মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ পূর্বাহ্ন
সাঈদুর রহমান,ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি, কালের খবর : চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে বাজারে পাটের তামও ভালো। তাই হাসি ফুটেছে ভারতীয় সীমান্তের জেলা ঝিনাইদহের পাটচাষিদের মুখে। এবছর আবহাওয়াতে বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় কৃষকদের পাট পঁচানো ও আশ ছড়াতে সমস্যা হচ্ছে না।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর ২২ হাজার ৮শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে যা গেল বছরের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশী। ইতোমধ্যেই আবাদকৃত ৮০ ভাগ জমির পাট কর্তন শেষ হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বাজারে প্রতি মন পাট বিক্রি হয়েছে ভালো-মন্দ প্রকার ভেদে ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে লাভবান হচ্ছেন কৃষক থেকে শুরু করে ব্যাসয়ীরাও। তবে লকডাউন আর না আসলে সামনের দিনগুলোতে দেশের বড় বড় মোকামের ব্যাপাীরা এলাকার বাজারে আসলে পাটের দাম আরো বৃদ্ধি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা।
জেলার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমি তৈরি থেকে শুরু করে পাট শুকানো পর্যন্ত এক বিঘা জমি চাষ করতে খরচ হয় ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। চলতি বছর এক বিঘা জমিতে ১০ থেকে ১৩ মন পাঠ হচ্ছে। সাথে পাটকাঠি বিক্রি করেও টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকরা বহু কষ্টে ফলানো পাট ক্ষেত থেকে কেটে রেখে দিচ্ছেন জমিতে। এরপর সেগুলোর পাতা ঝরিয়ে খাল, বিল, ডোবা কিংবা নদীতে পঁচানোর পর আশ ছাড়িয়ে পরিষ্কার করে রোদে শুকাচ্ছেন। দু-একদিনের রোদেই পাট শুকিয়ে সংরক্ষণ বা বিক্রির উপযোগী করে তুলছে। তবে বদ্ধ জলাশয়ের তুলনায় প্রবাহমান জলাশয়ের পানিতে পাট পঁচালে পাটের মান ও রং ভালো হয়। বাজারে দামও ভালো পাওয়া যায়।
জেলার শৈলকুপা উপজেলার পদ্মনগর এলাকার কৃষক মজিবর রহমান জানান, এবার তিন বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। বিঘায় গড়ে ১০ থেকে ১৩ মন হারে পাটের ফলন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় আমি অনেক বেশী পাট পেয়েছি।
সদর উপজেলার কোদালিয়া গ্রামের কৃষক মোবাশ্বের বলেন, আমি ও কয়েকজন শ্রমিক নিয়ে ক্ষেত থেকে পাট কেটে ১৫ দিন পানিতে পঁচানোর পর এখন পরিষ্কার করছি। এরপর রোদে শুকিয়ে বিক্রি করা হবে। নদীর পানিতে পঁচানো ও পরিষ্কার করার কারনে আমার পাটের মানটা বেশ ভালো হয়েছে।
যুগনী গ্রামের কৃষক মোস্তাক খা জানান, আমাদের এলাকায় নদী বা খাল নেই। তাই ডোবা বা পুকুরেই পাঠ পঁচাতে হচ্ছে। যার কারনে মান কিছুটা খারাপ হচ্ছে। তবে এবছর পানি বেশী হওয়ায়ই পচানোর স্থানের অভাব হয়নি। অন্যদিকে পাটের দাম ভালো থাকায় মান খারাপের পরও লোকসান হচ্ছে না, লাভটাই বেশী হচ্ছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন আনন্দবাগ গ্রামের পাটচাষি রবিউল ইসলাম জানান, গত মৌসুমে পাটের ভালো দাম পেয়ে চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে ১৩ হাজারের বেশি খরচ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৯০০ টাকা টাকা মন। সে হিসাবে এবার ভালো লাভ হবে।
হাটগোপালপুর বাজারের পাট ব্যাবসায়ী সাজু কুন্ডু জানান, পাটের বাজার দর ওঠা নামার ভিতরেই আছে। এটি স্থিতিশীল হলে এবং পুরোদমে বাইরের ব্যাপারীরা বাজারে আসা শুরু করছে দাম মন প্রতি আরো বেড়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, পাটের মান ভালো রাখার জন্য প্রবাহমান এবং পরিষ্কার পানিতে পঁচানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। সাথে সাথে সেখানে কয়েক কেজি ইউরিয়া সারও ছিটিয়ে দিতে হবে। পচানোর ক্ষেত্রে গাছের পাতা বা কাদা মাটি এড়িয়ে চলায় ভালো। তিনি আরো জানান, গেল মৌসুমে জেলায় পাটের উৎপাদন হয়েছিল ৫৯ হাজার ২’শ ৬৮ মেট্রিকটন। তবে চলতি মৌসুমে উৎপাদন আরো বেশী হবে বলে আশা রয়েছে।