রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৩ অপরাহ্ন
ফারুক শাহজী, কালের খবর : আশ্রয়ণের অধিকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ সরকারের সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচীর আওতায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ১২১ জন ভিক্ষুক পেয়েছেন বসতঘর। সকালে পানি পান্তা খাইয়া গাওয়াল করবার যাইতাম। সারাদিন এই পাড়া হেইপাড়া গাওয়াল (ভিক্ষা) কইরা যাই কিছু পাইতাম, কোনরহম বুড়া-বুড়ির পেট চলে। রাইতে ঘুমের কি আরাম, বিশ বছর ধইরা কবার পাইতাম না, সারেকাগজ ও কুশাইলের পাতার ঘরে মাঝে মধ্যেই হিয়াল, কুত্তা ডুইক্কা খাওয়ন লইয়াগেছে। শীতের দিন কষ্টের কোন সীমা আছিন না, ঘরের মধ্যেই ঊস্ (কোয়াশা) পরতো, বাতাসে থাকবার পাইতাম না। জীবনেও ভাববার পাইছিনা টিনের ঘরে থাকমু, মরার আগে আল্লায় (আল্লাহ) রহমত করছে। সরকার টিনের ঘর কইরা দেওয়ায় শেষ বয়সে ইট্টু আরামে আয়েশে ঘরে থাইক্কা যাবার পামু। বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন কালাদহ ইউনিয়নের পাটিরা উত্তর পাড়া গ্রামের ৮৫ বছর বয়সের ভিক্ষুক অসুস্থ্য রুস্তম আলী।
সবার জন্য বাসস্থান প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের এক কোটি ২১ লাখ টাকায় ১২১ জন ভিক্ষুককে বিনামূল্যে বাসস্থান করে দিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লীরা তরফাদর। কালাদহ, ভবানীপুর ও এনায়েতপুর ইউনিয়নের সরেজমিনে দেখা যায়, ভিক্ষুক বাসস্থানের প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ ও প্রস্থ সাড়ে ১৬ ফুট করে। ফ্লোরপাকাসহ চার চালা প্রতিটি ঘর তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে আকাশমণি কাঠ, ৩৬ মিলি ঢেউটিন, ইট-সিমেন্টে ১৭ টি করে মজবুত খুটি। ঘরের পাশেই করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য সম্মত লেট্রিন।
ভিক্ষুক রুস্তম আলীর বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া জমিজমা কিছুই নেই। দুই ছেলে এক কন্যা সন্তান ছিল। ২৫ থেকে ৩০ বছর পূর্বে তিন সন্তানের মৃত্যু হয়। বাঁশ, পলিথিন ও আখের পাতার তৈরি ভাঙ্গাচুরা ঝরাজির্ণ ঘরেই বয়সের ভারে ন্যুব্জু স্বামী স্ত্রী বসবাস করে আসছিলেন। ভিক্ষুক রুস্তম আলীর স্ত্রী জুবেদা খাতুন বলেন, তিনজন সন্তান ছিল আমাদের, এক সময় সন্তানদের কাজের টাকায় সংসার চলছে। তিনজন সন্তানই ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সে মারা গেছে। সন্তানদের মৃত্যুর পর অভাবের সংসারে স্বামী হয়ে যায় ভিক্ষুক, অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটিয়েছি, ছন ও পাতার ভাঙ্গা কুড়েঁ ঘরে বসবাস করি। শেষ বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চারচালা টিনসেট ঘরে বসবাস করবেন এ আনন্দে আবেগ আপ্লুত হয়ে কেঁদে উঠেন জুবেদা খাতুন ।
সোয়াইতপুর গ্রামের মৃত সোরহাব আলীর স্ত্রী খোদেজা খাতুন ভিক্ষাবৃত্তি করেন। মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়ে নিয়ে বাঁশ ও খড়ের ছোট্ট কুঁড়ে থাকতো। এনায়েতপুর দুলমা গ্রামের ভিক্ষুক ইন্তাজ আলী (৯৫) ও স্ত্রী ছফেদা খাতুন সংসার জীবনে কোন সন্তান নেই। জীবনে কল্পনাও করতে পারেনি কোনদিন টিনসেট ঘরে থাকবে। এখন তারা সবাই নতুন টিনের ঘরে থাকছেন। তাদের আন্দনের কোন শেষ নেই এখন। উপজেলার ভিক্ষুকদের তালিকা দেখে তিন ধাপে তদন্ত করে প্রথমধাপে ১২১ জন ভিক্ষুক, যাদের থাকার জমি ছাড়া কিছুই নেই তাদেরকেই সবার জন্য বাসস্থান প্রকল্পের আওতায় টিনসেট ঘর করে দিচ্ছেন।
দেওখোলা, ফুলবাড়ীয়া, কালাদহ ও এনায়েতপুর ইউনিয়ে ভিক্ষুকদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নে বরাদ্দকৃত ঘরের কাজও প্রায় শেষ। ঘর তৈরি সরাঞ্জমাদি থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত স্যার (ইউএনও) নিজে তদারকি করায় ঘরের কাজ হয়েছে অনেক মজবুত বলে জানালেন ভিক্ষুক আঃ আজিজ।
কালাদহ ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল ইসলাম মাস্টার বলেন, কালাদহ ইউনিয়নে ৬ জন ভিক্ষুককে ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। স্বচ্ছ যাচাই বাছাই করার কারনে সবার জন্য বাসস্থান প্রকল্পের আওতায় প্রকৃত ভিক্ষুকরা যাদের ঘর করার সমর্থ নেই তারই ঘর গুলো পেয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লীরা তরফাদর বলেন, আশ্রয়ণের অধিকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার সবার জন্য বাসস্থান কর্মসূচীর আওতায় উপজেলার ভিক্ষুকদের তালিকা একাধিক বার যাচাই বাছাই শেষে স্বচ্ছ তালিকা প্রণয়ন করা হয়। যাদের বাড়ি ঘরের জমি ছাড়া কিছুই নেই, সেইসব প্রকৃত ভিক্ষুকদের একলাখ টাকা খরচ করে প্রতিটি টিনসেট ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।