শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ : তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের। কালের খবর ছোট চাকরি করেও কোটিপতি মানিকগঞ্জের শামীম। কালের খবর যশোরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯৫ টি। কালের খবর খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষে নিহত ৩, গুলিবিদ্ধ ৪। কালের খবর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে তিন আমলেই দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন নুরে আলম ভূঁইয়া। কালের খবর অবৈধ ৩৪৯১টি ইটভাটা বন্ধ করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা। কালের খবর নবীনগর সরকারি কলেজে ডিজিটাল হাজিরা চালু। কালের খবর দীর্ঘ ১৬ বছর পর দেশে আসলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি নেতা ইব্রাহিম। কালের খবর মন্দিরের হিসাব নিয়ে দ্বন্ধে মাদারীপুরে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা : দোষীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন। কালের খবর জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না : দুদু। কালের খবর
বিদ্যুৎ খাতের দুর্বৃত্তদের বিচার করতে হবে। কালের খবর

বিদ্যুৎ খাতের দুর্বৃত্তদের বিচার করতে হবে। কালের খবর

 

।। মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন, কালের খবর ।। 

গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে বিপর্যস্ত দেশের বিদ্যুৎ খাত।তিন আমলের সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি এখনো। সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে এবং তার সাথে ফেরী করে বিদ্যুৎ বিক্রির গান গাওয়া হয়েছে মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত আর তার সরবরাহ কত তার হিসাব ও খোদ পিডিবি কাছে নেই। সৈরচার সরকারের আমলে দুর্নীতি গ্রস্থ সব খাতের মধ্যে অন্যতম খাত হলো বিদ্যুৎ খাত। এবং গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। এর মধ্যে শেষ দুই মেয়াদে তার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নসরুল হামিদ বিপু।তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে দেশের ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময় শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই ৮২টি বেসরকারি/ আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউচার) এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিশোধের নামে লুটপাট হয়েছে মোট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা । এছাড়া এখন ও পরিশোধের বকেয়া আছে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ এই টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এবং এই ক্যাপাসিটি চার্জ পিরিশোধ করতে হয়েছে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে।এই ক্ষেত্রে বিশেষ আইনের কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হয়নি।এই প্রতিবেদনে ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লখ করা হয়। আইএমইডির এ প্রতিবেদনে, খাতটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।আইএমইডি আরো বলছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে চীন ও ভারতীয় সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণেও চরম অনিয়ম এবং লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন তো দুরের কথা উল্টো গত বছর বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
গত ১৫ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকার প্রাইভেট সেক্টরের সহযোগিতায় যে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলনির্ভর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়েছিল, প্রাইভেট সেক্টরে ৫৮টি ফার্মকে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত নানা উৎপাদন ক্ষমতার রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সরাসরি লাইসেন্স দেওয়া হয় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। কোনো স্বীকৃত টেন্ডার-প্রক্রিয়া ছাড়াই এসব ফার্মকে বাছাই করা হয়েছিল ইমার্জেন্সি মোকাবিলার কথা বলে। আদালতে মামলা করে যাতে ওই বাছাই-প্রক্রিয়াকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, সে জন্য সরকার ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে, এবংএসব ফার্ম নির্বাচনে যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চালানো হয়েছিল। এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। এর বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রতিকার পাওয়া যায়নি।এই ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ এখনো চালু রয়েছে। ২০০৯ সালে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচ ধরা হয়েছিল ১৬-২০ টাকায় এবং তখন কয়লা ও এলএনজির আর্ন্তজার্তিক বাজার দর অনেক কম ছিল।কিন্তু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ক্রয় না করলে ওগুলোকে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দেওয়ার ব্যবস্থাটা কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারের জন্য বড়সড় বোঝায় পরিণত হয়, অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিলের সময় হলেও লবিং করে ওই সব প্ল্যান্টের মালিকেরা তাদের চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিয়েছেন।এর মধ্যে সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণসহ মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ রূপপুর প্ল্যান্ট ২০২৪ সালে উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশ সেখান থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে সরকার দাবি করেছে।
এখন দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শীতকালে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে এবং গ্রীষ্মকালে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াটে। ইতিমধ্যে এলএনজি ও তেলের আন্তর্জাতিক দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের এলএনজি ও তেল আমদানির সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো ২০২২ সালের জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং ফার্নেস অয়েলচালিত প্ল্যান্টগুলোতেও উৎপাদন-সংকোচনের নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে এলএনজিচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টও পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না আমদানির সক্ষমতা না থাকায়। প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে না পারায়, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে উৎপাদনে এসে যাওয়া সত্ত্বেও এই দুটি প্ল্যান্ট ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না। এসব এলএনজি এবং কয়লাচালিত প্ল্যান্টকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে পিডিবিকে। বিভিন্ন পত্রিকার সুত্রে ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকবে’। এই নিউজ আইটেমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ বাদেই বিদ্যুতের ইনস্টল্ড ক্যাপাসিটি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২৬৩ মেগাওয়াট। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হবে আরও অন্তত সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট, ফলে ওই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৮ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। অথচ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা যদি আগামী দুই বছরে গড়ে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বেড়েও যায়, তারপরও ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশই অব্যবহৃত থেকে যাবে। ফলে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোকে যে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হবে তার বোঝা বহন করা পিডিবির জন্য ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ হয়ে উঠবে। এটি কমাতে চাইলে যেগুলো বছরের পর বছর বসে থাকছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু সরকার এগুলো চালু রাখছে, কারণ তারা দেখাতে চেয়ে যেতাদের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
রামপালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, বাঁশখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে সামিটের ৫৮৩ মেগাওয়াট, ইউনিক গ্রুপের ৬০০ মেগাওয়াট, ভারতের রিলায়েন্সের ৭৫০ মেগাওয়াট, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং সর্বোপরি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের এত বড় ‘ভুল প্রাক্কলন’কাদের স্বার্থে করা হয়েছে? যারা করেছে তারা দেশকে একটি মহাবিপদে ঠেলে দিয়েছে।পিডিবির এক তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ সংস্থাটির ব্যয় ৭৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৫১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এক বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেসরকারি প্ল্যান্ট (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি।বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা এক দশকে অনেকটাই বেড়েছে। এ সময় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বিদ্যুৎ খাত। উল্টো বড় আকারের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেকগুলো। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক বড় করপোরেটের দখলে চলে গেছে। আর এক দশকে শীর্ষ ১২টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৬৮ শতাংশ।দেশের বাজেটের মোট বার্ষিক ভর্তুকি বরাদ্দের ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়। সিপিডির ধারণা, এই বরাদ্দের বেশিরভাগই পরিশোধ করা হয় ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে।


চাহিদা ও যোগানের বিবেচনায় এত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এখন এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সত্য যে, দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আপৎকালীন অর্থাৎ ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো এ বিশাল অঙ্কের টাকা গুটিকয় মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার কোনো সরকার রাখে কি না? কেননা এতকিছুর পরও দেশে বিদ্যুৎ সংকট কাটেনি।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়; এর বিপরীতে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪১ শতাংশ বেশি আছে। বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে, তা দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করা যাবে। এর মধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন করা আর উচিত হবে না। এ খাতে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্র বড় ধরনের ক্ষতির সম্মক্ষীন হয়েছে। মানুষ এ বোঝা আর কতদিন বহন করবে?রাষ্ট্র সংষ্কারের অংগীকার নিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, তাই বিশেষজ্ঞ কমিটি করে এই খাতে নীতি ও কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে, বাতিল করতে হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০বা দায়মুক্তি আইন, যা দিয়ে গত ১৪ বছরে দরপত্র ছাড়া বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে এবং খুব দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে এই খাতের দুর্বীত্তদের,এবং থামাতে হবে দুর্বৃত্তায়ন। আর তা না হলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে।
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।
Email : msislam.sumon@gmail.com
বিদ্যুৎ খাতের দুর্বৃত্তদের বিচার করতে হবে
মোঃ সহিদুল ইসলাম সুমন

গত ৫ আগষ্ট ক্ষমতাচ্যুত ও পলাতক স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চরম দুর্নীতি, অনিয়ম ও লুটপাটে বিপর্যস্ত দেশের বিদ্যুৎ খাত।তিন আমলের সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট বলা হলেও লোডশেডিং থেকে মুক্তি মেলেনি এখনো। সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না করে শুধু সংযোগ দিয়েই শতভাগ বিদ্যুতায়নের কৃতিত্ব জাহির করা হয়েছে এবং তার সাথে ফেরী করে বিদ্যুৎ বিক্রির গান গাওয়া হয়েছে মহান জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে। এমনকি দেশে বিদ্যুতের প্রকৃত চাহিদা কত আর তার সরবরাহ কত তার হিসাব ও খোদ পিডিবি কাছে নেই। সৈরচার সরকারের আমলে দুর্নীতি গ্রস্থ সব খাতের মধ্যে অন্যতম খাত হলো বিদ্যুৎ খাত। এবং গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। এর মধ্যে শেষ দুই মেয়াদে তার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নসরুল হামিদ বিপু।তিন মেয়াদে বিদ্যুৎ খাতে মোট ব্যয় হয়েছে দেশের ২ হাজার ৮৩০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার বিবেচনায় (১ ডলার সমান ১১৮ টাকা) বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। একই সময় শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই ৮২টি বেসরকারি/ আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউচার) এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিশোধের নামে লুটপাট হয়েছে মোট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা । এছাড়া এখন ও পরিশোধের বকেয়া আছে আনুমানিক সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা।অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে শুধু সক্ষমতা দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ এই টাকা নিয়ে গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। এসব কেন্দ্রের বেশিরভাগের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা কিংবা তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। এবং এই ক্যাপাসিটি চার্জ পিরিশোধ করতে হয়েছে মার্কিন ডলারের মাধ্যমে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক গত বছরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয়েছে।এই ক্ষেত্রে বিশেষ আইনের কারণে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হয়নি।এই প্রতিবেদনে ক্যাপাসিটি চার্জকে ‘লুটেরা মডেল’ হিসেবে উল্লখ করা হয়। আইএমইডির এ প্রতিবেদনে, খাতটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।আইএমইডি আরো বলছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে চীন ও ভারতীয় সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এই প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং ভূমি অধিগ্রহণ ও রক্ষণাবেক্ষণেও চরম অনিয়ম এবং লুটপাটের অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন তো দুরের কথা উল্টো গত বছর বিদ্যুৎ খাতের লুটপাটের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়।
গত ১৫ বছরে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। সব কেন্দ্রই কোনো ধরনের দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংক্রান্ত বিশেষ আইনে অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর মহাজোট সরকার প্রাইভেট সেক্টরের সহযোগিতায় যে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলনির্ভর রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’ নিয়েছিল, প্রাইভেট সেক্টরে ৫৮টি ফার্মকে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলচালিত নানা উৎপাদন ক্ষমতার রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য সরাসরি লাইসেন্স দেওয়া হয় জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। কোনো স্বীকৃত টেন্ডার-প্রক্রিয়া ছাড়াই এসব ফার্মকে বাছাই করা হয়েছিল ইমার্জেন্সি মোকাবিলার কথা বলে। আদালতে মামলা করে যাতে ওই বাছাই-প্রক্রিয়াকে কেউ চ্যালেঞ্জ করতে না পারে, সে জন্য সরকার ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ জারি করে দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে, এবংএসব ফার্ম নির্বাচনে যে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও দলীয়করণের মহোৎসব চালানো হয়েছিল। এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। এর বিরুদ্ধে কোনো আইনি প্রতিকার পাওয়া যায়নি।এই ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ এখনো চালু রয়েছে। ২০০৯ সালে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোর উৎপাদিত বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচ ধরা হয়েছিল ১৬-২০ টাকায় এবং তখন কয়লা ও এলএনজির আর্ন্তজার্তিক বাজার দর অনেক কম ছিল।কিন্তু রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ক্রয় না করলে ওগুলোকে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দেওয়ার ব্যবস্থাটা কয়েক বছরের মধ্যেই সরকারের জন্য বড়সড় বোঝায় পরিণত হয়, অনেকগুলো রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্ল্যান্টের সঙ্গে সরকারের চুক্তি বাতিলের সময় হলেও লবিং করে ওই সব প্ল্যান্টের মালিকেরা তাদের চুক্তি নবায়ন করিয়ে নিয়েছেন।এর মধ্যে সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাশিয়ার ১২ বিলিয়ন ডলার ঋণসহ মোট ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মাণ রূপপুর প্ল্যান্ট ২০২৪ সালে উৎপাদনে গেলে বাংলাদেশ সেখান থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হবে বলে সরকার দাবি করেছে।
এখন দেশের বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে শীতকালে ১১ হাজার থেকে ১২ হাজার মেগাওয়াটে এবং গ্রীষ্মকালে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াটে। ইতিমধ্যে এলএনজি ও তেলের আন্তর্জাতিক দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের এলএনজি ও তেল আমদানির সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলো ২০২২ সালের জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এবং ফার্নেস অয়েলচালিত প্ল্যান্টগুলোতেও উৎপাদন-সংকোচনের নীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। একই সঙ্গে এলএনজিচালিত কয়েকটি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টও পুরোপুরি ব্যবহার করা যাচ্ছে না আমদানির সক্ষমতা না থাকায়। প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে না পারায়, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট ইতিমধ্যে উৎপাদনে এসে যাওয়া সত্ত্বেও এই দুটি প্ল্যান্ট ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না। এসব এলএনজি এবং কয়লাচালিত প্ল্যান্টকেও ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে পিডিবিকে। বিভিন্ন পত্রিকার সুত্রে ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৬০ শতাংশ অব্যবহৃত থাকবে’। এই নিউজ আইটেমের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, ২০২৩ সালের জুলাই মাসে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ বাদেই বিদ্যুতের ইনস্টল্ড ক্যাপাসিটি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ২৬৩ মেগাওয়াট। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হবে আরও অন্তত সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট, ফলে ওই সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়াবে ৩৮ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটেরও বেশি। অথচ ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে গড়ে সাড়ে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এই চাহিদা যদি আগামী দুই বছরে গড়ে প্রতিবছর ১০ শতাংশ হারে বেড়েও যায়, তারপরও ২০২৫ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৬০ শতাংশই অব্যবহৃত থেকে যাবে। ফলে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ প্ল্যান্টগুলোকে যে ‘ক্যাপাসিটি চার্জ’ দিতে হবে তার বোঝা বহন করা পিডিবির জন্য ‘মারাত্মক বিপজ্জনক’ হয়ে উঠবে। এটি কমাতে চাইলে যেগুলো বছরের পর বছর বসে থাকছে সেগুলো অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। কিন্তু সরকার এগুলো চালু রাখছে, কারণ তারা দেখাতে চেয়ে যেতাদের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
রামপালের ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, বাঁশখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে সামিটের ৫৮৩ মেগাওয়াট, ইউনিক গ্রুপের ৬০০ মেগাওয়াট, ভারতের রিলায়েন্সের ৭৫০ মেগাওয়াট, মহেশখালীর মাতারবাড়ীর ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং সর্বোপরি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় যুক্ত হতে যাচ্ছে। চাহিদা ও সরবরাহের এত বড় ‘ভুল প্রাক্কলন’কাদের স্বার্থে করা হয়েছে? যারা করেছে তারা দেশকে একটি মহাবিপদে ঠেলে দিয়েছে।পিডিবির এক তথ্য মতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ সংস্থাটির ব্যয় ৭৪ হাজার ২২৩ কোটি টাকা, যা ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৫১ হাজার ৮৭৯ কোটি টাকা। এক বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ২২ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে বেসরকারি প্ল্যান্ট (আইপিপি) থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পিডিবির ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭৭ শতাংশ বেশি।বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীলতা এক দশকে অনেকটাই বেড়েছে। এ সময় রেন্টাল-কুইক রেন্টাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বিদ্যুৎ খাত। উল্টো বড় আকারের ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারের (আইপিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে অনেকগুলো। এতে বিদ্যুৎ খাত গুটিকয়েক বড় করপোরেটের দখলে চলে গেছে। আর এক দশকে শীর্ষ ১২টি গ্রুপ/কোম্পানির পকেটে গেছে ক্যাপাসিটি চার্জের প্রায় ৬৮ শতাংশ।দেশের বাজেটের মোট বার্ষিক ভর্তুকি বরাদ্দের ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ খাতে ব্যয় হয়। সিপিডির ধারণা, এই বরাদ্দের বেশিরভাগই পরিশোধ করা হয় ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে।
চাহিদা ও যোগানের বিবেচনায় এত বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়া ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। এখন এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা সত্য যে, দলীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা দিতে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। আপৎকালীন অর্থাৎ ২-৩ বছরের জন্য রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হলেও দফায় দফায় এর মেয়াদ বাড়িয়ে সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎ না নিয়েও বিপুল অঙ্কের টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে। প্রশ্ন হলো এ বিশাল অঙ্কের টাকা গুটিকয় মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার অধিকার কোনো সরকার রাখে কি না? কেননা এতকিছুর পরও দেশে বিদ্যুৎ সংকট কাটেনি।সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি নয়; এর বিপরীতে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করার সক্ষমতা রয়েছে।বর্তমানে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৪১ শতাংশ বেশি আছে। বর্তমানে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা আছে, তা দিয়ে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা পূরণ করা যাবে। এর মধ্যে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন করা আর উচিত হবে না। এ খাতে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্তের কারণে ইতোমধ্যেই রাষ্ট্র বড় ধরনের ক্ষতির সম্মক্ষীন হয়েছে। মানুষ এ বোঝা আর কতদিন বহন করবে?রাষ্ট্র সংষ্কারের অংগীকার নিয়ে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষ নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে, তাই বিশেষজ্ঞ কমিটি করে এই খাতে নীতি ও কাঠামো সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজাতে হবে, বাতিল করতে হবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০বা দায়মুক্তি আইন, যা দিয়ে গত ১৪ বছরে দরপত্র ছাড়া বিভিন্ন চুক্তি করা হয়েছে এবং খুব দ্রুত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে এই খাতের দুর্বীত্তদের,এবং থামাতে হবে দুর্বৃত্তায়ন। আর তা না হলে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হবে।
লেখক : অর্থনৈতিক বিশ্লেষক।
Email : msislam.sumon@gmail.com
**

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com