কয়েক সপ্তাহ আগে ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটারের সংস্কার কাজ সমাপ্ত করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। কিন্তু হাওর এলাকার ওপর দিয়ে নির্মিত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এ সড়কের প্রথম ও শেষ অংশে সংস্কার কাজ করানো হলেও উপজেলার চুন্টা ইউপির লোপাড়া ও পাকশিমুল ইউপির ভূইশ্বর এলাকায় সড়কটির দুই কিলোমিটারের বেশি অংশে জরাজীর্ণ অবস্থা থেকেই যায়। ফলে গত ক’দিনে বর্ষায় ও হাওরের পানির ঢেউয়ের তোড়ে সড়কটিকে লোপাড়া এবং ভুইশ্বর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এতে সড়কটির সেই অংশে জরাজীর্ণ অবস্থার পাশাপাশি বর্ষার পানিতে ভাঙন শুরু হলে বিশেষ করে পাকশিমুল, চুন্টা ও অরুয়াইল এই তিন ইউনিয়নের লাখো মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ার আশংকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্থানীয় লোকজন।
এরইমধ্যে গত ১২ জুলাই রাত থেকে সড়কটির ভূইশ্বর এলাকায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা দেয়। এতে সড়কের ছোট-বড় যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। ভাটি অঞ্চলের লাখো মানুষের চলাচল ব্যবস্থা সচল রাখতে সরাইল ইউএনও এ এস এম মোসা সোমবার রাতেই সড়কটির সেই ভাঙন অংশ পরিদর্শন করেন এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন ইউএনও। পরে পাকশিমুল ইউপির চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ইউএনও নিজে উপস্থিত থেকে সড়কের সেই ভাঙন অংশে বালু-মাটি ভর্তি বস্তা ফেলে সড়ক রক্ষায় প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সরাইল এলজিইডি’র ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নিলুফা ইয়াছমিন জানান, চেয়ারম্যানের ফোনে বিষয়টি জেনে গত সোমবার তিনি সেখানে গিয়ে ভাঙন দেখে এসেছেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীকে বিষয়টি জানান তিনি। বুধবার থেকে সড়কটির সেই ভাঙন অংশে কাজ করানো হবে বলেও জানিয়েছেন প্রকৌশলী নিলুফা ইয়াছমিন।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসা জানান, সড়কটির সেই ভাঙন অংশে সোমবার রাত থেকে যদি ব্যবস্থা না নেয়া হতো, তাহলে রাতেই ভেঙে সেখানে সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। জনস্বার্থে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সরাইল উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে উপজেলার ভাটি এলাকার মানুষের যোগাযোগ সুবিধার জন্য হাওরের ওপর দিয়ে সড়কটি নির্মিত হয়। সড়কটি নির্মাণের ফলে উপজেলার ভাটি এলাকার তিন ইউনিয়নবাসীর যোগাযোগে সুবিধা হয়। সড়কটি নির্মিত হওয়ার ২/৩ বছরের মধ্যেই হাওরের পানির তোড়ে সড়কটি ভেঙে যায়। সে সময়ে সংস্কারের জন্য ৩৫/৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও দায়সারাভাবে সম্পন্ন হয় সংস্কার কাজ। ফলে অল্পদিনেই বিলীন হয়ে যায় সংস্কার কাজ, আবার বাড়তে থাকে জনদুর্ভোগ।
২০১৫ ও ২০১৬ সালের পানিতে সড়কটি ভেঙে একেবারে বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়। তৎকালীন সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধার প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে সড়কটির ভূঁইশ্বর থেকে অরুয়াইল তিতাস ব্রিজ পর্যন্ত ২.৯৪৭ কিলোমিটার জায়গার সংস্কারের জন্য ৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়।