বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর ইপিজেড থানা কমিউনিটি পুলিশিং এর উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর শাহজাদপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উড়ে গেল সি লাইন বাসের ছাদ, ১জন নিহত। কালের খবর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার আত্মহত্যা। কালের খবর
নারান্দিয়ার মুড়ির নেই কোনো জুড়ি। কালের খবর

নারান্দিয়ার মুড়ির নেই কোনো জুড়ি। কালের খবর

– ছবি : কালের খবর

কালের খবর ডেস্ক :

প্রতি বছর রমজান মাসের ইফতারিতে মুড়ির যেন বিকল্প নেই। সারা বছর কমবেশি চাহিদা থাকলেও এ মাসে মুড়ির চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা মতো মুড়ি সরবরাহ করতে মুড়ি উৎপাদনকারীদের ব্যস্ততাও অনেক বেড়ে যায়।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া এলাকায় উৎপাদিত মুড়ির কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানকার মুড়ি দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেশ সমাদৃত। এই এলাকার কমপক্ষে ১৫টি গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার মুড়ি শিল্পের ওপর নির্ভশীল। এই মুড়ি হচ্ছে এসব পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস। তবে নানা সীমাবদ্ধতায় বর্তমানে লোকসানের মুখে রয়েছেন তারা। কেউ কেউ এই পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্য পেশায়।

সরেজমিনে জানা যায়, এই এলাকায় দু’ভাবে মুড়ি তৈরি করা হয়। হাতে ভেজে ও মেশিনের সাহায্যে। মেশিনে তৈরি মুড়ির চেয়ে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা একটু বেশি। মেশিনের মুড়ি সাদা ও লম্বা করতে ক্ষতিকর রাসায়নিক ইউরিয়া অথবা সোডা ব্যবহারের অভিযোগ থাকায় এক শ্রেণীর মানুষ সর্বদাই হাতে ভাজা বিশুদ্ধ মুড়ি খেয়ে থাকেন। দামেও রয়েছে পার্থক্য। বর্তমানে মেশিনে তৈরী মুড়ির পাইকারি দাম যেখানে প্রতি কেজি ৬২-৬৫ টাকা, সেখানে হাতে ভাজা মুড়ির দাম ৯০-৯৫ টাকা। মুড়ি তৈরির সাথে জড়িতদের মধ্যে মোদক সম্প্রদায়ের লোকই বেশি।

মুড়ি উৎপানকারীরা জানান, পাশের সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয় এখানকার মুড়ি। নারান্দিয়া ইউনিয়নের নগরবাড়ী ও দৌলতপুরে দু’টি মিলে মেশিনের সাহায্যে মুড়ি ভাজা হয়। নারান্দিয়ায় আরো দু’টি মুড়ি ভাজার মেশিন ছিল। লোকসানের কারণে কয়েক বছর আগে মেশিন দু’টি বন্ধ হয়ে গেছে।

এছাড়া কালিহাতী উপজেলার নারান্দিয়া, মাইস্তা, নগরবাড়ী, দৌলতপুর, লুহুরিয়া ও সিংহটিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রামের কয়েক শ’ পরিবার হাতে ভেজে মুড়ি তৈরি করে থাকে। একজন ব্যক্তি একদিনে এক থেকে দেড় মণ চালের মুড়ি ভাজতে পারেন। মুড়ি ভাজার কাজটি মূলত বাড়ির নারীরাই করে থাকেন। এছাড়া মেশিনে প্রতি ঘণ্টায় উৎপাদন হয় ১০ মণ মুড়ি। সব মিলে প্রতিদিন এই এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকার মুড়ি বিক্রি হয়।

দৌলতপুর গ্রামের মিনতি রানী বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় আমরা এই মুড়ি ভাজা ও ব্যবসার সাথে জড়িত। মুড়ি ভেজেই আমাদের সংসার চলে। তবে কাজটি খুব কষ্টের। কারণ সারা দিনই আগুনের কাছে থাকতে হয়।’

একই গ্রামের সুরবালা কর্মকার জানান, তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে হাতে মুড়ি ভাজেন। পাঁচ বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনিই সংসারের হাল ধরেছেন। মুড়ি ভেজে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।

বন্যা কর্মকার নামে আরেকজন বলেন, ‘আমার মায়ের মুড়ি ভাজা দেখে দেখে আমিও শিখে যাই। এখন মুড়ি ভেজেই আমি আমার সংসার চালাই।’

নারান্দিয়ার সততা মুড়ির মিলের মালিক শংকর মোদক বলেন, ‘স্থানীয় ক্রেতাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসে মুড়ি কিনে নিয়ে যান। আমরা অনেক সময় মোবাইলেও মুড়ির অর্ডার নিয়ে সরবারহ করে থাকি। মুড়ির ব্যবসা করে বর্তমানে আমরা বেশ লোকসানে আছি। তবু বাপ-দাদার পেশা আকড়ে ধরে আছি।’

সততা মিলে মুড়ি কিনতে এসে আরিফুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ক্রেতা বলেন, ‘এখানকার মুড়ি মজাদার। তাছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে গরম টাটকা মুড়ি পাওয়া যায়। তাই সব সময় এখান থেকেই মুড়ি কিনি।’

অন্যদিকে হাতে ভাজা মুড়ি উৎপাদনকারীরা জানান, প্রযুক্তির সাথে পাল্লা দিয়ে তারা এই পেশায় যেন টিকতেই পারছেন না। এজন্য অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। ঐতিহ্যবাহী এ পেশাকে টিকিয়ে রাখতে তারা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com