বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩১ অপরাহ্ন
আক্তার হোসেন ভূইয়া, মুরাদনগর (কুমিল্লা), কালের খবর : কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘বন্ধন’ সংগঠনের একদল তরুণের এখন রুটিন কাজ মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে রক্ত দান। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা মানুষের পাশে থাকতে গড়ে তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। রক্তদানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাঁরা ছুটে বেড়ান মানুষের জীবন বাঁচাতে। এমনও হয়েছে রোগীর নামধাম জানেন না, রক্ত দিয়ে চলে এসেছেন। এ রকম একটি সংগঠন ‘বন্ধন’।
বন্ধন স্বেচ্ছায় রক্ত দান সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম শোনান তাঁদের এক হওয়ার পটভূমি। পড়াশোনা শেষে এখন একটি কম্পিউটার দোকান পরিচালনা করছেন সে। সাইফুল বললেন, ‘আগে থেকে কারও সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন সময় রক্ত দিতে গিয়ে পরিচয়। এরপর ফেসবুকে কথাবার্তা। একটা সময় চিন্তা করলাম, নিজেদের একটা প্ল্যাটফর্ম দরকার। এরপর সবার সঙ্গে আলোচনা। অবশেষে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টম্বর যাত্রা শুরু।’
মুরাদনগরে রক্তদাতা সংগঠনগুলোর মধ্যে বন্ধনের কার্যক্রম বেশি বিস্তৃত। ফেসবুকে এই সংগঠনের অনুসারী (ফলোয়ার) দুই লাখের বেশি। এখন পর্যন্ত তাঁরা ১১শ ৭১ জনকে রক্ত দিয়েছে।
কম্পিউটার দোকান সামাল দিয়ে রক্তের চাহিদা কিভাবে মেটান? মুখে হাসি টেনে সাইফুল বলেন, ‘আমাদের প্রতি মানুষের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি। সামাল দেওয়া কঠিন বটে, তবে পারছি তো। কারণ, আমাদের বড় শক্তি সংগঠনের সদস্য ও ফেইসবুক ফলোয়াররা। নিজেদের মধ্যে ম্যানেজ না হলে ফেসবুকে রক্তের আহ্বান পোস্ট করলেই ফলোয়াররা যোগাযোগ শুরু করেন। এরপর আমাদের নির্দেশনা অনুযায়ী রক্তদাতা পৌঁছে যান রোগীর কাছে। অবশ্য রোগীর বিস্তারিত জেনে তারপর আমরা উদ্যোগ নিই।’
মুরাদনগর উপজেলার বাইরে রক্ত দিতে যান? সাইফুল বললেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে কুমিল্লা জেলা সদর ও ঢাকায়ও রক্ত দিতে যান আমাদের সদস্যরা। তাছাড়া আমাদের ফেইসবুক ফলোয়ার সব জেলায় রয়েছেন। এই কাজে কোনো ছুটির দিন নেই। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টাই রক্তের চাহিদা থাকে। যখন-তখন ফোন আসে। পালা করে আমাদের কেউ না কেউ সারা দিন অনলাইনে সক্রিয় থাকেন। চাহিদা পাওয়ামাত্রই তা পূরণের জন্য তৎপর হয়ে পড়েন।’
স্বেচ্ছায় রক্ত দান সংগঠন বন্ধনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ৭ জন হলেও বর্তমানে সদস্য সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা হলেন, সাইফুল ইসলাম, হাসনাত জামান, সাউন, তুষার,খিজির, ফাহিম ও সুমন।
সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রথমেই সহকার্যকরী সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কর্মদক্ষতায় নির্বাচিত হন কার্যকরী সদস্য। তাঁদের রয়েছে ‘সুপার ডোনার’ নামে রক্তদাতাদের একটি তালিকা। যেখানে ৫০ জন সদস্য রয়েছেন। তাঁরা দেশের যে কোনো প্রান্তে গিয়ে রক্ত দিতে প্রস্তুত।
রক্তদান করা ছাড়াও শীতবস্ত্র বিতরণ, ব্লাড গ্রুপিং, রক্তদানে উৎসাহিত করা ও থ্যালাসেমিয়া মুক্তির লক্ষ্যে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন, অসহায় রোগীদের সাহায্য করা ও বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণ। এ পর্যন্ত সচেতনতামূলক ১০০টির বেশি ক্যাম্পেইন করা হয়েছে।