শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৩ অপরাহ্ন
কালের খবর: আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষই দেখে ফেলেছিলেন। জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্নও হয়তো আগের মতো করে উঁকি দিচ্ছিল না। সেখানে টেস্ট দলে ডাক পাওয়াটা আব্দুর রাজ্জাকের জন্য স্পেশালই ছিল। যে কারণে প্রত্যাবর্তন নিয়ে হয়তো রঙিন স্বপ্ন এঁকে রেখেছিলেন। মিরপুরে সেটার মঞ্চায়ন করলেন বাঁহাতি এই অভিজ্ঞ স্পিনার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাদুকর রাজ্জাকের দেখা মিললো। যোগ্য সঙ্গ দিলেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তাতে দিকহারা হয়ে পড়া শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থেমে গেল মাত্র ২২২ রানেই। ওভার খরচা হলো মাত্র ৬৫.৩।
চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরেই বল হাতে নায়কের ভূমিকায় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে বহু আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ এনে দেওয়া রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিজের করা তৃতীয় ওভার থেকেই জাদু দেখাতে থাকেন জাতীয় দলের এক সময়ের এই নিয়মিত সদস্য। রাজ্জাকের একটি লো ডেলিভারি এগিয়ে গিয়ে খেলতে চেষ্টা করেন দিমুথ করুনারত্নে। কিন্তু তাকে ফাঁকি দিয়ে বল ততক্ষণে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে। স্টাম্প ভেঙে দিতে সময় নেননি লিটন।
এখান থেকে শুরু রাজ্জাক জাদুর। ১৪ রানেই লঙ্কান ওপেনার করুনারত্নেকে ফিরিয়ে চার বছর পর টেস্ট উইকেটের স্বাদ নেওয়া রাজ্জাক ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ভয়ঙ্কর। মুহূর্তেই শ্রীলঙ্কা দলকে দিশেহারা করে তোলেন চার উইকেট শিকার করা বাঁহাতি এই স্পিনার। টেস্টের এক ইনিংসে এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। অবশ্য প্রথম উইকেট হারিয়েও ইনিংস অনেকটাই গুছিয়ে নিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। এমন সময় রাজ্জাকের সঙ্গে উইকেট শিকারির ভূমিকায় যোগ দেন তাইজুল। বাঁহাতি এই স্পিনার ফিরিয়ে দেন ১৯ রান করা ডি সিলভাকে।
লঙ্কানদের দ্বিতীয় উইকেট পড়ার পরই তাদেরকে পেয়ে বসেন রাজ্জাক। সফরকারিদের ইনিংস ১০০ পেরনোর আগেই পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন দানুশকা গুনাথিলাকা ও দিনেশ চান্দিমালকে। ৯৬ রানে তুলে নেওয়া চার উইকেটের তিনটিই রাজ্জাকের। কিন্তু এখানেই থামেননি তিনি। কিছুক্ষণ পর সর্বোচ্চ ৬৮ রানের ইনিংস খেলা কুশল মেন্ডিসকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন রাজ্জাক।
সতীর্থের এমন সাফল্য যেন নতুন করে চাঙ্গা করে তোলে তাইজুলকে। এক রানের ব্যবধানে নিরোশান ডিকভেলার স্টাম্প উপড়ে নেন তিনি। ১১০ রানের মধ্যে প্রতিপক্ষের ছয় উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশ তখন কিছুটা নির্ভার। এমন সময় জুটি গড়ে তোলেন রোশেন সিলভা ও দিলরুয়ান পেরেরা। ৫২ রানের জুটি গড়ে শ্রীলঙ্কাকে ১৬২ রানে পৌঁছে দেন এ দুজন।
এই জুটিতে লাগাম টানেন তাইজুল। ফেরান ৩১ রান করা পেরেরাকে। অবশ্য ডি পেরেরা ১৮ রানেই ফিরতে পারতেন। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে পেরেরার তোলা ক্যাচ স্লিপ থেকে ফেলে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জায়গায় দলে ফেরা সাব্বির রহমান। পেরেরা ফিরলেও উইকেট কামড়ে পড়ে থাকেন রোশেন সিলভা। আকিলা ধনঞ্জয়ার সাথে গড়েন ৪৩ রানের আরেকটি কার্যকরী জুটি।
এই জুটিতেই ২০০ পার করে শ্রীলঙ্কা। মুস্তাফিজুর রহমানের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২০ রান করেন ধনঞ্জয়া। সুরঙ্গ লাকমালকে নিয়ে শেষ জুটিতে ১৫ রান যোগ করেন রোশেন। তার ব্যাট থেকে আসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৬ রান।
ইনজুরির কারণে সাকিব আল হাসান নেই দলে। অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু বোলার বা ব্যাটসম্যান সাকিবের অভাব ঠিকই বুঝতে পারছে বাংলাদেশ। ৬৩ রান খরচায় চার উইকেট নেওয়া রাজ্জাক এদিন বল হাতে সাকিবের অভাব অনেকটাই পূরণ করেছেন। সমান চার উইকেট শিকার করা তাইজুলও দেখিয়েছেন স্পিন ভেল্কি। বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান বোলিংয়ে আসার আগে উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন এ দুজনই। তাদের শিকার আট উইকেট। বাকি দুই উইকেট নেন মুস্তাফিজ।