সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, ডেমরা, (ঢাকা ) :
নজরদারির অভাবে ডেমরায় সুলতানা কামাল সেতুর নিচে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ট্রাক ও বাসস্ট্যান্ড। এতে সেতুর নিচের পাশের রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পিলারের গোড়া ঘেঁষে ট্রাক রাখায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতুটির।
এছাড়া পিলার ঘেঁষে গড়ে ওঠা অবৈধ বালুর ব্যবসার ভেকু ও অতিরিক্ত ট্রাক চলাচল করায় সেতুর অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ঝুকিতে রয়েছে সুলতানা কামাল সেতুটি।
জানা যায়, এসব অবৈধ বালুর ব্যবসাসহ অবৈধ ট্রাক ও বাসস্ট্যান্ডের আড়ালে প্রশাসন ও আওয়ামী নেতা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর ডেমরা ও পার্শ্ববর্তী রূপগঞ্জ থানাধীন শীলতলক্ষ্যা নদীর ওপর অবস্থিত সুলতানা কামাল সেতুটি অরক্ষিত। এর নিচে ও পাশের রাস্তায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ট্রাক ও বাসস্ট্যান্ড। এসব বাস রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। আর ট্রাকগুলো অভ্যন্তরীণ এলাকাসহ রাজধানীতে ইট বালু ও পাথর সরবরাহ করে।
এসব ট্রাক সেতুর নিচে পিলারের গোড়ার ফাঁকে পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় মেরামতের কাজ সেতুর নিচেই সেরে নেয় সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে অছিম, স্বাধীন ও রাজধানীসহ শহরের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনগুলো সেতুটির পাশের রাস্তায় পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। প্রশাসনের সামনেই সেতুর নিচ ও এর পাশের রাস্তা ট্রাক বাস পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন রয়েছে নিরব।
সরেজমিন দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীতে অবস্থিত সুলতানা কামাল সেতুর নিচে দুই পাড়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে । এতে ইট, বালু, কাঠ, বাঁশ ও বিভিন্ন দোকান পাঠ গড়ে তুলেছে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় আওয়ামী প্রভাবশালী নেতরা।
এদিকে ইট ও বালু সরবরাহকারী নৌ-যান শীতলক্ষ্যা নদীর পাড় দিয়ে সেতুর পিলারের গোড়া ঘেঁষেই মালামাল নামায়। দখলদাররা এমনভাবে দখল করেছে যে, সেতুর পিলারগুলো প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ যেন দখার কেউ নেই।
অনেকে আবার পিলারের গোড়ার ফাঁকে পান সিগারেটের দোকান দিয়েছে। এছাড়াও কাঠ কাটা ও সরবরাহের কাজও চলছে সেতুর নিচেই।
অবৈধ বাস পার্কিং করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলাম, আকবর হোসেন ও মারুফসহ একাধিক বাসচালক বলেন, স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আমাদের সেতুর নিচে পার্কিং করতে হচ্ছে। তাছাড়া কর্তৃপক্ষ যেখানে রাখতে বলে সেখানেই আমরা পার্কিং করতে বাধ্য।
পার্কি প্লেস খোঁজা হচ্ছে। ব্যবস্থা হলে সেতুর নিচে পার্কিং করা হবে না। তবে আমরা টাকার বিনিময়ে এখানে পার্কিং করছি। তবে কে কারা টাকা নেয় এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
ডেমরা বাজারসংলগ্ন এলাকার অধিবাসী মো. ইব্রাহিম খলিল বলেন, শীতলক্ষ্যা নদীর তীরঘেঁষে ডেমরা বাজার এলাকায় যাওয়ার জন্য সেতুর নিচের রাস্তাই একসময় নিরাপদ ছিল।
এ সড়ক দিয়ে ঐতিহ্যবাহী বাওয়ানী উচ্চ বিদ্যালয় ও বাওয়ানী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ছিল। যা এখন বন্ধ। আর রাস্তাটি এমনভাবে ভেঙে গেছে যে এখান দিয়ে কোনো রিকশাও চলতে পারে না। বৃষ্টি হলেই এ সড়কের বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকে।
রামপুরা ট্রাফিক জোনের টিআই বিপ্লব ভৌমিক বলেন, শহরের বিভিন্ন রুটে লাখ লাখ মানুষের যাতায়াতের জন্য ডেমরার স্টাফ কোয়ার্টার বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ডেমরা থেকেই বিভিন্ন রুটে বেশ কয়েকটি কোম্পানির বাস চলাচল করে বলে এটি তাদের শেষ গন্তব্যস্থল।
আর বিআরটিএ’র অথরিটি অনুযায়ী বাসের শেষ স্ট্যান্ড এলাকায় যথাযথ পার্কিং জোন থাকার কথা থাকলেও এখানে তা নেই। আর পার্কিং করার মতো সুবিধাজনক সরকারি জায়গাগুলো স্থানীয় দখলদারদের কবলে চলে গেছে। তাই বাসগুলো সড়কের পাশসহ যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয়।
ট্রাফিক বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রেকারিং করলেও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদি ইকবাল বলেন, বাস-ট্রাকস্ট্যান্ডসহ সুলতানা কামাল সেতুর নিচে অবৈধভাবে গড়ে তোলা স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।
তাছাড়া যাত্রাবাড়ী-ডেমরা সড়কটি ৬ লেন হতে যাচ্ছে, যা ইতিমধ্যে টেন্ডারের পর্যায়ে রয়েছে। আর সুলতানা কামাল সেতুর নিচ দিয়ে ইউটার্ন রাস্তা করা হবে।
আগামী ১ মাসের মধ্যেই পর্যবেক্ষণসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে। আর রাজধানীর প্রবেশদ্বার হিসেবে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী সড়কটি হবে সর্বাধুনিক। তখন কোনো প্রকার অবৈধ দখল ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা থাকবে না।