রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক : ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশের
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এমন নির্বাচনই দেখতে চায়। এ জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, অবশ্যই সম্ভব এবং নিশ্চিতভাবেই এটি হতে হবে। এ প্রসঙ্গে মার্কিন অবস্থানের পুনরুল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, আমাদের অবস্থান আগের মতোই আছে। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য এবং সব দলের অংশগ্রহণ। বাক স্বাধীনতা, সংগঠন করার অধিকার ও সংগঠিত হওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের জন্য দরকার। প্রয়োজন সহিংসতামুক্ত নির্বাচন। এটি কেবল নির্বাচনের দিন নয়, সব সময়ের জন্য প্রযোজ্য। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন কারাগারে, যখন বিএনপির শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী কর্মসূচী পালনে সরকার তথা পুলিশ নানাভাবে বাঁধা প্রদান করছে, ক্ষেত্র বিশেষ উগ্র আচরণ প্রদর্শন করতেও দ্বিধা করছেনা এবং উদ্ভূত বাস্তবতায় বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তখন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই বক্তব্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়। তাঁর এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে তিনি মূলত এটাই বলতে চেয়েছেন যে, তার দেশ বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হতে দেখতে চায়। এটাই দেশটির পূর্বাপর অবস্থান। এ জন্য অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কে এই পরিবেশ নিশ্চিত করবে, তিনি স্পষ্ট করে উল্লেখ না করলেও বুঝতে অসুবিধা হয় না, সরকারকেই সেটি করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।
একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই চায় না, জাতিসংঘ চায়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চায়, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশও চায়। কিছু দিন আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টারী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছে। আগামী নির্বাচনই দলটির এ সফরের মুখ্য উদ্দেশ্যে ছিল তা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রাখ-ঢাক না করেই বলেছেন। প্রতিনিধি দলের নেতা জিন ল্যামবার্ট বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং বলে অভিহিত করে বলেছেন, তারা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। নির্বাচন কমিশন যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার নিশ্চয়তাও তারা দেখতে চান। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক কদিন আগে বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের ঘটমান পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছি। আমাদের মূলনীতি হলো, এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হতে পারে। জাতিসংঘ এমন একটা নির্বাচনই প্রত্যাশা করে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখেনা, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শুধু আন্তর্জাতিক মহল চায় না, দেশের বিরোধী রাজনৈতিক মহল, বিদ্বৎ সমাজ এবং তাবৎ জনগণ চায়। বিগত দশম সংসদ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন হিসাবে দেশে-বিদেশে বর্ণিত হয়েছে। ওই রকম একতরফা, ভোট ও ভোটারবিহীন নির্বাচন ফের হোক, কেউ চায় না। এই জন ও আন্তর্জাতিক আঙ্কাঙ্খাকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ ও অবকাশ নেই।
অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠা বা মাঠ সমতল করা। এ দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনের। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরকারী দলের নেতারা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে দিয়েছেন। অথচ প্রধান বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে। তার মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীও পালন করতে পারছে না দলটি। হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের তাÐব চালানো হচ্ছে তার নেতাকর্মীদের ওপর। সারাদেশে এক ধরনের ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও হয়রানি, গ্রেফতার ও জুলুমের শিকার হচ্ছে। বিএনপি যে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন এমন কি পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচীও করতে পারছেনা, সেটা নির্বাচন কমিশন মোটেই আমলে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় কিভাবে নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে? আর নির্বাচনের পরিবেশই যদি না গড়ে ওঠে তবে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে কেমন করে? নির্বাচনের পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় সরকার কোনো ভূমিকা রাখছে না। নির্বাচন কমিশনও নিরব। এ অবস্থায় নির্বাচনের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত হওয়ায় যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সরকারী দলের নেতারা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চান বলে বলছেন, এমনকি বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অথচ এ লক্ষ্যে বাস্তবে কোনো উদ্যোগ-পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং উল্টোটিই দেখা যাচ্ছে। বস্তুত এ কাণেরই আন্তর্জাতিক মহল বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাকিদ দিচ্ছে। এটা দেশের জন্য কোনো গৌরবের বিষয় নয়। সরকারকে এটা বুঝতে হবে এবং নির্বাচনের প্রত্যাশিত পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
কালের খবর -/২৬/২/১৮