ আলী খুবই অসুস্থ। অনেক টাকার প্রয়োজন। পরিবার একেবারেই অক্ষম। অর্থাভাবে চিকিৎসা করতে পারছেন না। মৃত্যুর যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করছেন। এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর পাশে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। প্রথমে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির অসুস্থ মন্তাজ আলীর বাড়িতে যান। স্বাধীনতা যুদ্ধের অকুতোভয় এ সৈনিককে সান্ত্বনা দেন। পরে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। মন্তাজ আলীকে প্রথমে জেলা সদর হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ারও চিন্তা করছেন তারা। সূত্র মতে, দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাত্র ২২ বছর বয়সের যুবক মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ৫ নং সেক্টরে যোগদান করে কমান্ডার মেজর মুসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন। আর গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন মো. ইয়াকুব আলী। গ্রুপ কমান্ডারের সঙ্গে সাচনা থানায় পাকবাহিনীর ক্যাম্পে আচমকা হামলা করে সহযোদ্ধাদের অবাক করেছিলেন মন্তাজ। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। যুদ্ধে কঠোর পরিশ্রম ও অর্ধাহার অনাহার একটুও দাগ কাটেনি মন্তাজের মনে। স্বাধীনতার আনন্দে সবকিছুই ভুলে গিয়েছিলেন। এক সময় মন্তাজ আলী পান বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ। তার আইডি নং-০২০২০৪০২৩৭, মন্ত্রণালয় সনদ নং-৬৩৪৭৮ ও গেজেট নং-৪৫৭০। যুদ্ধের পর সাত কন্যা ও দুই ছেলে সন্তানের বাবা হন তিনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিকভাবে দুর্বল হতে থাকেন। আয় রোজগারও কমতে থাকে। দারিদ্র্যতার কারণে সন্তানদের পড়ালেখাও করাতে পারেননি। সংসারের আহার যোগার করতে বৃদ্ধ বয়সে কাঁধে ভার নিয়ে গ্রামে গ্রামে ফেরি করে পাতিল বিক্রি করেছেন। যা কিছু আয় করেছেন তা দিয়েই সন্তানদের মুখে খাবার দিয়েছেন। মেয়েদের বিয়ে দিতে গিয়ে তিনি শেষ সম্বল তিন বিঘা জমি ও সর্বশেষ ভিটে বাড়িটিও বিক্রি করে দেন। এক সময় মন্তাজ সাত সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করেছেন। পরে সরকারি খালের উপর কোনো রকমে একটি ঘর উঠিয়ে বসবাস করছেন। অর্থাভাবে ছেলেদের লেখাপড়া হয়নি। সংসারের অভাব দেখে ছোট ছেলে ফারহান (১৭) কুমিল্লায় ফেরি করে বাদাম বিক্রি করছে। আর বড় ছেলে টেইলারের হেলপারের কাজ করছে। তাদের সামান্য আয় দিয়েই এখন কোনো রকমে চলছে দেশের এ শ্রেষ্ঠ সন্তানের পরিবার। সাত মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মন্তাজ। তার কিডনিতে পাথর ধরা পড়ে। ব্যয়বহুল চিকিৎসা। পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বাবার চিকিৎসার জন্য মন্তাজের ছেলেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। এক সময় নিরুপায়। বিষয়টি জেনে মন্তাজের অপারেশনে সহায়তার হাত প্রসারিত করেন আরেক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ইসরাত। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর মন্তাজ স্ট্রোক করেন। বর্তমানে তিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত। গত ২০-২৫ দিন আগে মেয়ের জামাতার দেয়া একটি দামি মুঠোফোন সেট বিক্রি করে বাজিতপুর জহিরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসার জন্য যান। চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। টাকার অভাবে আর ঢাকায় যেতে পারেননি। কোনো উপায় না দেখে গ্রাম্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করছেন। বিছানায় শুয়ে শুয়ে কষ্টে কাতরাচ্ছেন মন্তাজ। আর বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। মন্তাজ আলীর কষ্টের কথা জেনে পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ। ২৭শে ফেব্রুয়ারি রাজাপুর গ্রামে ছুটে যান সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির। তিনি মন্তাজ আলীর চিকিৎসাসহ যাবতীয় খোঁজখবর নেন। মন্তাজ আলীসহ পরিবারের সবাইকে সান্ত্বনাও দেন। পরে তিনি বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। জেলা পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মিজানুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন মন্তাজ আলীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। তারা মুক্তিযোদ্ধা মন্তাজ আলীর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার মন্তাজ আলীকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। চিকিৎসা ও পরীক্ষা নিরীক্ষার কাজ চলছে। চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, দেশের একজন শ্রেষ্ঠ সন্তান এভাবে অযত্নে বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারে না। সরাইল সার্কেলের এএসপির মাধ্যমে জানতে পেরে এসপি স্যারের নির্দেশে আমরা মন্তাজ আলীর চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছি। জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসক পরামর্শ দিলে আমরা তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করব।

কালের  খবর  -/৪/৩/১৮

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com