বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
কক্সবাজার প্রতিনিধি নুরুল আবছার, কালের খবর :
কক্সবাজার উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল ও তার লালিতপালিত সন্ত্রাসীদের নিয়ে গত ৭ই মার্চ (বৃহস্পতিবার ) গভীর রাতে কোট বাজার স্টেশন থেকে গভীর পাহাড়ে তুলে নিয়ে গিয়ে দুই ব্যবসায়ীকে বেধড়ক মারদর করে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপন নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যবসায়ী বেলাল ও আমিনকে ঐ সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের সর্বস্ব লোটে নেয়ার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে ভুক্তভোগী। প্রথমে ৩ লাখ টাকা দিয়ে মুক্তির আশা করলেও আরও এক লাখ টাকা দাবি করে তিন রাউন্ড অস্ত্র ফায়ার করে জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল। পরবর্তী স্থানীয় খালেক মেম্বার নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়ে জামাল বাহিনীর প্রধান সমন্বয়ক ইউনুসের হাতে তুলে দেন। যার স্পষ্ট কল রেকর্ড প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
ঐদিন রাতেই ব্যবসায়ী বেলাল ও আমিনের সবকিছু নেয়ার পর ঘটনার সত্যতা প্রকাশ না করতে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। ঘটনা ধামাচাপা রাখতে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেন জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল, আনোয়ার ও ইউনুস। পরবর্তীতে তাদেরকে সিএনজিতে তুলে দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এই ঘটনায় বেলাল ও আমিনের একাধিক ভিডিও এবং অডিও ডকুমেন্ট প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত। ইতিমধ্যেই বেলাল টাকা পয়সা সব হারিয়ে নিরুপায় হয়ে দিনযাপন করেছে।
এদিকে ভুক্তভোগী বেলাল একজন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন প্রতিবন্ধী কান্না জড়িত কন্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, আমি একজনের কাছ থেকে টাকা পাওয়ার সুবাধে উখিয়ার কোটবাজার এলাকায় গিলে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা পরিচয়ে জামাল মিমাংসার কথা বলে আমাকে গভীর পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করে। এবং সারারাত মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপন নেয়। তারা আমার সাথে থাকা আমিনকেও প্রচুর মারধর করে। আমাদেরকে ইয়াবা ব্যবসায়ী তকমা দিয়ে এইসব তান্ডব চালায় জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল ও তার লালিতপালিত সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনায় মুখ খুললে পরবর্তীতে মেরে ফেলার হুমকি দেন জামাল।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কোটবাজার এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে জামাল বাহিনীর প্রধান জামাল’র কাছে জানাতে চাইলে, তিনি অকপটে স্বীকার করে বলেন, তাদেরকে দূরে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়নি। বেলাল এবং আমিন দুইজনের মধ্যে একটি ইয়াবা সংক্রান্ত লেনদেন ছিল। তাদেরকে মিটমাট করিয়ে দিতে গিয়ে আমি শুধু সাক্ষী হিসেবে ছিলাম। এখানে কিছু লোকজন পরিশ্রম করেছে তাদের জন্য কিছু পারিশ্রমিক নিয়েছি। এতে সবাই নিবে। এর বাইরে কিছু না। কিন্তু আমাকে অপহরণকারী বানিয়ে ৪ লাখ টাকা মুক্তিপনের বিষয়ে সম্পুর্ণ বেআইনি। আমি ছাত্রলীগ করি আপনি অবশ্যই জানেন। আমি এমন গর্হিত কাজ করতে পারিনা।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানাজানির পর এলাকায় একটি চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন সাংবাদিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌড়ঝাঁপ। নানাভাবে প্রতিবেদককে হুমকি প্রদর্শন করেছে ছাত্রলীগের এই জামাল।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়ে কেউ অপকর্ম করলে সংগঠন এর দায়ভার নিবেনা। যদি সে এমন অপকর্ম করে থাকলে তাকে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে সে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল। তবে বিষয়টি যদি সঠিক হয় অবশ্যই আপনারা নিউজ করতে পারবেন।
এদিকে সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নেওয়াতেই ক্ষেপে গেলেন ছাত্রলীগের উখিয়া উপজেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জামাল। সাংবাদিক’কে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনি মারুফ ভাইকে কেন বলেছেন। আমি কি আপনাকে বলেছি আমি অপহরণ করেছি। আপনি আমার বিরুদ্ধে লিখতে পারবেন না। যদি লিখেন তাহলে আপনাকে কোর্ট দেখিয়ে দিব। আপনাকে তো আমি যাওয়ার সময় হিন্টস দিয়েছি।