রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ অপরাহ্ন
নিউজ ডেস্ক, কালের খবর : ‘অনেক দিন ধরে এক প্রযোজকের সঙ্গে ছবির গল্প নিয়ে কথা চলছিল, তিনি গল্প পছন্দ করেছেন। মার্চের শেষের দিকে শুটিং শুরু করার কথা ছিল। অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গেও প্রাথমিক কথা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বজুড়ে শুরু হয় করোনাভাইরাসের প্রকোপ। দুই মাস ধরে বাড়ি ভাড়া বাকি। হাতে যা টাকা ছিল, এরই মধ্যে খরচ করে ফেলেছি। বাসায় বাজার নেই। লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারছি না। আর কার কাছেই বা চাইব। আমাদের চলচ্চিত্রের প্রায় সবার অবস্থা তো একই রকম। মনে হচ্ছে, এখন বুঝি না খেয়েই মারা যাব।’ এনটিভি
কথাগুলো বলছিলেন প্রধান সহকারী পরিচালক আলী আকরাম। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। দেশে দেশে চলছে লকডাউন। অনেক দেশ এরই মধ্যে চরম সংকটে পড়েছেন। বৈশ্বিক অর্থনীতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা অবশ্য আগে থেকেই খারাপ। এর মধ্যে করোনার উপদ্রব এ অঙ্গনকে চরম বিপদে ফেলেছে।
সোহানুর রহমান সোহান, শহিদুল ইসলাম খোকন, শাহ্ আলম কিরণ, বদিউল আলম খোকন ও এফ আই মানিকের মতো গুণী নির্মাতারা সহকারী পরিচালক থেকে চলচ্চিত্র নির্মাতা হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের অবস্থা খুব ভালো নয়, তাই সহকারী পরিচালক থেকে চলচ্চিত্র পরিচালক হওয়ার সংখ্যা দিন দিন কমছে। তার পরও সুদিনের আশায় অনেকে পড়ে আছেন বিএফডিসিতে। সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন।
দেব নয়, অন্য এক নায়কের সঙ্গে উড়াল দিলেন রুক্মিণী ≣ [১] দিল্লি সহিংসতা নিয়ে নীরব দর্শক বলিউডের তিন খান ≣ [১] স্পেনে কমছে করোনায় মৃতের সংখ্যা
সহকারী পরিচালক গাজী খালেক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন কাজ করে টাকাও কম পাই। অনেকে কাজ করার পর টাকাও দিতে চায় না। দুই মাস আগে একটি প্রথম সারির সিনেমা মুক্তি পায়। বেশ আলোচিত ছিল ছবিটি, নাম বলতে চাই না। গল্প তৈরি করা, শুটিং, এডিটিং, মুক্তি পর্যন্ত টানা তিনমাস কাজ করেছি। যেখানে আশি হাজার টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে পেয়েছি ২৫ হাজার টাকা। এখন তো ফোন দিলে ফোনই ধরেন না প্রযোজক সাহেব। দুই সন্তান ও পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। টাকা শেষ, ঘরে খাবার ফুরিয়েছে, আত্মসম্মান নিয়ে মরার মতো বিছানায় পড়ে আছি। চোখে অন্ধকার দেখছি।’
বাংলাদেশ সহকারী পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার বলেন, ‘আমাদের দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ সহকারী পরিচালক রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্রের অবস্থা ভালো নয়, তারপরও নিয়মিত কাজ করছেন প্রায় ৩০০ সদস্য। গল্প লিখে, চিত্রনাট্য বা সংলাপ লিখে কেউ কেউ জীবন চালিয়ে নিচ্ছেন। করোনার কারণে এখন কাজ বন্ধ। যে কারণে বিপাকে পরেছেন শতাধিক সদস্য। যাঁদের বাড়িতে খাবার নেই। এফডিসিতে কিছু সাহায্য এসেছে, তবে আমরা তেমন একটা সহযোগিতা পাইনি। অবশ্য আমাদের সদস্যরা সেভাবে সাহায্য চাইতেও পারেন না। এদের কাছে লজ্জা বা আত্মসম্মানটাই বড়। তাই আমরা ত্রাণ নয়, পরিত্রাণ চাই সৃষ্টিকর্তার কাছে।’
সহকারী পরিচালক সমিতির সভাপতি কাজী মনির বলেন, ‘আমি সমিতির সভাপতি হিসেবে চলচ্চিত্রের সচ্ছল মানুষের কাছে অনুরোধ করব, আপনারা আমাদের পাশে দাঁড়ান। আমাদের বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সহকারী পরিচালক রয়েছেন চার শতাধিক, এর মধ্যে শতাধিক সদস্য সমস্যায় রয়েছেন। তাঁরা যেন না খেয়ে মারা না যান।’
এরই মধ্যে এফডিসিতে ত্রাণ বিতরণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, চিত্রনায়ক-প্রযোজক-ব্যবসায়ী অনন্ত জলিল, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, চিত্রনায়ক ওমর সানি ও মিশন সেফ বাংলাদেশ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে সমিতির সদস্যরা বলছেন, এসব অনুদান থেকে তেমন একটা সহযোগিতা পাননি সহকারী পরিচালকেরা।