বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
বালুর ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর পিলার, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা কাঁচপুর সেতুর নিচে বিআইডাব্লিউটিআইয়ের জায়গা দখল করে চলছে বালুর ব্যবসা। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতুর পিলার। গতকাল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ছবি : কালের খবর
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর :
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর নিচে ছয় মাস ধরে বিআইডাব্লিউটিএর জায়গা দখল করে রমরমা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই বালু ব্যবসায়ী। সেতুর নিচে প্রতিদিন বালু নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর যাতায়াতে সেতুর পিলার দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। কিন্তু এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে গত শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেতুর নিচে দেখা যায় সোহান এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ও মুক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক মুক্তার হোসেন নামের দুই বালু ব্যবসায়ীর ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বালুর ব্যবসা করছেন তাঁরা। এতে শুধু সেতুর ক্ষতি হচ্ছে না সেতুর নিচে সরকারি উদ্যোগে তৈরি ওয়াকওয়েরও ক্ষতি হচ্ছে। এই বালু ব্যবসার জন্য ব্যবসায়ীরা ওয়াকওয়ের সব গাছ কেটে ফেলেছেন।
বালুর ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর পিলার। পথচারী শিমুল মাহমুদ জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওয়াকওয়ের সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগিয়েছিল সরকার। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা সব গাছ কেটে ফেলে সেই জায়গায় বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে পরিবেশ যেমন দূষণ হচ্ছে, তেমনিভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে ওয়াকওয়ে।
ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা আটি এলাকার বাসিন্দা হাসান আলী জানান, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শীতলক্ষ্যা নদীর পার দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছেন।
প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটাচলা করে থাকেন। বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটাচলা করতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শিমড়াইল এলাকার বাসিন্দা আসলাম হোসেন জানান, সেতুর নিচে বালু ব্যবসা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কাঁচপুর সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কারণে সেতুটির ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
তাই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
পথচারী করিম মিয়া জানান, এত জায়গা খালি থাকতে সেতুর নিচে বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন দুই ব্যক্তি। শুনেছি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তাঁরা এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও মোক্তার হোসেন বলেন, ‘জায়গাটি খালি পড়ে থাকায় আমরা বিআইডাব্লিউটিএর অনুমতি নিয়েই বালুর ব্যবসা করছি।’
বালুর ট্রাক আসা-যাওয়ায় সেতুর পিলারের ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, আমরা কোনোভাবেই সেতুর পিলারের ক্ষতি হোক এটা চাই না।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস কালের খবরকে জানান, নদীর তীরের জায়গাটি বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তারা দেখাশোনা করছেন। তাই তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক শহিদুল্লাহ বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক কালের খবরকে জানান, কাঁচপুর সেতুর নিচে অবৈধভাবে কেউ বালুর ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেতুর পিলারের ক্ষতি হলে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।