সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন
কালের খবর প্রতিবেদন :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কোন দল নির্বাচন করবে- কী করবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত এবং কে সরকার গঠন করবে জনগণই তার সিদ্ধান্ত নেবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনে আসার বিষয়টি হচ্ছে গণতন্ত্র।
কোন দল নির্বাচন করবে, কোন দল করবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত, আমি কোন দলীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতে পারি না।
শেখ হাসিনা আজ বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সাম্প্রতিক তিনটি দেশে সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ করা, না করার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ থেকে ১৬ এপ্রিল সৌদি আরবে একটি যৌথ সামরিক মহড়া ও ১৭ থেকে ২২-এ এপ্রিল লন্ডনে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখানে তাঁকে ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এওয়ার্ড-২০১৮তে ভূষিত করা হয় এবং ২৬ থেকে ২৯ এপ্রিল তিনি অস্ট্রেলিয়া সফর করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একজনের দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর তো আমি চাপিয়ে দিতে পারি না- যে তোমাদেরকে নির্বাচন করতেই হবে। হয় তোমাদের নির্বাচন করতে হবে, না হয় ধরে নিয়ে যাব জেলে। কাজেই এটা সম্পূর্ণই তাদের ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। নির্বাচন ঠেকাতে চেষ্টা করেছে এবং তিন হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে, ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়েছে, ৭০টি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে, গাছ কেটেছে, রাস্তা কেটেছে, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।
২৭ জন পুলিশ হত্যা করেছে। কাজেই এখন নির্বাচনে আসবে কি আসবে না সেটা সম্পূর্ণই তাদের ওপর নির্ভর করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনে জেতার বিষয়টি আমি জনগণের ওপরই ছেড়ে দিচ্ছি। জনগণ যদি মনে করে তাদের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে তাহলে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আমরা আবার ক্ষমতায় আসবো। অন্তত যে পরিকল্পনাগুলো আমরা নিয়েছি, সেগুলো বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, মধ্যম আয়ের এবং উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইনশাআল্লাহ একমাত্র আওয়ামী লীগই সেটা করতে পারবে। আর কেউ পারবে না। নইলে এতদিন তো ক্ষমতায় ছিলো জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া। দেশের উন্নয়ন হয়নি কেন? এখন হচ্ছে কেন?
প্রধানমন্ত্রী এ সময় মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধির ফলে রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টির বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, বিএনপি বলছে তাদের নেত্রী মুক্ত না হলে নির্বাচন করবে না এখন তাদের নেত্রীকে তো আমি জেলে পাঠাইনি। আমি যদি জেলে পাঠাতাম ২০১৪, ১৫ এবং ২০১৬ তখন যেমন তিনি মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিলেন, ৬৮ জন লোক নিয়ে নিজেকেই নিজে একটি অফিস রুমে অন্তরীণ থেকে এবং সেখান থেকে হুকুম দিয়ে দিয়ে যখন মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করলেন তখনই তাকে আমি গ্রেফতার করতাম।
তিনি বলেন, সেই গ্রেফতারটা আমি রাজনৈতিকভাবে করতে চাইনি। এমনকি আপনারা জানেন তার ছেলে মারা গেল- আমি দেখতে গেলাম। মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দিল ঢুকতে দিল না। অন্য কোন দেশ হলে কি করতো- ঐ দরজার বাইরে আর একটি তালা দিয়ে দিত। যেন সেখান থেকে আর কেউ বের হতেই না পারে।
‘কারণ আমি যদি ঢুকতে না পারি, তাহলে তোমরা বের হতেও পারবে না। সেই তালা আমি দিয়ে দিতে পারতাম। যদিও আমি সেটাও করিনি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার মামলা সম্পর্কে বলেন, ১০ বছর একটা মামলা চলেছে, ১৫২ থেকে ১৫৪ বার সময় নিয়েছে, তিনবার কোর্ট বদল হয়েছে। ২২ বার রীট হয়েছে । তারপরেও বিএনপি’র কত বড় বড় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী রয়েছে। তারা কিছুতেই প্রমাণ করতে পারলো না যে খালেদা জিয়া এতিম খানার নামে টাকা এনে দুর্নীতি করে নাই। তারা প্রমাণ করতে পারে নাই, আর কোর্ট রায় দিয়েছে। এখানে আমাদের কাছে দাবি করে তো কোন লাভ নেই।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আইনগতভাবেই যখন কারাগারে গেছে, আইনগতভাবেই তাকে মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের কাছে দাবি করে কি লাভ হবে? আমরা কি করতে পারবো?
তিনি বেগম জিয়াকে গ্রেফতার না করলেও বরং একটি অন্যায় কাজ করেছেন উল্লেখ করে বেগম জিয়ার সেবা-যতেœর জন্য তার সঙ্গে কারাগারে প্রেরণ করা গৃহপরিচারিকা ফাতেমার কথা উল্লেখ করে বলেন, সাজাপ্রাপ্ত কোন আসামীকে কবে কখন কোন দেশে গৃহপরিচারিকা সরবরাহ করা হয়েছে।
একজন নিরাপরাধ মানুষ এখানে বেগম জিয়ার সঙ্গে জেল খাটলেও কোন মানবাধিকার সংস্থা আজ পর্যন্ত সোচ্চার না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় বেগম জিয়ার সেবা এবং পরিচর্যার জন্য চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজের ব্যবস্থা করে দেয়ার বিষয়টিও এ সময় উল্লেখ করেন।
কোন সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের জন্য এসব সুবিধা প্রদান করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অথচ তারা যুদ্ধাপরাধীদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, জাতির পিতার হত্যাকারীদের যারা পুরস্কৃত করেছে।
সরকার প্রধান বলেন, এতিমের টাকা চুরি করে সে (খালেদা জিয়া) এখন কারাগারে। ১০ বছরের মধ্যে বিএনপির আইনজীবীরা তাঁকে নিরাপরাধ প্রমাণ করতে না পারলেও এখন চিৎকার দিয়ে বলে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবে।
……….দৈনিক কালের খবর