সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০২ অপরাহ্ন
কালের খবর, প্রতিবেদক :
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরিটি (জিডি) রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে। এদিকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার পর চাঁদাবাজির অভিযোগেও মামলা হয়েছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। ঢাকার আশুলিয়ার পাথালিয়ায় জমি বিক্রিতে বাধ্য করার চেষ্টা এবং এক কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার রাতে মামলাটি হয়।
গত ৯ অক্টোবর সময় টিভির টকশোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেয়ায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার সেনা সদরের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এই জিডিটি গত রবিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে এটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে স্থানান্তর করা হয়। গতকাল সোমবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আব্দুল বাতেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) ফজলুর রহমানকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে জিডির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তাপস কুমার দাস জানান, সেনা সদর দপ্তরের আইন বিষয়ক উইংয়ের মেজর এম রকিবুল আলম বৃহস্পতিবার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় ওই জিডি করেন।জিডিতে বলা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায়ের আগের রাতে হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেনাপ্রধান সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বিদ্বেষপ্রসূত ও ষড়যন্ত্রমূলক, যা সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতো একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি কেন, কী উদ্দেশ্যে এবং কাদের প্ররোচনায় এ ধরনের উদ্দেশ্যমূলক, বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য টকশোতে বলেছেন, তা তদন্তের দাবি রাখে।
গত ৯ অক্টোবর রাতে সময় টিভির আলোচনা অনুষ্ঠান ‘সম্পাদকীয়’তে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দাবি করেন, সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ যখন ‘চট্টগ্রামের জিওসি’ ছিলেন, সেখান থেকে ‘সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ চুরি’ যাওয়ার ঘটনায় তার ‘কোর্ট মার্শাল’ হয়েছিল। এরপর বিষয়টি নিয়ে সেনা সদরের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদলিপি পাঠানো হয়। সময় টিভি নিজেদের বক্তব্যসহ সেটি প্রচার করে। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনোই চট্টগ্রামের জিওসি বা কমান্ড্যান্ট ছিলেন না। ওই সময় চট্টগ্রাম বা কুমিল্লা সেনানিবাসে কোনো সমরাস্ত্র বা গোলাবারুদ চুরি বা হারানোর ঘটনা ঘটেনি। জেনারেল আজিজ আহমেদ চাকরি জীবনে কখনো কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হননি। জাফরুল্লাহর বক্তব্যকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে বর্ণনা করে সেনা সদরের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ওই বক্তব্য সেনাবাহিনী প্রধানসহ সেনাবাহিনীর মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠানকে জনসম্মুখে হেয় করার হীন অপচেষ্টা মর্মে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়।
সেনা সদরের প্রতিবাদের পর গত শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টেলিভিশনের আলোচনায় তার বক্তব্যে শব্দ চয়নে ভুল ছিল এবং সে জন্য তিনি দুঃখিত। ভুল সংশোধন করে নিতে গিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, জেনারেল আজিজ একজন দক্ষ আর্টিলারি সেনা কর্মকর্তা। তিনি চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি ছিলেন না, কমান্ড্যান্টও ছিলেন না। তিনি তার কর্মজীবনের এক সময়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনিতে আর্টিলারি প্রশিক্ষক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল হয়নি, একবার কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল।
সংবাদ সম্মেলনে তার ওই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সোমবার আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) থেকে আরেকটি প্রতিবাদলিপি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কখনো কোর্ট মার্শাল তো হয়ই-নি বরং সুদীর্ঘ চাকরি জীবনে তার বিরুদ্ধে কোনো কোর্ট অব ইনকোয়ারিও হয়নি। ডা. জাফরুল্লাহর বক্তব্য চরম মিথ্যাচারের শামিল। টেলিভিশন আলোচনায় ডা. জাফরুল্লাহ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেডের উৎস হিসেবে ‘সুকৌশলে’ সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করার একটি চেষ্টা করেছিলেন, যা ছিল ‘দুরভিসন্ধিমূলক’। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা সংক্রান্ত মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন টেলিভিশনের লাইভ টকশোতে এ ধরনের অসত্য বক্তব্য প্রদান উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অসত্য বক্তব্যকে সংশোধন করার কোনো চেষ্টা করেননি। তার সামগ্রিক বক্তব্যে এটা স্পষ্ট যে, তিনি সেনাবাহিনীতে কর্মরত সকল পদবির সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে সেনাবাহিনী প্রধানের ভাবমূর্তি এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালান।