শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
তীব্র গরমে পথচারীদের সুপেয় পানি সরবরাহ করছে ফায়ার সার্ভিস। কালের খবর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। কালের খবর সমাজে “শান্তি স্থাপন ও সহিংসতা নিরসনে — সাতক্ষীরায় তাপদাহে রিকশাচালকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতারণ। কালের খবর প্রচণ্ড তাপদাহে পুড়ছে বাগান, ঝরছে আম, শঙ্কায় চাষীরা। কালের খবর ট্রাফিক-ওয়ারী বিভাগ যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। কালের খবর মারামারি দিয়ে শুরু হলো ‘খলনায়ক’দের কমিটির যাত্রা। কালের খবর কুতুবদিয়ার সাবেক ফ্রীডম পার্টির নেতা আওরঙ্গজেবকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন। কালের খবর সাতক্ষীরায় লোনা পানিতে ‘সোনা’ নষ্ট হচ্ছে মাটির ভৌত গঠন। কালের খবর সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে অনিয়মের মহোৎসব। কালের খবর
সাংবাদিকতা সমাজ দর্পণ এর কারিগর রুকছে গুজবের গজব। কালের খবর

সাংবাদিকতা সমাজ দর্পণ এর কারিগর রুকছে গুজবের গজব। কালের খবর

সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম হাসান, কালের খবর ঃ

সাংবাদিকতা গুজবের গজব রুখছে। সাংবাদিকদের সমাজ দর্পনের কারিগর বলা হয়। একটি সুন্দর, দুর্নীতিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিহার্য। আজ প্রযুক্তির উন্নয়নে সংবাদের বিভিন্ন মাধ্যম তৈরি হলেও, ছাপা সংবাদপত্রের অবদান ফুরিয়ে যায়নি; বরং এর সাথে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্বলিত অন লাইন মিডিয়া। আবার দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তাদের সংবাদ পরিবেশন করছে ইউটিউবে। শিল্প-সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন যে কোনো আসল বিষয়গুলো মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। যারা সংবাদপত্রের পাতাকে প্রতিদিনই নিত্য নতুন খবর দিয়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরছে তাদের একটি বড় অংশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। বর্তমানে করোনার প্রদুর্ভাবে নানাবিধ সংকটে আছে সংবাদকর্মীরা, বিশেষ করে মফস্বল এলাকার সাংবাদিকরা। মফস্বল সাংবাদিকরা করোনায় ভয়কে উপেক্ষা করে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সংবাদ সংগ্রহ করছে। রাত নেই, দিন নেই, যখন যেখানে যা ঘটছে, দ্রুত সেখানে চলে যাচ্ছেন সেই সংবাদ সংগ্রহের জন্য। অথচ এই মফস্বল সাংবাদিকদের তেমন বেতন বা সম্মানী নেই। হাতে গোনা দু,একটা পত্রিকার প্রতিনিধিরা সামান্য নামমাত্র সম্মানী পান, যা থেকে নিজের পকেট খরচ চালানোও অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকেই প্রশ্ন করেন, তারা কেন এই পেশায় আসেন,আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সাংবাদিকতা মূলত নিজের খেয়ে হাওরের মাঠে সাড়া গ্রামের গরু চরানোর মতো। সাংবাদিকতায় আশা সত্যিকার অর্থে দেশ, দেশের মানুষকে ভালোবেসে, দেশীয় সংস্কৃতিকে লালন করে কিছু সৃজনশীল মানুষ এই পেশায় আসেন। এখানকার আয় দিয়ে সংসার চালানোর কথা ভেবে কেউ এই পেশায় আসে না আমার জানামতে , সমাজের জন্য ভালো কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে তাদের এই পেশায় আসা। নিজের অন্য কোনো কর্মের আয় বা সংসারের টাকা খরচ করে ক্যামেরা, কম্পিউটার বা চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল কিনতে হয় তাদের। সংবাদ সংগ্রহ ও পত্রিকা অফিসে সংবাদ পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট, যাতায়াত খরচটাও নিজ পকেট থেকে করতে হয় অনেক ক্ষেত্রে। অনেকে অন্য কোন ব্যবসা বা পেশার সাথে বেছে নেন সাংবাদিকতা নামক সৃজনশীল কাজ। বেশির ভাগ সাংবাদিকের মাসের কর্মব্যস্ততা শেষে বাড়ি ফিরতে হয় খালি হাতে। গিন্নি বা সন্তানদের সামনে মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকতে হয়। কখনো কখনো সন্তানদের কাছে মিথ্যা কথা বলতে হয় ওদের ছোটখাটো আবদার মেটাতে না পারার জন্য। এটা যে কতটা লজ্জার, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। এরপরও অনেকে সাংবাদিকদের বলে থাকেন চাঁদাবাজ। কেউ কেউ তো সাংবাদিক না বলে, বলে সাংঘাতিক। সাংবাদিকদের মধ্যে দু-একজন যে অপসাংবাদিকতা করে না, এ কথা বলা যাবে না। এরা নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে, নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। তবে এই সংখ্যাটা হাতে গোনা। সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জের নাম। সাংবাদিকদের প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময় এক একটি চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জের সাথে যুক্ত হয়েছে করোনা পরিস্থিতি। মফস্বলের টেলিভিশন সাংবাদিকতা আরো কঠিন হচ্ছে পিপিই সংকটের কারণে। বিভিন্ন সময় দুর্গোগেও তাদের পোহাতে হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। সারা দেশের সাথে কার্যত যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে শুরু হয়েছে আরো কিছু সংকট। বন্ধ হয়েছে কিছু জাতীয় লোকাল পত্রিকার ছাপার কাজ। পত্রিকাগুলো টিকে থাকে বিজ্ঞাপনের উপর। বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করে সংবাদকর্মীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা। কিন্তু সেটাও বন্ধ হওয়ায় বর্তমানে আর্থিক সংকটে ভুগছে অধিকাংশ মিডিয়া ছাপাখানা গুলো ও তাদের সংবাদ কর্মীরা। তবে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যারা শুধুমাত্র সাংবাদিকতা পেশার সাথে আছেন তাদের অবস্থা আরো নাজুক। তারা না পারছে বলতে, না পারছে সইতে। জেলা শহরে কর্মরত আছে ভিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরা পার্সন। রয়েছে স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক। প্রত্যেক পত্রিকায় ২/৪ জন ব্যতীত তেমন সম্মানী দেয়া হয় না যতটুকু জানি। আবার আঞ্চলিক, স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকার রয়েছে উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সাংবাদিক। আমার জানা মতে তাদেরও সম্মানী দেয়া হয় না। তারাও অনেকটা বিজ্ঞাপন নির্ভর। অনেক ক্ষেত্রে কোন অনুষ্ঠান, সভা, সেমিনারে গেলে সামান্য সম্মানীটুকুই তাদের প্রাপ্য হয়। তবে করোনার কারণে মানুষের জনজীবন স্থবির হওয়ায় কিছু সাংবাদিকদের আর্থিক ভিত্তিও স্থবির হয়ে পড়েছে। ভিতরে ভিতরে ক্ষত বিক্ষত হলেও থেমে নেই তারা। জেলার কোন এলাকায় , উপজেলা পর্যায়ের কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন গ্রামে বা ইউনিয়ন পর্যায়ে অথবা উপজেলা পর্যায়ে কোন প্রোগ্রাম করলে জেলা শহর থেকে দু’একজন সাংবাদিককে নিয়ে যান। তারাই সমগ্র অনুষ্ঠান কাভার করেন। প্রোগ্রামের একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও করা হয়। অনেক সময় অতিরঞ্জিত করে পত্রিকা অফিসে পাঠানো হয় এবং পত্রিকা অফিসও তা প্রকাশ করে। ফলে স্থানীয় উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ের সাংবাদিকের কোন গুরুত্ব থাকে না। অথচ স্থানীয় জনগণ ঐ বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছেই তথ্য জানতে চায়। যেমন, জনৈক ব্যক্তি কোন এলাকায় গিয়ে ১০০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করলেন, তিনি পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিলেন ২০০ প্যাকেট, পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। স্থানীয় জনগন পত্রিকায় ২০০ প্যাকেট ধরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি জানতে চান। তখনই হয় বিড়ম্বনা। পেশাগত কারণেই সাংবাদিকরা সমাজের অনেকের সাথে অপ্রিয় পাত্র হয়েছে। তারা সমাজের নানান অসংগতি তুলে ধরছে, তুলে ধরছে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সরকারের নানান কর্মকান্ডসহ উন্নয়ন, সমস্যা ও সম্ভাবনা। অনেক জনপ্রতিনিধি, কর্মকর্তার স্বচ্ছ ভাবমুর্তি পত্রিকার মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরছে সাংবাদিকরাই। তাদের পেশা সম্মানজনক হলেও আর্থিক ভিত্তি রসাতলে গেছে। বর্তমানে, তাই কিছু সাংবাদিকের এই চরম দুঃসময়ে তারা কারো কাছে না পারছে সইতে, না পারছে বলতে। এ ক্ষেত্রে পত্রিকার মালিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বিত্তশালীরা ভুমিকা রাখতে পারেন। তাদের সাথে যারা সারা দিন পরিশ্রম করে তাদেরকে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরছে এখন সময় এসেছে সেই সংবাদকর্মীদের পাশে দাঁড়াবার। সরকারের জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে মিডিয়াভুক্ত পত্রিকা আছে। সর্বশেষ পত্রিকার সাংবাদিকদের তথ্য জেলা পর্যায়ের তথ্য অফিসে রয়েছে। রয়েছে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠনসহ প্রেসক্লাব সমূহ।তাই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ তথ্য মন্ত্রী মহোদয় ও সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা। তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের আর্থিক দুরবস্থা মেটানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক মিডিয়াভুক্ত পত্রিকা সম্প্রতি অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে আছে। তারা বাঁচলে নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাঁচবে। এ শিল্প বাঁচালে সুশাসন যেমন প্রতিষ্ঠিত হবে, তেমনি সুন্দর অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। সংবাদপত্র শিল্প ও শিল্প সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বাঁচাতে হলে স্থানীয় বিত্তশালী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সরকারের প্রণোদনার বিকল্প নেই বলে আমি মনে করি।
লেখক, সাংবাদিক, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম হাসান।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com