রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
মাদারীপুরে ময়না তদন্তের জন্য লাশ উত্তোলনে দুই পরিবারেরই আপত্তি। কালের খবর মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় শিকারমঙ্গল মিনি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত। কালের খবর “পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের যেকোনো অপচেষ্টা জনগণ রুখে দেবে”-সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। কালের খবর সড়ক দূর্ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদল নেতা নিহত। কালের খবর সীতাকুণ্ডে আওয়ামী ব্যবসায়ী নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মার্কেট ভাংচুরের অভিযোগ। কালের খবর নবীনগরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। কালের খবর দুই হাজার নেতা কর্মী গণ সংবর্ধনা দিলো বিএনপি নেতা তজু মিয়াকে। কালের খবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি যেসব অপকর্মের হোতা ছিলেন। কালের খবর পরিস্থিতির স্বার্থে নাহিদের ‘বোন’ পরিচয় দিয়েছিলাম : ফাতিমা। কালের খবর কক্সবাজারে নারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানো সেই যুবক ডিবি হেফাজতে। কালের খবর
ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তিকরণ : রোকেয়া খাতুন 

ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তিকরণ : রোকেয়া খাতুন 

রোকেয়া খাতুন, কালের খবর :

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে গত ৩০ অক্টোবর ২০১৭ খিস্টাব্দে ইউনেস্কো কর্তৃক মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তিকরণে ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি হেরিটেজের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ অনন্য এবং অসাধারণ এই কারণে যে, এই ভাষণ সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একতাবদ্ধ করেছিল।

ওয়ার্কশপে আমার পূর্বনির্ধারিত বিষয় ছিল চর্যাপদ। মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার নমিনেশন ফরমে চূড়ান্তভাবে নির্বাচনের জন্য ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্টারি হেরিটেজ বাছাইয়ের বিষয় নিয়ে আমার স্বামী তৎকালীন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বিপিএম, পিপিএমের সঙ্গে আলোচনা করি। তিনি আমাকে ঐতিহাসিক গুরুত্ব, প্রভাব ও ব্যাপ্তি বিবেচনায় চর্যাপদ বা বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোনো বিষয়ের চেয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণকে অন্তর্ভুক্তিকরণের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। পরে তৎকালীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর সচিব আব্দুল খালেককে প্রস্তাব দিলে তিনি তৎকালীন শিক্ষা সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বিষয় সংক্রান্তে আলোচনাপূর্বক তাদের দাপ্তরিক অনুমোদন প্রদান করেন।

পৃথিবীর বুকে একমাত্র একজন নেতা একটি ভাষণে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল, যেটা বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, যে ভাষণ পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছিল, শক্তি জুগিয়ে ছিল প্রতিরোধ যুদ্ধের, ৯ মাস সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, ইউনেস্কোর তালিকায় ঠাঁই পেতেও যে ভাষণে রয়েছে পর্যাপ্ত গ্রহণযোগ্যতা ও ঐতিহাসিক প্রভাব। ঐতিহাসিক সেই ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আর প্রভাব বিশ্ব ফোরামে তুলে ধরতে শুরু হয় আমার গবেষণা। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরে ছোটাছুটি করি। নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম প্রতিনিধি হিসাবে আমি যোগ দিই ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় ইউনেস্কো কর্তৃক আয়োজিত ওয়ার্কশপে।

মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে অন্তর্ভুক্তকরণের ক্ষেত্রে তৎকালীন সচিব, আব্দুল খালেক (যুগ্মসচিব), বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত এবং ড. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, ডিরেক্টর জেনারেল, ডিপার্টমেন্ট অব ফিল্মস অ্যান্ড পাবলিকেশনস্, ঢাকা সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করেন। এছাড়া তৎকালীন শিক্ষা সচিব ও শিক্ষামন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের এ ঐতিহাসিক ভাষণকে ওয়ার্কশপে উপস্থাপনের জন্য উৎসাহিত করেন। আমি নমিনেশন ফরম পূরণ এবং বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সিডি সংগ্রহপূর্বক একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা (যেখানে ১৯৪৭ সাল থেকে ৭ মার্চ ১৯৭১ পূর্বাপর ঘটনাসমূহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হয়) তৈরি করি।

সেমিনারে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তিকরণের লক্ষ্যে বিবেচনার জন্য ইউনেস্কো কর্তৃক নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়ার নিরিখে যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করি। উল্লেখ্য, আমি বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ৪ পাতার সংক্ষিপ্তসার ইংরেজিতে ট্রান্সক্রিপ্টপূর্বক বিচারকদের কাছে জমা দিই। ওই সেমিনারে আমার পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা প্রশংসা পায়। এর মধ্যে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের চেয়ারম্যান Mr Ray Edmondson আমার উপস্থাপনের ভূয়সী প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের সেই অবিস্মরণীয় ভাষণের গুরুত্ব উপস্থাপনে বেশকিছু মতামত ও পর্যবেক্ষণ দেন। এডভাইজরি কমিটির সদস্য থাইল্যান্ডের অবহাকর্ন মনোনয়ন আরও শক্তিশালী করতে ভাষণের পেছনের ব্যক্তি, ক্যামেরা, শব্দ গ্রহণ প্রভৃতি কাজে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের যুক্ত করার পরামর্শ দেন।

কোরিয়ান ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো গত ১৪ আগস্ট ২০১১ খ্রি. দ্বিতীয় মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রিজিউনাল ট্রেনিং ওয়ার্কশপে ফাইনাল রিপোর্ট প্রেরণ করেন। যেখানে বাংলাদেশ অংশে আমার উপস্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়। ওই রিপোর্টে বি গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং ভুটানের প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে আমার প্রেজেন্টেশন সন্তোষজনকভাবে প্রতিফলিত হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হয়। আমি যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করি যে, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যিনি দিয়েছিলেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জাতির পিতা হিসাবে স্বীকৃত এবং তারই সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে ওই ভাষণ ম্যানিপুলেট হওয়ার সুযোগ নেই। ওই রিপোর্টের আলোকে আরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এই ভাষণের মূল কপি প্রয়োজন। পরে ২০১৩ খ্রি. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি শ্রদ্ধেয় মফিদুল হক ও ফ্রান্সের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং সবার সামগ্রিক প্রচেষ্টায় জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসাবে ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি মহান মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের বিশ্বদরবারে যথাযথ স্বীকৃতি। এ সামান্য অবদান রাখতে পেরে আমি নিজেকে সার্থক মনে করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগাবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।

বিশ্বব্যাপী আর্থ-সামাজিক, অস্থিরতা, যুদ্ধের হুঙ্কার, প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থানে ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এমন সম্পদ বিনষ্টের পথে। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অনেক দলিল যখন নষ্টের ঝুঁকিতে সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৯২ সালে ইউনেস্কো চালু করে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার প্রোগ্রামটি। উপরোক্ত প্রোগ্রাম চালুর ২৫ বছর পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাহিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতিতে আজ আমাদের গর্বে বুক ভরে যায়। আমি সেই মহান প্রয়াসের ক্ষুদ্র অংশ হতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এই বিশ্ব স্বীকৃতির মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ পৌঁছে যাবে সারাবিশ্বে।

রোকেয়া খাতুন : বদরুননেছা সরকারি কলেজে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com