শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন
এম আই ফারুক , কালের খবর :
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে নিজ স্কুলের ছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে সলিমগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা হওয়ায় লম্পট আসামীদের গ্রেফতারের দাবীতে সলিমগঞ্জের জনগন এখন উত্তাল। এ অবস্থায় আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। নতুবা উত্তেজিত জনতা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পারে বলেও জানান তারা।
প্রদীপ মাস্টারের যৌন কেলেংকারী ফাঁস হওয়ায় এলাকার অভিভাবকরা তাঁদের মেয়ে সন্তানদেে নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে জানান ।
জানা যায়, মামলার এজাহার ভুক্ত আসামী , বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলাম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার দাস। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের নবম ও দশম শ্রেণির কয়েক জন ছাত্রী যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলেছে।
এ ঘটনা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে ফেসবুকে ওই সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমারের সঙ্গে দুজন ছাত্রীর কথপোকথনের একটি অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে এলাকার সর্বত্র ভাইরাল হয়ে গেছে।
উক্ত স্কুলের শিক্ষক মামলার আসামী প্রদীপ দাস দীর্ঘ দিন যাবত সন্তান সমতুল্য ছাত্রীদের ধর্ষনসহ বিভিন্ন ভাবে যৌন নিপীড়ন করেছে বলে জানান ভুুুুক্তভোগিরা।
এবিষয়ে জনৈক এক ছাত্রীর ভাই বাদী হয়ে শনিবার রাতে নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন।
ছাত্রীদের অভিযোগ, সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার বিভিন্ন সময়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে আসা ছাত্রীদের কৌশলে বুকের স্তনে ও গোপনাঙে হাত বুলানো, ধর্ষনসহ যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন। তার আচরণের কথা যাতে প্রকাশ না করে সেজন্য ছাত্রীদের পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়াসহ নানা ভয়ভীতি দেখান তিনি।
এ নিয়ে ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রী ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলামের কাছে বারবার প্রতীকার চেয়ে কোনো সমাধান পায়নি।উল্টো মেয়েরাই অসৎ চরিত্রের বলে গালমন্দ করেন। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে গত ৭ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের সঙ্গে দেখা করে তাকে (এমপি) পুরো ঘটনা জানিয়ে এর প্রতীকার দাবি করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ ছাত্রীরা অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ঘটনার প্রশ্রয়দাতা হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানায়।
এ বিষয়ে মামলার বাদী জনৈক ছাত্রীর বড় ভাই বোরহান মিয়া বলেন, যৌন হয়রানির শিকার একাধিক ছাত্রী বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতীকার না পাওয়ায় আমি ছাত্রীদের পক্ষে এর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার চেয়ে অবশেষে থানায় মামলা করতে বাধ্য হয়েছি।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনোজিত রায় মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে কালের খবরকে বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ও সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ দাসসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনকে আসামি করে মামলাটি করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার ও প্রধান শিক্ষক আজাহারুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম সোহেল কালের খবরকে বলেন, এ নিয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। তবে মামলার কথা শুনেছি। রোববার আমরা স্থানীয় সাংসদকে অবহিত করে ম্যানেজিং কমিটির বৈঠক করেছি। বৈঠকে শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শোকজসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল কালের খবরকে বলেন, প্রায় ৩০ জন ছাত্রী গত পরশু আমার কাছে এসে যৌন হয়রানির বিষয়ে নালিশ করে গেছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকসহ এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে ওসিকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।