রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
বগুড়ায় অটোরিকশা থেকে বছরে ৩৬ কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন

বগুড়ায় অটোরিকশা থেকে বছরে ৩৬ কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন

 

 

বগুড়া প্রতিনিধি, কালের খবর  :

মাত্র ১০ বছরে শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন বগুড়া জেলা যুবলীগের এমন নেতার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সঙ্গে সহযোগী হিসেবে যোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের একটি অংশ।

আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া এসব নেতার মূল ব্যবসা হচ্ছে সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চাঁদাবাজি। এই খাত থেকে বছরে চাঁদা আদায়ের পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকারও বেশি।
দত্তবাড়ী, চেলোপাড়া, শেরপুর রোড, স্টেশন রোড, চার মাথার চালকরা কোন কোন খাতে চাঁদা দিতে হয় তার একটি বিবরণ দেন। তাতে দেখা যায়, প্রতিদিন সিএনজি অটো টেম্পো মালিক সমিতি, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন মালিক সমবায় সমিতি, পৌরসভার টোল, রাজশাহী বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারেশন, অটো টেম্পো ও অটোরিকশা মালিক গ্রুপ, যানজট নিরসনে মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন, বগুড়া জেলা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজি বাইক মালিক সমিতির নামে প্রতিদিন স্লিপ দিয়ে চাঁদা আদায় করা হয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারা এসব সমিতিরও নেতা।

শহরের দত্তবাড়ী ও চেলোপাড়া পূর্ব বগুড়া নিয়ন্ত্রণ করেন শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদত হোসেন শাহীন, একরামুল কবির মিঠু। তাঁরা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম ওরফে মোহনের আস্থাভাজন। চেলোপাড়ার পূর্ব বগুড়া গাবতলী অংশে রয়েছেন যুবলীগের দুই নেতা আনন্দ কুমার (বড়) ও সংগ্রাম কুমার। এই সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের আরেক কর্মী মাইসুল তোফায়েল কোয়েল।

চেলোপাড়া পূর্ব বগুড়া (চন্দনবাইশা) সড়ক নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগের নেতা লতিফুল করিম, আব্দুল মতিন প্রামাণিক ওরফে নারুলী মতিন। তবে যুবলীগের নেতা লতিফুল করিম বলেন, ‘এসব চাঁদা আদায়ের সঙ্গে জড়িত নই। সংগঠনের অফিসে এমনিতেই যাতায়াত করি। ’

সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম আছাদুর রহমান দুলু ও যুবলীগকর্মী মিথুন এমরান নিয়ন্ত্রণ করেন সাতমাথা-শেরপুর রোড।

জেলা যুবলীগের সাবেক সহসভাপতি আলহাজ শেখ গোহাইল রোড ও স্টেশন রোড এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর নিয়ন্ত্রণে আরো রয়েছে কাহালু ও নন্দীগ্রাম সড়ক। এই দুই সড়কসহ শেরপুর, ধুনট ও মহাস্থান, মোকামতলা ও শিবগঞ্জ জাতীয় মহাসড়কের অংশ। তার পরও দিন-রাত অবাধে এসব সড়কে দেদার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে পুলিশের সামনে।

শহরের চারমাথা এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে চাঁদা তোলা নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগকর্মী এরশাদ শেখ ও খোরশেদ শেখ।

শহরের দত্তবাড়ী থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা অটোরিকশার (ব্যাটারি) চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করেন যুবলীগকর্মী বিসিকের রফিকুল ইসলাম ও রহমাতুল ইসলাম মনির। শেরপুর রোডে অটোরিকশার চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাপ্পী।

কালের খবরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়া শহরে নিবন্ধিত অটোরিকশা রয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার। আর অনিবন্ধিত আছে আরো ২০ হাজার। মালিক সমিতির সদস্য হতে চাঁদা লাগে এককালীন ৮-১০ হাজার টাকা। একটি অটোরিকশা যতবার মালিকানা বদল হয় ততবার পুনর্ভর্তি ফি লাগে। আর নিবন্ধন হালনাগাদ না থাকলে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ম্যানেজ খরচ বাবদ উঠানো হয় প্রতি গাড়ি থেকে মাসে ৩০০ টাকা। অনিবন্ধিত অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে তোলা হয় ৫০০ টাকা করে। সেই হিসেবে অনিবন্ধিত অটোরিকশা থেকে মাসে এক কোটি হিসেবে বছরে উঠছে ১২ কোটি টাকা। আর নিবন্ধন হালনাগাদ না থাকা চার হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা হিসেবে বছরে উঠছে আরো দেড় কোটি টাকা। আর এই ২৫ হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন চেইন চাঁদা উঠছে গড়ে ৮০ টাকা হিসেবে বছরে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। মালিক সমিতিতে ভর্তি বাবদ গড়ে আট হাজার টাকা হিসেবে প্রায় ২৫ হাজার অটোরিকশাকে ব্যয় করতে হয়েছে বছরে ২০ কোটি টাকা। একাধিকবার গাড়ি বিক্রি হলে এই টাকার পরিমাণ প্রতিবার বাড়ে।

চালকরা জানান, ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ী বাজার থেকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত একটি অটোরিকশা আসার পথে গোসাইবাড়ীতে ২০ টাকা, ধুনটে ২০ টাকা, শেরপুরে ৩৫ টাকা, মাঝিপাড়ায় ১০ টাকা, বনানীতে ৩৫ টাকা ও শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গেটে ৬৫ টাকা চাঁদা দিতে হয়। এ ছাড়া রাস্তার মধ্যে বেকার শ্রমিকদের নামে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত তোলা হয়। চালকদের ভাষায়, এই চাঁদার নাম চুঙ্গি।

এ বিষয়ে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম কল রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জেলা যুবলীগের সভাপতি লিটন পোদ্দার বলেন, ‘বেশির ভাগ যুবলীগের কর্মী অটোরিকশার চাঁদা তোলে, এটা সত্যি। এদের অনেকে দলের জন্য কাজ করে, কেউ নিজের স্বার্থে কমিটিতে রয়েছে। ’

জেলা সিএনজি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ শেখ বলেন, সংগঠনের নির্ধারিত টাকার বাইরে কোনো চাঁদা নেওয়া হয় না।

বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজউদ্দিন বলেন, ‘চাঁদাবাজি দেশের সব জায়গাতেই আছে। তবে শ্রমিক কিংবা মালিক নেতা সেজে কারা আসলে চাঁদা তুলছে সেটি দেখুন। এদের গডফাদারদের খুঁজে বের করুন। চাঁদাবাজদের দল কখনো প্রশ্রয় দেয় না। ’

ট্রাফিক সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কুদরতই খুদা বলেন, ‘কোথাও চাঁদাবাজি হয় না। হলে পুলিশ তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করবে। ’

বগুড়া হাইওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু পুলিশ বাধা দিতে গেলেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী হয় তদবির না হয় আন্দোলনের হুমকি দেয়। এদের সঙ্গে আবার মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন জড়িত।

বগুড়ার এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, ‘যতটুকু জানি চাঁদা তোলা হয় সংগঠনের নামে। অন্যায়ভাবে চাঁদা নেওয়া হলে যে কেউ অভিযোগ দিতে পারে। তখন আমরা ব্যবস্থা নেব। ’

জেলা প্রশাসক (ডিসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘অভিযোগ ছাড়া কিছু করা যাবে না। ’

কালের খবর /বি এস

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com