বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫, ০৮:৫১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সীমান্তে পুশইন বন্ধে স্থানীয় জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে কাজ করছে বিজিবি। লে. কর্নেল মো.খালিদ ইবনে হোসেন। কালের খবর রায়পুরায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ স্থগিত : পুনর্বহালের দাবি। কালের খবর প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে প্রেমিক উধাও, বাড়িঘর ভাঙচুর ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। কালের খবর জিসপ’র উদ্যোগে শহীদ জিয়ার ৪৪ তম শাহাদাত বার্ষিকীতে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত। কালের খবর মাটিরাঙা সরকারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এ্যালামনাই এসোসিয়েশনে’র উদ্যোগে ৯ জুন ঈদ পূর্ণমিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কালের খবর খেলাপি ঋণের বোঝায় ঝুঁকিতে আর্থিক খাত। কালের খবর ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুরে জনমিতি পরিবর্তন করছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। কালের খবর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ। কালের খবর কুষ্টিয়ায় অগ্নিসংযোগে ধ্বংস কু‌ষ্টিয়া ম‌ডেল থানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠা‌নে হট্ট‌গোল। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় ইয়াবাসহ তিন মাদক কারবারি ধৃত। কালের খবর
জিরো টলারেন্সে মাদক-সন্ত্রাসের অবসান: জনতার পুলিশ গড়ছেন এসপি আব্দুল হান্নান। কালের খবর

জিরো টলারেন্সে মাদক-সন্ত্রাসের অবসান: জনতার পুলিশ গড়ছেন এসপি আব্দুল হান্নান। কালের খবর

 

শফিকুল ইসলাম, রায়পুরা প্রতিনিধি, কালের খবর :

বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো জেলা পুলিশ। প্রতিটি জেলার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ বিভাগ যে ভূমিকা পালন করে, তা অনস্বীকার্য। সেই ধারাবাহিকতায়, নরসিংদী জেলা পুলিশ আজ এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, যার কৃতিত্বের মূলে আছেন বর্তমান পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান।

নরসিংদী সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. রাসেল এবং স্বেচ্ছাসেবক মো. আল-আমিন রহমান বলেন, মো. আব্দুল হান্নান ২০২৪ সালের ৩০ আগস্ট নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নরসিংদী জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনে নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। তিনি শুধু একজন প্রশাসক নন, বরং একজন সেবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার নেতৃত্বে গঠিত টিম অপরাধ দমনে সক্রিয়, মাদকবিরোধী অভিযানে সফল এবং সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছে। আমরা, নরসিংদীর মানুষ, অনেকটাই স্বস্তি ফিরে পেয়েছি।

নরসিংদী ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন, পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নানের তত্ত্বাবধানে জেলার বিভিন্ন জায়গায় অপরাধের হার দৃশ্যমানভাবে কমে এসেছে। খুন, ডাকাতি, চুরি এবং সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে র‍্যাপিড অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। নরসিংদীর জনগণ এখন অনেক বেশি নিরাপদ বোধ করেন এবং যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর পুলিশের দ্রুত সাড়া পাওয়া যায়। বিশেষ করে পুলিশ সুপার নিজেই অধিকাংশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দ্রুত সমাধান করেন।

নরসিংদীর সুশীল সমাজ ও সিনিয়র সাংবাদিকরা জানান, একসময় মাদক নরসিংদীতে একটি জাতিগত সমস্যায় পরিণত হয়েছিল। মো. আব্দুল হান্নান এই সমস্যা সমাধানে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান শুরু হয়। গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নরসিংদী জেলা জুড়ে ব্যাপক সাফল্য আসে। এক সময় যেসব এলাকায় সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল, এখন সেসব এলাকায় ফিরে এসেছে শান্তি।

জেলার ছয় থানার ওসি ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, পুলিশ সুপার নরসিংদীতে আসার পর আমাদের দায়িত্ব পালনের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অপরাধ সংক্রান্ত কোনো ক্ষেত্রেই তিনি ছাড় দিচ্ছেন না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা আমাদের অপরাধ দমনে কাজ করতে হচ্ছে। তিনি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করেন, ফোনে যোগাযোগ রাখেন এবং অপরাধ সংঘটিত এলাকায় দ্রুত আমাদের পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। চিরুনি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে পুরো জেলাজুড়ে অপরাধ নির্মূলে কাজ চলছে।

তারা আরও জানান, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক অভিযানে ১৬৩ কেজি গাঁজা ও ৮৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয় এবং ৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধ কমে এসেছে এবং যুবসমাজের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে ৯৬ কেজি গাঁজা বিক্রির ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও এক বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই পদক্ষেপ তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের প্রমাণ বহন করে।

বাসচালক রুস্তম আলী, অটোরিকশাচালক ফজলে রাব্বি, আকরাম, মনিরসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, একসময় নরসিংদীর প্রতিটি মোড়ে-মোড়ে চাঁদা দিতে হতো। না দিলে গাড়ি আটকানো হতো, মারধর ও নির্যাতন করা হতো। কিন্তু পুলিশ সুপার হান্নান স্যার দায়িত্ব গ্রহণের পর একের পর এক চাঁদাবাজকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনেছেন। এখন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যান চলাচল করতে পারছি এবং আমাদের মাঝে অনেকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।

নরসিংদীর একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ জানান, মো. আব্দুল হান্নান নরসিংদী জেলা পুলিশকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য ও সহানুভূতিশীল করে তুলেছেন। থানায় আগত সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ নিশ্চিত করা হয়েছে। নারী, শিশু ও নির্যাতিতদের জন্য আলাদা সেল, হেল্প ডেস্ক এবং নারী পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় ভূমিকা সমাজে আস্থা ও নিরাপত্তার বার্তা দিয়েছে।

তিনি পুলিশ প্রশাসনে প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্ভাবনী ভূমিকা রেখেছেন। সিসিটিভি মনিটরিং, মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক অভিযোগ গ্রহণ, ডিজিটাল রেকর্ড সংরক্ষণ ও অনলাইন সেবা চালু করে নরসিংদী জেলা পুলিশকে একটি মডেল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। তিনি শুধু অপরাধ দমনেই নয়, সামাজিক সচেতনতায়ও গুরুত্ব দিয়েছেন। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের মাদক, ইভটিজিং ও সাইবার অপরাধ সম্পর্কে সচেতন করেছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, র‍্যালি ও সেমিনারের মাধ্যমে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে পুলিশি কার্যক্রমকে আরও গণমুখী করেছেন।

নরসিংদী ছাত্রদলের সভাপতি মো. নাহিদ বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঠিক পর থমথমে একটি সময় নরসিংদীতে আসেন পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান। তখন চারিদিকে ছিল থমথমে এক পরিস্থিতি এবং চরম ঘোলাটে পরিবেশ। পুলিশে ছিল না মনোবল, বেড়েছিল প্রকট আকারে অপরাধ—ডাকাতি, চুরি, রাহাজানি, হত্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক ওই সময় নরসিংদী জেলাটাকে পুলিশ সুপার তার দৃঢ় নেতৃত্বে আস্তে আস্তে স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যান। একের পর এক আওয়ামী লীগের দোসরকে গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার, মাদক উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধ জনিত ঘটনা তিনি মাঠে থেকে সমাধান করেছেন। তার একের পর এক কর্মকাণ্ডের কারণেই নরসিংদীর মানুষ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন। এটা হয়তো অন্য কোনো পুলিশ সুপার থাকলে সম্ভব হতো না। দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নরসিংদীর অবস্থাটা আমরা নিজ চোখে দেখেছি, তাই বলতে পারছি।

নরসিংদী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনজুর এলাহী বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর এক বিধ্বস্ত নরসিংদীকে টেনে তুলেছেন পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান। মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছেন। একটা দিনও দেখলাম না, তিনি কোনো অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করেছেন। সার্বক্ষণিক দেখেছি, এসি রুম প্রত্যাখ্যান করে ছোট-বড় যেকোনো ঘটনা ঘটলে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণে দ্রুত সমাধান করেছেন এবং বিচার নিশ্চিত করেছেন। এটা অন্যান্য পুলিশ সুপারদের তুলনায় নরসিংদীতে বিরল ঘটনা। আমি একজন রাজনৈতিক নেতা নয়, একজন সাধারণ নরসিংদীবাসী হিসেবে বলতে চাই—আমার দেখা মতে, নরসিংদীর সবচেয়ে সেরা পুলিশ সুপার হলেন তিনি।

নরসিংদী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট রিন্টু বলেন, নরসিংদী একটি বিশাল জেলা। হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও হাজারো সমস্যা। যতবারই পুলিশ সুপারকে ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা জানানো হয়েছে, তিনি খুব দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করেছেন। ব্যবসাবান্ধব নরসিংদী গঠনের ক্ষেত্রে তিনি কখনো আপোস করেননি। যেখানেই ব্যবসায়ীর ওপর অত্যাচার বা চাঁদাবাজি হয়েছে, তিনি দ্রুততার সঙ্গে বিচার নিশ্চিত করেছেন। অপরাধী যত বড়ই হোক না কেন, তিনি কোনো ছাড় দেননি—এটা আমি নিজ চোখে দেখেছি।

পুলিশ সুপার মো. আব্দুল হান্নান বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের মাঝে পুলিশের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি করা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো। আমরা প্রতিনিয়ত জনগণের সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তার দূরদর্শী নেতৃত্বে নরসিংদী জেলা পুলিশ এখন একটি আধুনিক, দক্ষ ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে। জনগণের মাঝে পুলিশের প্রতি আস্থা বেড়েছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা হয়েছে শক্তিশালী ও টেকসই। তার এই অবদান শুধু এই জেলার নয়, গোটা দেশের পুলিশ প্রশাসনের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। নরসিংদীর ইতিহাসে তার নাম সোনার অক্ষরে লেখা থাকবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com