১৯৬২-৬৮ সালে ৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি নিয়ে তৈরি করা হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রজেক্ট। যার মধ্যে নারায়গঞ্জ-৪, ঢাকা-৪ ও ঢাকা-৫ আসনের ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ি, কদমতলী, শ্যামপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অধিকাংশ (নাসিক ১নং ওয়ার্ড, ২নং ওয়ার্ড, ৩নং ওয়ার্ড, ৭নং ওয়ার্ড, ৮নং ওয়ার্ড ও ৯নং ওয়ার্ড এলাকা) ও ফতুল্লা থানার অংশ বিশেষ এলাকা রয়েছে। ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় ডিএনডি প্রজেক্ট ছিল বন্যামুক্ত। এরপর থেকে ডিএনডি প্রজেক্টে লোকজন অপরিকল্পিতভাবে ধীরে ধীরে ডিএনডিতে বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে থাকে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে থাকে।
বিএনপির শাসনামলে ঢাকা-৪ ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে সালাহউদ্দিন আহমেদ ও গিয়াস উদ্দিন আহমেদ ডিএনডি খালগুলো সংস্কার ও অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছিলেন। এরপরও ডিএনডিবাসী রক্ষা পায়নি জলাবদ্ধতা থেকে। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান জলাবদ্ধতা লাঘবে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী (বর্তমান অর্থমন্ত্রী) আ হ ম মুস্তফা কামালকে নিয়ে ডিএনডি পরিদর্শন করেন। সরকারের উচ্চ মহলে একাধিক বৈঠকও হয়।
সেই প্রেক্ষাপটে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট একনেক সভায় ৫৫৮ কোটি টাকার ডিএনডির এক মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনী চুক্তিবদ্ধ হয়। ২০১৭ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সিদ্ধিরগঞ্জে পানি নিষ্কাশনের খাল পুনঃখননের মাধ্যমে প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের এক কর্মকর্তা খোলা কাগজকে জানান, প্রথমে তড়িঘড়ি করে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীকালে দেখা যায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। প্রকল্পের ভিতরের অবৈধ স্থাপনা, স্কুল- কলেজ, মসজিদ, বিদ্যুৎ ও পানির লাইন দূরীকরণে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়ে। ফলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে আরও ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা লাগবে। এ অর্থ বরাদ্দ না হলে ডিএনডিবাসীকে জলাবদ্ধ হয়েই বসাবাস করতে হবে। তবে এ কর্মকর্তা আরও জানান, আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি সংসদ সদস্য শামীম ওসমান স্যারের প্রচেষ্টায় নতুন বরাদ্দ দেওয়া হবে। তবে আমরা এখনো কাগজে-কলমে কোনো বরাদ্দ পাইনি। অচিরেই কাক্সিক্ষত বরাদ্দ পেলে ডিএনডিকে বাসযোগ্য করার কাজ শুরু করব।
গত এপ্রিল মাস থেকে ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা শুরু হওয়ার পর তা ভয়াবহ রূপ নেয় মধ্য জুনে। পরে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান দ্রুত পানি নিষ্কাশনে পদক্ষেপ নিতে ডিএনডির সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। ফলে সেনাবিহিনী ৪৮ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ১৯ জুন নতুন দুটি পাম্প বসিয়ে পানি সেচ শুরু করে। ডিএনডি উন্নয়নের প্রকল্প পরিচালক ১৯ ইসিবির লে. কর্নেল মোহাম্মদ মাসফিকুল আলম ভূঞা (পিএসসি) বিষয়টি জানিয়েছেন। ফলে ডিএনডিবাসী ভয়াবহ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায়। তবে এখনো নিচু এলাকায় পানি রয়েছে।