মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
কক্সবাজার প্রতিবেদক, কালের খবর :
কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে একের পর এক পাহাড় কাটা অব্যাহত রয়েছে। যে পাহাড় কাটার ঘটনা নিয়ে সচিত্র সংবাদ প্রকাশ এবং প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট ১৪ কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়েরের জের ধরে ক্ষিপ্ত হয়েছে স্বয়ং পরিবেশ অধিদপ্তর। যার ফলে সংশ্লিষ্ট পাহাড় কর্তনের ঘটনায় ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সে মামলাটিতে উল্টো ৩ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে।
গত ১৪ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমান বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় খুরুশকুলের নবাব মিয়া, নাছির উদ্দিন রুনো ছাড়া ৩ সাংবাদিককে আসামি করা হয়। এরা হলেন দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকার বার্তা প্রধান ও পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ, দৈনিক গণসংযোগ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক ও সামাজিক সংগঠণ আমরা কক্সবাজারবাসির সংগঠণিক সম্পাদক মহসীন শেখ।
মামলার এজাহারে কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের পূর্ব হামজারডেইল এর বনকাটায় ২০২৩ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত ৫০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ৩০ শতক পাহাড় কেটে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়। যে পাহাড় কর্তন নিয়ে সম্প্রীতি একাধিক গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
যার মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়েরকৃত মামলার এক ও দুই নম্বর আসামি যথাক্রমে নবাব মিয়া ও নাছির উদ্দিন রুনোসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১৬ টি পাহাড় কেটে নেয়ার ঘটনায় ২৫ ফেব্রæয়ারী দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকায় ‘দুই মাসে শেষ ১৬ পাহাড়’ শিরোনামে সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয়। দৈনিক সকালের কক্সবাজার পত্রিকার বার্তা প্রধান ও পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ নিজ নামেরই এই সংবাদ প্রকাশ করেছেন। প্রকাশিত সংবাদে দুই মাস ধরে ১৬ টি পাহাড় কেটে নেয়ার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়।
এর পর গত ৬ মার্চ খুরুশকুলের ১৬ পাহাড়সহ কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী, ঝিলংজা ও কক্সবাজার পৌরসভার ৬৮ টি পাহাড় কাটা বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে পুনরায় পাহাড়ে কর্তনকৃত মাটি ফিরিয়ে দিয়ে এসব পাহাড় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে দুই সচিবসহ সরকারের ১৪ কর্মকর্তাকে চিঠি দেয় পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ।
যার কারণে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবেদক রাশেদুল মজিদ এর উপর ক্ষুব্ধ হন।
রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশ এবং চিঠি প্রেরণের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটি করেছেন। মামলার এজাহারে যে ব্যক্তির বক্তব্য নিয়ে আমি সহ ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে ওই ব্যক্তির সাথে আলাপ করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে।
দায়ের করার মামলার এজাহারে স্বপন কান্তি রুদ্র নামের এক ব্যক্তির বক্তব্যে রাশেদুল মজিদ সহ ৩ সাংবাদিক জড়িত বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
আর সেই স্বপন কান্তি রুদ্র প্রতিবেদককে বলেছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছেন, ‘আমি ও আমার মা আমাদের পৈত্রিক কৃষি জমির পাশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছি। এখানে পানেরবরজ ও কৃষি কাজ করেই আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। আমরা সংখ্যালঘু ও অসহায় হওয়ায় কিছু লোক আমাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। আমার বাড়ি থেকে পাহাড় কাটার স্থানটি আনুমানিক ৫০০/৬০০ গজ দূরে। যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সেখানে সরকারের দেয়া মানুষের ঘর রয়েছে। কিন্তু কয়েকদিন আগে হঠাৎ করে ফরেস্টারের সাথে কয়েকজন লোক এসে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাশেদুল মজিদসহ কয়েকজনের নাম বলতে বাধ্য করেছে।’
অভিযুক্ত মহসীন শেখ বলেছেন, যে ৩ সাংবাদিককে আসামি করা হল তারা সকলেই শহরে বসবাসকারি। পাহাড় কাটার স্থানটি দূরে। মুলত ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজিমনে ছবি ধারণ এবং সংবাদ প্রকাশ করায় উল্টো আসামি করা হল।
এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মুসাইব ইবনে রহমান নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুব্দে বার্তা পাঠানোর পরও উত্তর মিলেনি।
##