বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পূর্বাহ্ন
কালের খবর ডেস্ক :
বছরের পর বছর ধরে একনায়ক শাসকের অধীনে ছিলেন দেশটির সাংবাদিকেরা। গত এক বছরের একটু বেশি সময় ধরে দেশটিতে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে নামে গণতান্ত্রিক হলেও গাম্বিয়ার আইনিকাঠামো এখনো ‘একনায়ক’ বৈশিষ্ট্য থেকে বের হতে পারেনি। স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা নতুন করে শুরু করতে এবার নিজেরাই একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশটির সাংবাদিকেরা।
সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকায় প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে তুলে ধরা হয়েছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় সাংবাদিকতার বর্তমান অবস্থা। সাবেক একনায়ক ইয়াহিয়া জামেহ টানা ২২ বছর দেশটির দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন। ২০১৭ সালে নির্বাচনে পরাজয়ের পর তিনি দেশের বাইরে নির্বাসনে চলে যান। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গাম্বিয়ায় বদলের সূত্রপাত হয়েছে। আগের স্বৈরাচারী সরকারের করা নিয়মকানুন পাল্টে যাচ্ছে। সেই রূপান্তরের ছোঁয়া লেগেছে দেশটির সংবাদমাধ্যমেও। স্বাধীন সাংবাদিকতার চর্চা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন গাম্বিয়ার সাংবাদিকেরা।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া জামেহর শাসনামলে গাম্বিয়ায় অহরহ অপহরণের শিকার হতেন সাংবাদিকেরা। বিপক্ষে লিখলেই গায়েব করে দেওয়া হতো সাংবাদিকদের। নিয়মিত নিপীড়নের পাশাপাশি হত্যাও করা হতো সাংবাদিকদের। এবার সেই দৃশ্যপটে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসছে। সাংবাদিকতায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে দেশটির সাংবাদিকেরা নতুন মিডিয়া কাউন্সিল গঠন করেছেন। সাংবাদিকদের বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা এই নতুন মিডিয়া কাউন্সিলে পেশ করা যাবে। অবশ্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ আদালতে নেওয়ার সুযোগও আছে। কিন্তু দেশটির প্রধান সাংবাদিকেরা বলছেন, সেখানকার আইনকানুন এখনো আগের স্বৈরাচারী ধরনেই আছে। সংশোধিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে ওই সব ‘ড্রাকোনিয়ান’ আইন ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন সাংবাদিকেরা। এর বদলে অভিযোগের সুরাহা করতে চাইছেন সাংবাদিকেরাই।
গাম্বিয়ার প্রেস ইউনিয়নের মহাসচিব সাইকৌউ জামেহ বলেন, ‘সরকার যেন সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করার জন্যই এই সংস্থা গঠন করা হয়েছে। এটি সরকারের কোনো বিষয় নয় এবং তাদের নাক গলানোর কোনো বিষয়ও হতে পারে না।’
একনায়ক শাসকের সময় সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই ঝামেলা পোহাতে হতো গাম্বিয়ার সাংবাদিকদের। সব সাংবাদিককেই তখন নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে আপস করতে হয়েছিল। ফলে ‘আপসকামী’ সংবাদমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের মধ্যকার সম্পর্কে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।
ভয়েস অব আমেরিকার বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, এর মধ্যেই একনায়কের আমলে প্রণীত আইনগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন দেশটির আদালত। কিছু আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। নতুন সরকারও সাংবাদিকদের সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটির বর্তমান তথ্যমন্ত্রী এবরিমা সিল্লাহ বলেন, ‘একটি কঠিন সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।’ দেশের সংবাদমাধ্যমকে যেন কোনো ধরনের বাধানিষেধের মুখোমুখি হতে না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন এবরিমা।
ইয়াহিয়া জামেহ নির্বাসিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৩০ জন সাংবাদিক ফিরে এসেছেন গাম্বিয়ায়। তবে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস জানিয়েছে, দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন শতাধিক সাংবাদিক। অর্থাৎ সবাই এখনো ফিরে আসেননি। অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগের চেয়ে অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদমাধ্যম খোলা হচ্ছে। রেডিও চ্যানেলগুলোতে বর্তমান সরকারের যেকোনো সমালোচনাও হচ্ছে মুক্তকণ্ঠে।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের আফ্রিকা ডেস্কের প্রধান আহনুঁ ফোগ্যেয়া বলেন, ‘গাম্বিয়াতে সংবাদমাধ্যমের নতুন যুগ শুরু হয়েছে। নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় আরোহণের পর থেকে দ্রুত সবকিছুতে পরিবর্তন আসছে। গাম্বিয়া এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে।’
২০১৮ সালে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের ওয়ার্ল্ড প্রেস ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১২২তম স্থানে রয়েছে গাম্বিয়া। ২০১৭ সালে এটি ছিল ১৪৩। আর একনায়কের শাসনামলে ২০১৬ সালে ১৪৫তম দেশ হয়েছিল গাম্বিয়া।
তবে এত উন্নতি সত্ত্বেও স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ে শঙ্কা একেবারে উবে যায়নি। কারণ, এখনো গাম্বিয়ার গণমাধ্যমসংশ্লিষ্ট পুরোনো আইনগুলো পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি। ফলে আইনের মারপ্যাঁচে সৎ সাংবাদিকদের আটকে দেওয়ার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।