তামান্নার বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার (নন–এমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ে। তামান্না সবার বড়। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
পা দিয়ে লিখে চতুর্থবার জিপিএ-৫ পেলেন তামান্না
তামান্না আক্তার বলেন, ‘২২টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফলে আমি ৪৮ দশমিক ২৫ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হয়েছি। দুই-এক দিনের মধ্যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই, তা নির্বাচন করে আবেদন করতে হবে। আমি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়তে চাই। আমি এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা হতে চাই।’
তামান্নার মা খাদিজা পারভীন বলেন, ২০০৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তামান্নার জন্ম। ওর জন্মের পর কষ্ট পেয়েছিলেন। পরে ভেবেছেন, ওকে কারও বোঝা হতে দেওয়া ঠিক হবে না। ছয় বছর বয়সে ওর পায়ে কাঠি দিয়ে লেখানোর চেষ্টা শুরু করেন। কলম দেন। কাজ হলো না। এরপর মুখে কলম দেন। তাতেও কাজ হয়নি। পরে সিদ্ধান্ত নেন, ওকে পা দিয়েই লেখাতে হবে। এরপর বাঁকড়া আজমাইন এডাস স্কুলে ভর্তি করান। মাত্র দুই মাসের মাথায় ও পা দিয়ে লিখতে শুরু করল। এরপর ছবি আঁকা শুরু করে।
এ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) জিপিএ-৫ পায় তামান্না। বৃত্তিও পায়। পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর তামান্নাকে বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় (জেএসসি) সে জিপিএ-৫ পায়। ২০১৯ সালে সে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পায়। এরপর তাকে বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে এবারের এইচএসসিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সে জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
পা দিয়ে লিখে জিপিএ–৫ পাওয়া তামান্না চিকিত্সার জন্য ঢাকায়
তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ‘তামান্নার জন্মের পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মোকাবিলা করতে হয়েছে আমাদের। তারপরও হাল ছাড়িনি। তামান্নার সঙ্গে আমাদের থাকতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির গুচ্ছ পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হয়েছে। এজন্য আমি খুব খুশি। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তামান্না লেখাপড়ার সুযোগ পেলে আরও খুশি হবো।