রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন
ডেমরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম। ভবনের অধিকাংশ জায়গায় ফাটল ধরায় যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সংকট রয়েছে ওষুধ ও আসবাবও। কেন্দ্রের ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর এবং উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসারের জন্য কেন্দ্রের পাশেই অবস্থিত আবাসিক ভবনটিও মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ঝুঁকি নিয়েই এখানে বাস করছেন এ দুই কর্মকর্তা।
দিনের পর দিন এসব সমস্যা চলতে থাকলেও তা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন চিকিৎসাসেবা নিতে আসা মানুষজন। সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, কায়েতপাড়া গ্রামে প্রায় ৩২ বছর আগে নির্মাণ করা হয় ডেমরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রটি। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে বাস করেন নারী ও শিশুসহ দুই লক্ষাধিক মানুষ। তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যেই সরকারিভাবে এ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্র আরও জানায়, এখানে রয়েছেন অভিজ্ঞ মেডিকেল অফিসার ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস। আরও রয়েছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. আবদুল ওহাব, পরিবারকল্যাণ পরিদর্শক (ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার ভিজিটর) সুমাইয়া আক্তার, ওষুধ সংরক্ষক ও বিতরণকারী পারভিন আক্তার, অফিস সহায়ক আবদুল হকসহ ৯ নারী মাঠকর্মী। তবে বছর খানেক আগে এক মাঠকর্মী অবসর নেয়ায় সেই পদটি এখন শূন্য রয়েছে। মাঠকর্মীদের নিয়ন্ত্রক হিসেবে ফয়সাল আহম্মেদ নামে এক সুপারভাইজার রয়েছেন। কেন্দ্রটির পরিচ্ছন্নতায় যুক্ত আছেন তাহমিনা বেগম। কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নেয়ার জন্য আসেন অসংখ্য নারী-পুরুষ। এখানকার চিকিৎসকসহ অন্যদের বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ওষুধ স্বল্পতার কারণে রোগীরা ভোগান্তিতে রয়েছেন। ওষুধ নিতে এলেও দুর্ঘটনার আশংকায় ভবনের ভেতরে ঢুকতে ভয় পান অনেকেই। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা ভয় পান বেশি।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বালু নদ দিয়ে ভারী বালুবাহী ও মালবাহী জাহাজ-ট্রুলার গেলে ভবনটি কেঁপে ওঠে। এমনকি ফ্যামিলি ভিজিটর ও উপ-সহকারী কমিউনিটি অফিসারের বাসভবনেও কম্পন অনুভূত হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভবনটি দেড় বছর আগে কিছুটা সংস্কার হলেও সমস্যাটি দীর্ঘদিনের।
সরেজমিন পরিদর্শনে আরও দেখা যায়, ৭ কক্ষের ভবনের একটি কক্ষেও বৈদ্যুতিক পাখা নেই। এতে চলমান প্রচণ্ড দাবদাহে নাভিশ্বাস উঠেছে চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, রোগী ও স্বজনদের। কেন্দ্রে আসা রোগীসহ প্রসূতি মায়েরা অতিরিক্ত গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অসুস্থ হচ্ছেন চিকিৎসকসহ অন্যরাও।
এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের কাছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করার আবেদন জানান বেশ কয়েকজন রোগী। তারা বলেন, দুর্বল ভবনটি পুনর্নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। এতে যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে পর্যায়ক্রমে পাখাগুলো অচল হয়ে পড়ে। সেগুলো আবার তেজগাঁও অফিসে জমা দেয়া হলেও নতুনভাবে পাখাগুলো আর এ কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। এখানকার আসবাবের মধ্যে কর্মকর্তাদের টেবিল-চেয়ার, আলমারিসহ চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় আসবাবগুলোও প্রায় অকেজো। ফলে মূল্যবান কাগজ, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জামাদিসহ সব মালামাল অরক্ষিত পড়ে থাকে।
এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাহিদার তুলনায় ওষুধ সরবরাহ হচ্ছে না। এতে নিত্যদিন ভোগান্তিতেই থাকছেন রোগীরা। যদিও ডেমরা ইউনিয়নে হতদরিদ্রের সংখ্যা বেশি। অধিকাংশ মানুষ বাজারের দামি ওষুধ কিনে সেবন করতে পারেন না। তাদের একমাত্র ভরসা এ স্বাস্থ্য কেন্দ্র। কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরুর দিকে বিভিন্ন রোগের প্রায় ৫৫ কেজি ওষুধের বাক্স আসত এখানে। পর্যায়ক্রমে সেই বাক্স ১৫-১৬ কেজিতে নেমে এসেছে। বর্তমানে খোলা অবস্থায় আসছে ওষুধ। তবে আগে লোকসংখ্যা কম থাকায় ওষুধের সংকুলান হয়ে যেত, কিন্তু এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট ওষুধ বা পদ্ধতি পর্যাপ্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব বিষয়ে মেডিকেল অফিসার ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ স্বল্পতা থাকলেও আমি আসার পর প্রত্যেক রোগী দেখে রোগ নির্ণয় করে ওষুধ দিচ্ছি। এতে বেশিরভাগ রোগী প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছেন। আগে ওষুধ না লাগলেও রোগীরা নিয়ে যেত বলে কিছুটা সমস্যা হতো। কিন্তু এখন সে সমস্যা নেই বলে তিনি দাবি করেন। তিনি আশা করেন, আসবাবের বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে এবারের বাজেটে। ঊর্ধ্বতনদের কাছে লিখিত চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যে। শিগগিরই বৈদ্যুতিক পাখাসহ সব আসবাব এসে যাবে। আর ভবনের বিষয়টি দেখবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। তিনি আরও বলেন, এখানে সুশৃঙ্খল নিয়মে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রে প্রতি মাসেই নারী-পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ, বন্ধাকরণ ও পরিবার পরিকল্পনা ভিত্তিক ২টি ক্যাম্পিং করা হয়, যা সাধারণ শ্রেণীর জন্য খুবই উপকারী। পাশাপাশি শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি বলেন, একটি সমস্যা হচ্ছে বেশিরভাগ রোগী সেবা নিতে এসে ব্যবস্থাপত্রে ভালো ওষুধ লিখে দিতে বলেন। কিন্তু আমাদের কোনো ব্যবস্থাপত্র না থাকায় সাদা কাগজে ওষুধ লিখতে হয়। ব্যবস্থাপত্র হলে ভালো হতো।
এ বিষয়ে তেজগাঁও থানার মেডিকেল অফিসার ডা. শাহনাজ খান বলেন, ডেমরা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনটি সংস্কার করা হয়েছে। তবে ভবনটি পুনর্নির্মাণ জরুরি হলে বিষয়টি দেখবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্ল্যানিং ইউনিট। তারা পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন। আর ওষুধ স্বল্পতার বিষয়টি সরকারিভাবে সমাধান আসবে। দেশব্যাপী যেভাবে ওষুধ পাঠানো হয়, ডেমরা ইউনিয়নে সেভাবেই ওষুধ পাঠানো হয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক মির্জা কামরুন্নাহার বলেন, এ বছর বাজেটে ডেমরার কেন্দ্রটি কোনো পুনর্নির্মাণের আওতায় আসেনি। বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়। বাজেটে সংস্কারের আবেদন দেয়া হয়েছে। পুনর্নির্মাণের বিষয়টি সামনে বিবেচনা করা হবে। তাছাড়া নতুন ভবন করতে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনটি পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাবে। ওখান থেকে কর্তৃপক্ষের কার্যকরী পদক্ষেপেই এ সমস্যার সব সমাধান হতে পারে।