সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই-আগষ্টে শহীদদের ছাড়া আর কারো প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। কালের খবর পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল কাসাভা। কালের খবর চবি এক্স স্টুডেন্টস ক্লাব ঢাকা এর সভাপতি ব্যারিস্টার ফারুকী এবং সাধারণ সম্পাদক জিএম ফারুক স্বপন নির্বাচিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পন্ন। কালের খবর সীতাকুণ্ড হবে বাংলাদেশের অন্যতম মডেল উপজেলা : আনোয়ার সিদ্দিক চৌধুরী। কালের খবর মাটিরাঙ্গার গুমতিতে মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় মহান বিজয় দিবসে বিএনপির শোভাযাত্রা ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। কালের খবর মুরাদনগরে সামাজিক সংগঠনের শীতের কম্বল বিতরণ। কালের খবর বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ‘স্বাধীনতা সোপানে’ শ্রদ্ধা নিবেদন। কালের খবর জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন। কালের খবর
ডেমরার ঐতিহ্য বাঁশের খাঁচি বিলুপ্তির পথে

ডেমরার ঐতিহ্য বাঁশের খাঁচি বিলুপ্তির পথে

 

 

ডেমরার ঐতিহ্য বাঁশের খাঁচি বিলুপ্তির পথে

পেশা ছাড়ছেন কারিগররা
এম আই ফারুক আহমেদ,
ঢাকার ডেমরায় অস্তিত্ব সংকটে পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন বাঁশের তৈরি মাছের খাড়ি বা খাঁচির কারিগররা। সরকারি নজরদারি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এখন রীতিমতো বিলুপ্তির পথে এখানকার ঐতিহ্যবাহী এ কুটির শিল্পটি। রোজগার কমে যাওয়ায় নতুন কারিগর তৈরি হচ্ছে না। ফলে এ শিল্প আর টিকে থাকতে পারবে না বলে মনে করছে এলাকার সচেতন মহল। তবে এ পেশা থেকে চলে যাওয়া কারিগররা বলছেন, যথাযোগ্য সুবিধাসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অবশ্যই তারা এ পেশায় ফিরে আসবেন।

সরেজমিন জানা যায়, জীবনের শুরু থেকেই বাঁশের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক এখানের কারিগরদের। যুগ যুগ ধরে বাঁশ দিয়ে মাছের খাঁচি বানাচ্ছেন তারা। এটিই তাদের পেশা ও নেশা। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে কাটা বাঁশের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে ডেমরায় জীবন পার করে দিচ্ছেন অর্ধশতাধিক কারিগর। ডেমরা বাউলের বাজারসংলগ্ন কায়েতপাড়া ও দেইল্লা পশ্চিমপাড়ায় এ কারিগরদের স্থায়ী বসবাস। দীর্ঘ ৮০ বছরেও ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি তাদের। তবু এখনো এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছেন কিছু প্রবীণ কারিগর। ৬৭ বছর বয়সি কারিগর সম্ভু নাথ মালাকার যুগান্তরকে জানান, বর্তমানে ভালো নেই খাঁচি কারিগররা। অবশ্য আগেও ভালো ছিলেন না। তবে এর মাঝেও কাজের ভেতরে সুখ খুঁজে নিয়েছেন তারা।

কায়েতপাড়ায় একইসঙ্গে কাজ করছেন তার বড় ভাই ভোলানাথ মালাকার (৭০)। তাদের বাবা মৃত বিষাম্বর মালাকার ও দাদা দাগু মালাকার একই কাজ করতেন। এ ছাড়া একই এলাকার তপন, মনোরঞ্জন, সত্যবান কবিরাজ, কালাচান মালাকার, নুর ইসলাম, বিপ্লব সরকার ও সামসুদ্দিনসহসহ আরও কারিগর এ কাজ করেন। এ গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই মিলে এ কাজ করছেন বলে জানা গেছে। পরিবারের ছেলেমেয়েরাও সাহায্য করে খাঁচি তৈরিতে।

এদিকে দেইল্লা পশ্চিমপাড়া এলাকায় সমীর কুমার সরকার (৫৫), শিবু (৪০), গণেশ, আশানন্দ, প্রদীপসহ আরও কয়েকটি পরিবার মাছের খাড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। অবশ্য এখানে বাঁশ ও বেতের অন্যান্য সামগ্রীও তৈরি হয়। প্রকৃতপক্ষে বংশানুক্রমেই এ কাজ করে আসছেন এখানকার কারিগররা।

দেখা গেছে, রাস্তার পাশে মাটিতে বসে বাড়ির উঠানে কিংবা বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া কাঁচা রাস্তা অথবা বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে বিভিন্ন আকারের খাঁচি তৈরি করছেন কারিগররা। বরাক ও ওরা বা জাইত বাঁশ দিয়ে এ খাঁচি তৈরি করা হয়। এখন বাঁশের দাম বেশি। এ ছাড়া আনুষঙ্গিক উপকরণ দা-বঁটি, করাত, চাকু, সুতলি, তার ও রঙসহ প্রায় সব কিছুর বাজার চড়া। উৎপাদন খরচ এখন বেশি হলেও খাঁচির দাম আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। বাজার ভেদে আড়াই হাত খাঁচি আগে বিক্রি হতো ৫০০ টাকায়, যা এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। ৬ হাত খাঁচি আগে বিক্রি হতো ৫ হাজার টাকায় বর্তমানে বাজার প্রতিযোগিতায় সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ১৫ হাত খাড়ি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। কারণ এ খাড়ি বানানো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে অর্ডারভিত্তিক বড় খাড়ি বানাতেও তারা পারদর্শী।

জানা যায়, তাদের তৈরি খাঁচি বিক্রমপুর, মুন্সীগঞ্জ, শ্রীনগর, মাওয়া, সোনারগাঁ-মোগরাপাড়া, কুমিল্লার মাদাইয়া, কেরানীগঞ্জের আটি, আরিচা, চিটাগাং রোড, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকার এসে নিয়ে যান। অনেক সময় অর্ডার করা খাঁচি সময়মতো ক্রেতার কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে জানান প্রবীণ কারিগর হরিগোপাল (৬৩)। কিন্তু বর্তমানে শীতলক্ষ্যা ও বালু নদে মাছ না থাকায় এবং ডেমরায় মাছ চাষ কমে যাওয়ায় এসব এলাকায় খাঁচি বিক্রি হচ্ছে না। সম্ভু মালাকার জানান, ৫৫ বছর আগেও রোজগারে ভালোই চলত সবার সংসার। এ কাজ করে সবাই ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে তাদের সন্তানরা অন্য কাজ করেও সবার রোজগারে সংসার চলে না। বইতে হচ্ছে ঋণের বোঝা। কারণ বর্তমানে বাজার দখল করেছে প্লাস্টিকের ফলের খাঁচি, ককশিট ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপকরণ। ককশিট দিয়ে প্যাকেটজাত করা হয় মাছ। তাছাড়া আড়তে প্লাস্টিকের ঝুড়ি, ড্রাম ব্যবহার করা হয়।

মাছের প্রাকৃতিক গুণাগুণ বজায় রাখতে এসব প্লাস্টিক সামগ্রী অপসারণ করে মাছ সরবরাহে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহারের দিকে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান এখানকার খাঁচি কারিগররা। এতে টিকে থাকতে সহায়ক হবে ডেমরার এ ঐতিহ্যবাহী খাঁচিশিল্প।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান আতিক বলেন, বাঁশের খাঁচিতে মাছ রাখা উত্তম। বর্তমানে ছোট পিকআপে মাছ বহন করার ফলেও খাঁচির ব্যবহার কমেছে। খাঁচির প্রচলনে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com