রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
>> রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, দুদকের সংস্কার
>> সরকারি অর্থায়নে দরিদ্রদের শিক্ষা চিকিৎসা ও বাসস্থান
>> কৃষিপণ্য উৎপাদনে ভর্তুকি ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা
>> চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫, চাহিদা অনুযায়ী কোটা সংস্কার
>> পরিবহন ও সেবা খাতগুলো ১৭টি স্টেটভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ
>> স্টেট ভিত্তিক সাংবিধানিক কোর্ট ও ‘অপআইন’ রোধ
‘দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’- এমন প্রত্যয় নিয়ে শিগগিরই ঘোষিত হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কথা মাথায় রেখে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমানোর ঘোষণাসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে থাকছে কৃষকের স্বার্থ, কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতের কৌশল ও ঘোষণা। কিছু ‘অপআইন’ সংশোধন আর পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য বন্ধের পরিকল্পনাও থাকছে ইশতেহারে।
কালের খবরের সঙ্গে আলাপকালে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার হবে সাধারণ মানুষ-বান্ধব। বিগত সরকার ও অন্যান্য দলগুলোর ইশতেহারে অনেক জটিল ও অবাস্তব স্বপ্ন তুলে ধরলেও ঐক্যফ্রন্ট সেটা করছে না। ইশতেহারের প্রতিটি লাইন হবে সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’-এর আলোকে ইশতেহার হচ্ছে কিনা- বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার তৈরির জন্য ছয় সদস্যের কমিটি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কমিটিতে বিএনপি থেকে মাহফুজ উল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ ও ম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আছেন। ইতোমধ্যে ঐক্যফ্রন্টে থাকা দলগুলোর কাছ থেকে নিজ নিজ ইশতেহার সংগ্রহ করেছে কমিটি। শিগগিরই চূড়ান্তভাবে ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ইশতেহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সংস্কার; কৃষক, শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে নিশ্চিত করা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের কথাও উল্লেখ থাকছে। এছাড়া গ্যাস-বিদ্যুতের দামসহ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সেবাসমূহের মূল্য সমন্বয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে।
ইশতেহার চূড়ান্তের বিষয়ে কমিটির সদস্য নাগরিক ঐক্যের নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান কালের খবরকে বলেন, ইশতেহার সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি যেগুলো মানুষের নাগালের বাইরে যাচ্ছে সেগুলো কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অনেক কিছুই উঠে এসেছে, এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কোনটা কীভাবে প্রায়রিটি বা অগ্রাধিকার দেয়া হবে, কোনটা আগে আসবে এবং কোনটা পরে আসবে।
‘সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সমস্যাগুলোর সব সমাধান নিয়েই তৈরি হবে ইশতেহার’- যোগ করেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ইশতেহারে ‘দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে, আনবে পরিবর্তন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’, ‘জনগণ এ রাষ্ট্রের মালিক’ এ ধরনের স্লোগান থাকছে।
ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে তরুণদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, তরুণদের একাংশের দীর্ঘদিনের দাবি অনুযায়ী চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার অঙ্গীকার করা হবে, অবসরের বয়স বাড়ানো হবে। শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার করা হবে চাকরিতে প্রবেশের কোটা, কমানো হবে ইন্টারনেটের দাম।
এছাড়া পরিবহন সেক্টরে দীর্ঘদিনের নৈরাজ্য বন্ধে থাকছে বিশেষ অঙ্গীকার। গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মতো পরিবহন খাতকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। যেমন- লাইসেন্স, ফিটনেস ইত্যাদি প্রতিটি জেলার অফিস থেকে দেয়া হবে। এগুলো প্রদানের ক্ষমতা থাকবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে। তবে সরকার ‘বোর্ড সুপারভাইজার’ হিসেবে থাকবে।
কৃষকের লাভ বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে ইশতেহারে। একজন কৃষক যাতে তার পরিশ্রম অনুযায়ী ন্যায্য মূল্য পায়, একই ভাবে শহরগুলোতে যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য পাওয়া যায় সেই অঙ্গীকার করা হবে। সব কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্য ভর্তুকি দেয়া হবে। কৃষিতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও কৃষিজাত পণ্যের আমদানি কমানোর অঙ্গীকার করা হবে।
ঐক্যফ্রন্ট সূত্র জানায়, জোটের ইশতেহারে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠানোর অঙ্গীকার থাকবে। এছাড়া ক্ষমতায় যাওয়ার দুই বছরের মধ্যে প্রশাসন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশনা, গণপরিবহন, নারী উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ ব্যবস্থাপনা আটটি প্রদেশ বা ১৭টি স্টেটভিত্তিক বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা উল্লেখ থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সুপ্রিম কোর্ট, সেনাবাহিনী, পররাষ্ট্র, বৈদেশিক বাণিজ্য, বিমান ও সমুদ্রবন্দর, আন্তঃজেলা মহাসড়ক এবং ইনকাম ট্যাক্স ও শুল্ক ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে।
এছাড়া খুনের মামলা ছাড়া অন্য মামলায় আসামিদের হাইকোর্টে জামিন হলে সরকার সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে অহেতুক সময় ও অর্থব্যয় না করাসহ প্রতিটি স্টেটে আলাদা সাংবিধানিক কোর্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের।
ইশতেহার কমিটির অন্যতম সদস্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের খবরকে বলেন, ইশতেহার জনবান্ধব হচ্ছে। প্রতিটি দলের ড্রাফট পেয়েছি। আমরা সম্মিলিতভাবে এবং চূড়ান্তভাবে জনবান্ধব একটি ইশতেহার দাঁড় করাতে পারবো।
‘ইশতেহারে প্রয়োজনীয় সময় অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি দেয়া হবে। যেমন- ক্ষমতায় যাওয়ার পর আমরা এক বছরের মধ্যে কী করবো, দুই বছরের মধ্যে কী কী করবো- সেগুলো সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, “আইনের নামে বাংলাদেশে যেসব ‘অপআইন’ চলছে এগুলো বন্ধের ঘোষণা থাকবে। এছাড়া আমাদের অন্যতম গুরুত্ব থাকবে কৃষক যাতে তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়। ঢাকার মানুষও যেন ন্যায্য মূল্য পায়। সবদিকে সামঞ্জস্য রাখা হবে। আমরা এমন ইশতেহার দেব যাতে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্তরা বেশি উপকৃত হন।”
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ‘অপআইন’ সংশোধনের বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও জানা গেছে, ইশতেহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা সংশোধনের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।