রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তিন আমলেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন নুরে আলম ভূঁইয়া। কালের খবর

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তিন আমলেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন নুরে আলম ভূঁইয়া। কালের খবর

 

কড়াইল বস্তি বিক্রির সঙ্গেও জড়িত দলিল লেখক

এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :

দেশে পাঁচ শতাধিক সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে লক্ষাধিক নিবন্ধিত দলিল লেখক রয়েছেন। জমির ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা অনুসারে দলিল লেখেন তারা। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে দলিল লেখকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য ১৯৯৪ সালে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পারিশ্রমিকের হার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু দলিল লেখকরা সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা নেন। না দিলে নানাভাবে হয়রানি করার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। দেশের অধিকাংশ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নিয়ন্ত্রকও দলিল লেখকরাই। প্রতিটি অফিসেই তাদের সমিতি রয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রারের পাশে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম তদারকি করেন দলিল লেখক সমিতির নেতারা। সারা দেশের সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে ‘বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতি’। ৩০ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সমিতির সভাপতি পদে থেকে পুরো দেশে রাজত্ব করছেন নরসিংদীর নুরে আলম ভূঁইয়া। নিবন্ধন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতি বছর গড়ে ৩৫ লাখের বেশি দলিল নিবন্ধন হয়। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয় বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতি দলিল থেকে শুধু বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির পকেটে যায় ১ হাজার টাকা করে। এ হিসাবে এ খাত থেকেই সমিতির তহবিলে আসে বছরে ৩৫০ কোটি টাকা। তাতে গত ৩০ বছরে তাদের সমিতির অফিসে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থাকার কথা।

সমিতির সভাপতি নুরে আলম ভূঁইয়া চলাফেরা করেন রাজা বাদশাহদের মতো। চড়েন দেড় কোটি টাকা দামের প্রাডো গাড়িতে। ভ্রমণে গাড়িবহর নিয়ে চষে বেড়ান সারা দেশ। জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের তিন আমলেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন নুরে আলম ভূঁইয়া। সদ্য বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে ছিল তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এ সুবাদে সচিবসহ আইন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে সমীহ করে চলতেন। তদবির বাণিজ্য এবং খারিজ-খাজনা ছাড়াই দলিল সম্পাদনে সহায়তা করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। রোজগারের শত শত কোটি টাকা নামে-বেনামে বিনিয়োগ করেছেন দেশ-বিদেশে। সমিতির মহাসচিব জোবায়ের আহমেদ ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন ওরফে কড়াইল নাছির তার প্রধান সহযোগী। ২০১১ সালে নাছির আহমেদ ও গুলশানের তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দিন মিলে ৩০০ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেন কড়াইল বস্তি। এ ঘটনার পর হেলাল উদ্দিন ও নাছির উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করা হয়। তখন সাব-রেজিস্ট্রার হেলাল চাকরি হারালেও নাছিরের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় শতগুণ। তবে গত ৫ আগস্টের পর লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন এই লুটপাটকারীরা।

২০১৯ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় বলা হয়, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দলিল নিবন্ধনের জন্য সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হয়। এর ১০ থেকে ৫০ শতাংশ সাব-রেজিস্ট্রার এবং বাকি অংশ অন্যদের মধ্যে বণ্টন হয়। একটি অংশ জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, নিবন্ধন অধিদপ্তর পর্যন্ত যাওয়ার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে এবং বাজারমূল্য কম দেখিয়ে দলিল নিবন্ধন করতে চাপ প্রয়োগ করেন সমিতির নেতারা। জমির প্রকৃত দামের চেয়ে কম দাম দেখিয়ে নিবন্ধন করায় ফি কম দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার যথাযথ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।

দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়:

দেশ-বিদেশে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন নুরে আলম ভূঁইয়া ও তার সহযোগীরা। নরসিংদীর মাধবদী থানাধীন নুরালাপুরে তিনি কিনেছেন ৫০ একর জমি। যার আনুমানিক বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকা। মাধবদী পৌর এলাকায় এক বিঘা জমির ওপর রয়েছে দ্বিতল ভবন ও সুপার মার্কেট। জমিসহ পাঁচতলা ফাউন্ডেশনের এই বাড়ি ও মার্কেটের মূল্য আনুমানিক ২০ কোটি টাকা। মাধবদী পৌর এলাকায় হলিক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও সাবেক পৌর মেয়র ইলিয়াছ হোসেনের বাড়ির মাঝখানে রয়েছে ১০ শতাংশ জমি। সম্প্রতি বাড়ি করার জন্য প্ল্যান পাস করানো হয়েছে পৌরসভা থেকে। নির্মাণকাজের জন্য টিন দিয়ে চারদিক দিয়ে আটকে দেন। গত ৫ আগস্ট আন্দোলনকারীরা গুঁড়িয়ে দেয় সবকিছু। পরে আর নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেননি। স্থানীয়রা জানান, এই জমির মূল্য আনুমানিক ৮ কোটি টাকা। এ ছাড়া সৌদি আরবের মদিনায় রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও চারতলা আবাসিক হোটেল। দেশ থেকে টাকা পাচার করে সেখানে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে তার অঢেল সম্পদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

নুরে আলম ভূঁইয়ার একাধিক সহযোগী কালের খবরকে জানান, ঢাকার বিজয় নগরে আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের সাত তলায় দলিল লেখক সমিতির কেন্দ্রীয় অফিস। এই অফিসে বসেই সারা দেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সন্ধ্যার পর অনেক সাব-রেজিস্ট্রারও নিয়মিত এই অফিসে ধরনা দেন। সভাপতি নুরে আলম ভূঁইয়াকে ঘিরেই মূলত এ অফিস। সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ সভাপতির পালিত সম্পাদক বলে সমালোচনা রয়েছে। টাকার দরকার হলেই সভাপতির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। তেজগাঁও অফিসের এক সাব-রেজিস্ট্রার কালের খবরকে বলেন, ফিরোজ আলম, বেলাল হোসেনসহ কমপক্ষে ২০ জন দলিল লেখকের ঢাকা শহরে একাধিক বহুতল ভবন রয়েছে।

ঢাকা ও নরসিংদী ঘুরে সমিতির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বড় বড় শিল্পপতির দলিল লেখে নুরে আলম সিন্ডিকেট। নরসিংদীতে একক দায়িত্ব পালন করেন তার ভাই মহসিন আলম ভূঁইয়া। দেশের ভেজাল দলিলের সবই নুরে আলম ভূঁইয়ার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হয়। এসব অনিয়ম করে শুধু নরসিংদী থেকেই গত ৩০ বছরে নুরে আলম হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

এ বিষয়ে নুরে আলম ভূঁইয়া কালের খবরকে জানান, নরসিংদী থেকে অফিস সহকারী শফিকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তৎকালীন মেয়র কামরুজ্জামান। দলিল লেখকদের অফিসের জন্য জমি কেনার দেড় কোটি টাকা এখনো কামরুলের পকেটে। আমি কোনো অনিয়ম করিনি। পরিশ্রম করে বড়জোর ২০ কোটি টাকা রোজগার করেছি। মদিনায় কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু-এক মাস পরপর ওমরাহ করতে সৌদিতে যাই। মদিনায় এক বন্ধুর হোটেলে উঠি। মানুষ মনে করে আমার হোটেল। একটু ভালো চলি বলে সবাই মনে করে আমার অনেক টাকা রয়েছে। আসলে বিষয়টা সত্য নয়। তবে টাকার জোরেই ৩০ বছর ধরে সারা দেশে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। মাঝখানে আমাদের মধ্যে তিনটি দল হয়ে যায়। এসব বন্ধ করে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হয়েছে।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্য রেখে তদবির বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ প্রসঙ্গে বলেন, বিশ্বাস করুন, বদলির কোনো তদবির করিনি। মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। পিয়ন, গানম্যান ও ড্রাইভারদের ১-২ হাজার টাকা করে না দিলে মন্ত্রী-সচিবদের রুমে সহজে যাওয়া যায় না বলেও জানান তিনি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ কালের খবরকে বলেন, সভাপতি নুরে আলম ভূঁইয়া ভালো মানুষ বলেই ৩০ বছর ধরে এ পদে আছেন। নিয়মের বাইরে আমাদের কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও কড়াইল বস্তি বিক্রির দলিল লেখক নাছির উদ্দিন কালের খবরকে বলেন, বাড্ডায় একটি বাড়ি ছাড়া তার আর কিছুই নেই। যদিও রাজধানীর বেলী সুপার মার্কেটে একাধিক দোকান এবং নামে-বেনামে তার অনেক সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com