জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ২০১৩ এর বিধি ৪৫ অনুযায়ী ২০১৫ সাল থেকে প্রতি ৩ ইউনিয়নের মহিলা মেম্বরদের প্রত্যক্ষ ভোটে ‘উপজেলা সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য’ নির্বাচিত হয়ে আসছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া যখনই কোনো পদ খালি হয়েছে তখনই শূন্য পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্যান্য নির্বাচনের মতোই তফসিল ঘোষণা করে নিয়মমাফিক এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও যারা নির্বাচিত হচ্ছেন তাদের কোনো পদমর্যাদা না থাকায় সামাজিকভাবেও তাদের সে রকম দেখা হয় না।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের ১নং মহিলা ওয়ার্ড মেম্বর মঞ্জুরী আক্তার। যিনি ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি কালের খবরকে বলেন, আমরা ভোট করে নির্বাচিত হয়েছি। কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না। সমন্বয় সভায় ডাকে না। চেয়ার তো দূরের কথা সম্মানই পেলাম না। কোনো ভাতাও নেই। কোনো প্রজেক্ট নাই। কতদিন পরপর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আইনে উল্লেখ নেই। তাই তিনি প্রতি পাঁচ বছর পরপর এই নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন করার দাবি জানান।
এ ছাড়া নিজ ওয়ার্ড বা উপজেলার উন্নয়ন কাজের তদারকি ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব প্রদান, উপজেলা পরিষদে নারী সদস্যদের নির্ধারিত বসার কক্ষ বরাদ্দ, উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদের পদ মর্যাদা অনুযায়ী সম্মানী ভাতা প্রদান, উপজেলা পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সদস্য রাখা ও নির্বাচনী আয়কর টিআইএন সার্টিফিকেট জমাদানের নিয়ম বাতিলের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উপজেলা অধিশাখা) কাজী আশরাফ উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সংশ্লিষ্ট উপজেলা ডেস্ক অফিসারের (উপসচিব) সাথে আলাপের পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে উপসচিব (উপজেলা-১) নুমেরী জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের খবরকে বলেন, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ জনের (উপজেলা চেয়ারম্যান, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান) চেয়ার আছে। এর বাইরে পরিষদের সদস্য হলেন- ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানবৃন্দ এবং মহিলা ওয়ার্ড মেম্বরদের মধ্যে যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন। ইউপি চেয়ারম্যানদের যেমন উপজেলা পরিষদে বসার চেয়ার নেই, তেমনি সংরক্ষিত মহিলা সদস্যদেরও নেই। মহিলা সদস্য কারা? তিনি কোনো না কোনো ইউপির ওয়ার্ড মেম্বর। চেয়ারম্যানের জন্য যেমন ইউনিয়ন পরিষদে বসার চেয়ার আছে তেমনি মহিলা মেম্বরদেরও আছে। তারা (উপজেলা সংরক্ষিত মহিলা সদস্য) উপজেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্য। তাদের জন্য আলাদা চেয়ার থাকার সুযোগ নেই। পদমর্যাদাও বিশেষ কিছু নেই, তিনি একজন সদস্য। উপজেলার অনেক কমিটি থাকে, সেসব কমিটির সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মেম্বর হিসেবে তারা (সংরক্ষিত মহিলা সদস্য) পরামর্শ দেন বা নেয়া হয়। যেমন ব্যাংকের বোর্ড অব ডাইরেক্টরে অনেক সদস্য থাকে। তাদের জন্য কোনো আলাদা চেয়ার নেই, মিটিং হলে তাদের ডাকা হয়। মিটিং করে চলে যান। ইউপি চেয়ারম্যানদের আলাদা ভাতা দেয়া হয় না। তেমনি তাদেরও আলাদা ভাতা দেয়া হয় না। টাকা বা ভাতা পাওয়াই কী শুধু সম্মান? পরিষদের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল্যবান মতামত দিচ্ছেন তারা। মহিলা মেম্বর হিসেবে ভাতা নিচ্ছেন। এর বাইরে আলাদা ভাতার কোনো প্রয়োজন নেই।
স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনের মতোই তফসিল করে উপজেলা সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে নির্বাচন হয়। উপজেলার প্রতি ৩ ইউনিয়নের ৯ জন সংরক্ষিত নারী সদস্যের (মহিলা মেম্বর) ভোটে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হন। কিন্তু যারা নির্বাচিত হচ্ছেন সংশ্লিষ্ট উপজেলায় তাদের জন্য কোনো বসার জায়গা-ই নেই। তাদের পদবি আছে কাগজে-কলমে, কিন্তু তাদের নেই কোনো পদমর্যাদা। তাদের দেয়া হয় না কোনো সম্মানি ভাতা। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় কখনো তাদের ডাক পড়ে, কখনো বা তাদের স্মরণ করারও প্রয়োজন মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা।