রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৫০ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ , কালের খবর :
প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। তিন মন্ত্রী ও ছয় সচিবসহ কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে প্রশ্ন ফাঁসের ছয়টি কারণ উপস্থাপন করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে না। এবং সন্দেহজনক অ্যাকাউন্টগুলোকেও শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব জানিয়েছে, আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। তবে ঠিক কি পদ্ধতি হবে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের করা হবে। বৈঠকে প্রশ্ন ফাঁসের ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। কারণগুলো হলো- বিজি প্রেসে প্রশ্ন কম্পোজ এডিট, প্রিন্ট ও প্যাকেজিং পর্যায়ে প্রায় ২৫০ জনের মতো কর্মী প্রশ্ন দেখতে পারে। তারা প্রশ্ন কপি করতে না পারলেও তা স্মৃৃতিতে ধারণ করা অসম্ভব ব্যাপার নয়। ৩/৪ জনের একটি গ্রুপের পক্ষে এভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা সম্ভব হতে পারে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মাধ্যমে ট্রেজারি বা নিরাপত্তা হেফাজত থেকে প্রশ্ন গ্রহণ করে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- অনেক কেন্দ্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না মর্মে অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, যার ব্যবস্থাপনা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাছাড়া ভেন্যুগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মূল কেন্দ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে অবস্থিত। ফলে ৩০ মিনিট সময়ের অধিক পূর্বে কেন্দ্র সচিবরা প্রশ্ন খুলতে বাধ্য হচ্ছেন।
পরীক্ষার্থী কিংবা পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। গুটিকয়েক শিক্ষক-কর্মচারীর কারণে গোটা প্রশ্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁস কারীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপরতা আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। এটা পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ১৫ দিন আগে থেকে করা সম্ভব হলে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার লোকবল, অবকাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত স্বল্পতার কারণে কাক্সিক্ষত মাত্রায় নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হয়। দুষ্কৃতকারীদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার ও শাস্তি প্রদান করতে না পারায় অন্যরাও অপরাধ করতে ভয় পাচ্ছে না। বিটিআরসি কর্তৃক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন আপলোডকারীদের চিহ্নিত করতে দেখা যাচ্ছে না এবং সন্দেহজনক একাউন্ট বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত রুদ্ধদ্বার এ বেঠকে উপস্থিত ছিলেনÑ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। একই সঙ্গে সভায় উপস্থিত ছিলেন- মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর। এর বাইরে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সভায় অংশ নেন।
চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষা শুরুর আগেই ফেইসবুকসহ ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর অভিযোগ যাচাইয়ে একটি কমিটি করে সরকার। ওই কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়ার কথা জানানোর পরদিনই মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে তিন মন্ত্রী ও ছয় সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা এ বৈঠকে বসেন।
সভাশেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা করছি, আগামী বছর থেকে এসএসসি পরীক্ষা নতুন পদ্ধতিতে নিতে পারব। সভায় সবাই প্রশ্নব্যাংক তৈরির বিষয়ে একমত হয়েছেন। পরীক্ষায় এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী প্রশ্ন) থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি আগে থেকেই এমসিকিউ বন্ধের বিষয়ে বলে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বলার পর এটা এখন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে। তিনি বলেন, যেহেতু আগামী এইচএসসি পরীক্ষা নতুন পদ্ধতিতে নেয়ার সুযোগ নেই। তাই এটা কীভাবে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তগুলো অব্যাহত থাকবে।
কালের খবর /২০/২/১৮