সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ অপরাহ্ন
কয়েকদিন ধরে জেঁকে বসেছে প্রচণ্ড শীত। সকাল ও সন্ধ্যার পর থেকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে কাঁপছে জনপদ। উত্তর-পূর্ব কোণের হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়ছে মানুষ-প্রাণীকুল। এতে জনজীবন নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। মঙ্গলবার থেকে শনিবার সূর্যের দেখা না মেলায় বিপর্যস্ত মানুষ। পুরো ডেমরা বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি কষ্টের মধ্যে রয়েছে প্রাণীকুলও। কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও মঙ্গলবার থেকে তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। মাত্রাতিরিক্ত শীতে মানুষের মাঝে কোল্ড ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দিসহ বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলাকার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীর ভিড় বাড়ছেই। কনকনে ঠান্ডায় রাইনো ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন ডেমরার বাশেপুল এলাকার মেডি হেলথ্ কেয়ার হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।
সরেজমিন দেখা গেছে, কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। এ সুযোগে গরম কাপড়ের দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে কষ্টে কাটাচ্ছেন গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ঘন কুয়াশায় ভোরে হেডলাইট জ্বালিয়ে খুব সাবধানে গাড়ি চালাতে হচ্ছে চালকদের। অফিসগামী মানুষদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিতাস গ্যাসে কর্মরত ও ডেমরার তিতাস কোয়ার্টারে বসবাসরত ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম।
দেখা গেছে, শ্রমজীবী মানুষের দুর্দশা এখন চরমে। প্রচণ্ড ঠান্ডায় সকালে ঘরের বাইরে বের হতে পারছেন না তারা। বেলা করে বের হলে কাজ মিলছে না তাদের। শীতের সঙ্গে যোগ হচ্ছে ক্ষুধার কষ্টও। শৈত্যপ্রবাহ ও ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে হতদরিদ্র-ছিন্নমূল মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বড়ভাঙ্গা কোদালদোয়া এলাকার দিনমজুর মজনু, আলমাস, সামসুল, আব্দুল করিমসহ অনেকেই বলেন, শীতের দিনে কাজ এমনিতেই কম। কারণ সকাল শুরু হয় দেরিতে আর বেলা শেষ হয় দ্রুত। তাই মজুরিও কম। অভাব-অনটনে লেপ বানানোর টাকা জোগাড় হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতেও বেসামাল হয়ে পড়ছি।
অন্যদিকে শৈত্যপ্রবাহে বিনষ্ট হচ্ছে ডেমরার চরাঞ্চলের বোরো বীজতলা ও আলুসহ বিভিন্ন শীতকালীন সবজির ক্ষেত। ফসল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। হাড় কাঁপানো শীতে রেহাই নেই পশু-পাখিদেরও। এ বছর ডেমরায় শীতার্ত মানুষের জন্য সরকারি-বেসরকারি সাহায্য আসেনি। তবে এখানকার শীতার্তদের দুর্ভোগ দূর করতে শুধু সরকারি সাহায্যই যথেষ্ট নয়। বেসরকারি উদ্যোগও জরুরি বলে মনে করছেন অভিজ্ঞরা। তবে সচেতন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ডেমরার কিছু বেসরকারি সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন বলে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ডেমরার বিএইচএস ৯০ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি নামের একটি স্বেচ্ছাসেবক সামাজিক সংস্থার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আসাদুর রহমান মিলন বলেন, প্রতিবছরই আমরা শীতকালে হতদরিদ্রদের মাঝে কমবেশি শীতবস্ত্র বিতরণ করে থাকি। আমাদের সঙ্গে এলাকার অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মধ্যে ঘাসফুল, সাংবাদিক ফারুক ফাউন্ডেশন, ডেমরা যুব উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, ইচ্ছে কুড়ি, হাসির প্রদীপ, গোলাম মোস্তফা ফাউন্ডেশনসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন সমাজ সেবায় একযোগে কাজ করে। বাকি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়কারী হিসাবেও তাদের নিয়ে তিনি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
ডিএসসিসির ৬৭, ৬৮ ও ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইব্রাহিম, মাহমুদুল হাসান পলিন ও সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে যতটুকু সম্ভব শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র দিয়েছি। যা দিয়ে সবার প্রয়োজন মেটেনি। গত মাসেও এলাকার হতদরিদ্রের মাঝে ৩ শতাধিক শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সামর্থ্যবানরা যদি একজন করে হতদরিদ্রকে শীতবস্ত্র দান করেন তাহলেও শীতার্থদের কষ্ট অনেকটা লাঘব সম্ভব।