বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর ইপিজেড থানা কমিউনিটি পুলিশিং এর উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর শাহজাদপুরে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উড়ে গেল সি লাইন বাসের ছাদ, ১জন নিহত। কালের খবর সাতক্ষীরার কলারোয়ায় স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে দ্বিতীয় স্ত্রী ঝর্ণার আত্মহত্যা। কালের খবর
ভূরুঙ্গামারীতে রাক্ষসী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে বিলীন কয়েকটি গ্রাম। কালের খবর

ভূরুঙ্গামারীতে রাক্ষসী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে মানচিত্র থেকে বিলীন কয়েকটি গ্রাম। কালের খবর

মোঃ মনিরুজ্জামান, ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি, কালের খবর : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় দুধকুমার ও কালজানি নদীতে চলছে ভাঙ্গন। বর্ষা আসতেই আতংকিত হয়ে পরেছে ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ। বসতভিটা, বাঁশঝার, বাগান, আবাদী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে। সব হারিয়ে হাহাকার করছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙ্গনে পাল্টে গেছে গতানুগতিক চিত্র। আগে মানুষ বলতো নদী এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে কিন্তু কালজানি ভাঙছে দুই পাড়েই। মাঝখানে গড়ে তুলছে বালুর চর । যে চরে কারো কোন মালিকানা নেই জমির নেই কোন সীমানা। তাও আবার ফসল বোনার আগেই বর্ষায় হারিযে যাচ্ছে সব । ওপারে বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন শিলখুড়ি ইউনিয়নের ৪টি ওয়ার্ড(৫টি গ্রাম)। ভারতীয় অংশের সুরক্ষিত বাঁধে ধাক্কা লেগে তীব্র বেগে ছুটে আসা পানি আছড়ে পড়ছে অরক্ষিত বাংলাদেশের অংশে। নদী ভাঙ্গনের নেই কোন নির্ধারিত ঋতু। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই ঝিরিঝিরি ঢেউয়ের মত ভাঙ্গছে বালুময় মাটি। বাঁশের বেড়া দিয়ে স্রোতের তীব্রতা রোখার চেষ্টা করা হয়েছে কোথাও কোথাও কিন্তু গ্রামবাসীর সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে নদী ভাঙ্গছেই। প্রতিদিনের এ ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পরছে ওপারের প্রায় ৩০হাজার মানুষ। বাঁধ চাই বাঁধ চাই বলে চিৎকার করলেও শুনছেনা কেউ। ওপারের নাজিম উদ্দিন,আব্দুল খালেক,আব্দুস ছালাম জানান দুই বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় বাঁশের যে বেড়াটি দেয়া হয়েছিল সেটি ভেঙ্গে গেছে , সামনের বর্ষায় কি হবে আল্লাই ভালো জানেন । দুটি বিজিবি ক্যাম্প, দুটি প্রাইমারী স্কুল, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়,একটি মাদ্রাসা সহ বহু স্থাপনার ভাগ্য এখানে ঝুলছে বাঁধ না থাকার কারণে।
ভাঙ্গছে এপারেও। বড় বড় চাপ ধরে ভাঙ্গছে পাকারাস্তা, ঘাট, বাজার, বসতভিটা, গাছবাগান, বাঁশঝাড় আর শত শত একর আবাদি জমি। অনতিদুরেই আছে বিজিবি ক্যাম্প, মডেল প্রাইমারী স্কুল এবং ঘন জনবসতি।
ভাঙ্গনের শিকার অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, হাজী আ: রশীদ, আব্দুল হালিম জানান দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ঐ সব সরকারী স্থাপনা সহ আরো সামনে থাকা ইউনিয়ন সদরের বাজারটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
অপরদিকে দুধকমার নদীর ভাঙ্গনে সদর ইউনিয়নের নলেয়া, চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা, পাইকডাঙ্গা,সোনাহাট ব্রীজের পশ্চিমপাড়, বলদিয়া ইউনিয়নের হেলডাঙ্গা ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি সহ বিভিন্ন এলাকার শত শত বিঘা আবাদী জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে । কয়েকদিনের ভাঙ্গনে নদীগর্ভে চলে গেছে ইসলামপুরের একটি মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও শতাধিক ঘরবাড়ী। হুমকির মুখে পরেছে দক্ষিন চরভূরুঙ্গামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামপুর থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদরগামী একমাত্র পাকারাস্তাটি।
ইসলামপুর গ্রামের খোদেজা দুঃখ বলে, নদী সউগ নিয়াগেইল বাহে, হামরা এলা কোটে যাই, কি খাই?
শিলখুড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফ আক্ষেপের সুরে বলেন, ভাঙ্গনের কবলে পরা মানুষের কি জ্বালা তা আসলে কাউকে বোঝানো যায়না। সহ্য করা যায়না ওদের কষ্ট। কালজানি নদীর দুই পারে দুটি বাঁধের প্রয়োজন বহুদিনের। তিনি বহুবার উপজেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছেন এবং সর্বশেষ ৩ জুন ২০২০ইং তারিখে একটি আবেদন উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করেন। সেখানে দক্ষিন ধলডাঙ্গা কালজানি ঘাটপাড় নদীর ভাঙ্গন প্রতিরোধ কল্পে একটি প্রস্তাব পেশ করে তা গ্রহনের জন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। এ বিষয়ে চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এটিএম ফজলুল হক বলেন,নদী ভাঙ্গন রোধে নদী শাসন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), আলোকিত ভূরুঙ্গামারী ও দুধকুমার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা বলেন, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সচিব ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রায় সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রনয়ন করেছেন। তাদের নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক জানান, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত দুইপারের জনগনের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন রোধে “দুধকুমার নদী উন্নয়ন প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্প তৈরীর কাজ চলছে বলেও তিনি জানান।
এ বিষযে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম বলেন পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই এটি দৃশ্যমান হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com