রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন
কালের খবর : সরকারি নির্দেশনা, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশ এমনকি সিটি কর্পোরেশনের কর ফাঁকি দিয়ে নির্বিঘ্নে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন কুমিল্লা জিলা স্কুলের গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক কামাল উদ্দিন।
২৬ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশ থাকলেও ওই শিক্ষকের বেনামি কোচিং সেন্টারে এখনো ক্লাস বন্ধ হয়নি। শুধু তাই নয় স্কুল থেকে কোনো শিক্ষক যাতে স্কুল বন্ধ ও স্কুল চলাকালীন কোনো ধরনের কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না হতে পারেন, তার লিখিত পরিপত্র থাকলেও তা মানছেন না ওই শিক্ষক। বরং তিনি কোচিং সেন্টারের নামে স্কুলের বাইরে আরেকটি স্কুল খুলে গত কয়েক বছরে অভিভাবকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জিলা স্কুল ও ফয়জুন্নেছা স্কুলে ভর্তির টোপ দেখিয়ে ওই শিক্ষক অভিভাবকদের সঙ্গে রীতিমত প্রতারণা করে আসছেন।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, জিলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক কামাল উদ্দিন গত ৬-৭ বছর পূর্বে নগরীর ঝাউতলা করুণাময়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে একটি বেনামি কোচিং সেন্টার গড়ে তোলেন। তার সঙ্গে নামমাত্র বেতনে ১৩ জন শিক্ষক ওই কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অর্থাৎ জিলা স্কুলের ক্লাস চলাকালীন ওই কোচিং সেন্টারে বাণিজ্য চলতে থাকে। এরপর রাতের বেলায়ও ওই শিক্ষক সশরীরে হাজির হয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত হন। প্রতি শিক্ষার্থী থেকে একমাসের বেতনসহ অগ্রিম সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা নেন কামাল উদ্দিন। বর্তমানে তার কোচিং সেন্টারে এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। জিলা ও ফয়জুন্নেছা স্কুলে ভর্তির জন্য কার্যকরী কোচিং সেন্টার মনে করে গ্রামের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে সন্তানদের ভর্তি রেখে এ কোচিং সেন্টারে ক্লাস করান অনেক অভিভাবক। এ ছাড়া একই আশায় শহরের অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভর্তি হয় এ কোচিং সেন্টারে। আর এ সুযোগটি লুফে নেন কোচিং বাণিজ্যের শিক্ষক কামাল উদ্দিন। অথচ পোষ্য কোটা থাকা সত্ত্বেও এ বছর তার সন্তান জিলা স্কুলে ভর্তির সুযোগ পায়নি!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্কুলের ক্লাসে অমনোযোগী এ শিক্ষক দু’একটি অঙ্কের সমাধান করিয়ে পুরো অধ্যায় শেষ করে দেন। ক্লাসে বিভিন্ন প্রকার দার্শনিক উক্তি করে তিনি শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তোলেন।
সরকারি নির্দেশ অমান্য করে কেন ক্লাস নিচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে শিক্ষক কামাল উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আপনার চোখ নেই, আপনি চোখ থাকলে তা দেখতেন, আমার কোচিং সেন্টার বন্ধ রয়েছে।’ ২৯ জানুয়ারি সোমবার সরেজমিনে গিয়ে আপনার কোচিং সেন্টার খোলা থাকতে দেখা গেছে- এমন প্রশ্ন করা হলেও কামাল উদ্দিন একই ধরনের উক্তি করেন। স্কুলের সুস্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও আপনি কেন ক্লাস নিচ্ছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি এ প্রতিনিধিকে অন্ধ বলে উল্লেখ করেন। এর কয়েকদিন আগে অভিভাবক পরিচয়ে তার সঙ্গে কথা হলে তিন ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নতুন ব্যাচ চালু করার কথা এ প্রতিনিধিকে বলেন।
কুমিল্লা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার বলেন, জিলা স্কুল ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। এ স্কুলের মানসম্মান নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। আমাকে শিক্ষকরা লিখিত দিয়েছেন, তারা কোনো কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকবেন না। তোমরা সাংবাদিক, সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব তোমাদের। কেউ অন্যায় করলে তার অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শরীফ নজরুল ইসলাম জানান, কামাল উদ্দিনের একটাই সমস্যা, তিনি ভর্তি কোচিং বাণিজ্যে জড়িত। জানুয়ারি ও ডিসেম্বর মাসের বিভিন্ন মিটিংয়ে এ নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়েছে। যেকোনো আইনেই স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ব্যবসা করা যাবে না। আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।