সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
জনগণকে ঝুঁকিতে ফেলার মতো মুজিববর্ষের কেনো আয়োজন নয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মুজিববর্ষের জন্য আমাদের বিশাল আয়োজন ছিল। ব্যাপক জনসমাগম হতে পারে এমন কর্মসূচি পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদ্যাপন এমনভাবে হবে যাতে জনগণ ঝুঁকির মুখে না পড়ে। গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি করোনা ভাইরাস নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পাওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্যের। তারপরেও আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণ সবচেয়ে বড়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু ব্যাপক জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। তাই জনসমাগম আপাতত বন্ধ রেখেছি। পরবর্তী সময়ে তারিখ জানানো হবে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় প্রতি জেলায় হাসপাতালে করোনা ইউনিট খোলা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব সময় মাস্ক পড়ে থাকতে হবে না। কিন্তু সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অনেকেই পাগল হয়ে মাস্ক কিনছে। এটা দরকার নেই। শুধু যাদের সর্দি-কাশি আছে তাদের সাবধানে থাকতে হবে। সাধারণত ঋতু বদলের সময় মানুষের সর্দি-কাশি হয়, সাধারণ সর্দি-জ্বরে ভয় নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কাছে জনগণের কল্যাণ সবচেয়ে বড়। আমরা উদযাপন করবো, কিন্তু উদযাপনটা একটু ভিন্নভাবে হবে। লোকসমাগম যাতে কম হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে উদযাপন করবো। যেহেতু বিশ্বব্যাপী এটা ছড়িয়েছে, সেখানে দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়াটা আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আমরা বিশাল আকারে করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। যেখানে লাখ লাখ মানুষ জমায়েত হবে। কিন্তু আমরা জমায়েতগুলো বন্ধ করে দিয়েছি। এমনকি ২৬শে মার্চ শিশুদের যে অনুষ্ঠান আমরা করি, সেটাও স্থগিত করে দিয়েছি। যাতে কোনোভাবে এটা মানুষের ক্ষতি করতে না পারে। তবে আমরা অন্যান্য কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। পুষ্পমাল্য অর্পণ ও টুঙ্গিপাড়ায় শিশুদের অনুষ্ঠান সীমিত পরিসরে করবো। এর আগে গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাস নিয়ে সচেতন ও সতর্ক থাকার পরামর্ম দেন। এসময় প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ভিড় এড়িয়ে চলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। এ পর্যন্ত দেশে তিনজন করোনায় আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হওয়ায় তিনি এই ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করেন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনাদের (দেশবাসীর) আতঙ্কিত না হতে অনুরোধ করেছেন। যেহেতু; এটি একটি ছোঁয়াচে ভাইরাস,তাই তিনি আপনাদেরকে যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলতে বলেছেন। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন,একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মারাত্মক এই ভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ারও আহ্বান জানান। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের প্রস্তুতি সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুসরণ করে চীনে করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহন শুরু করেছিলাম। তিনি বলেন, যে তিন স্তরের ব্যবস্থা নিয়েছি সেগুলো হলো-এই ভাইরাসের আগমন নিয়ন্ত্রণ, একজনের থেকে অপর জনের মধ্যে সংক্রমণ আটকানো এবং কোন কারণে যদি ভাইরাস এসেই পড়ে, তবে, দেশে তার বিস্তার ঠেকানো। আসাদুল বলেন, তারা মন্ত্রিসভার বৈঠকে করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে এই পর্যন্ত গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই ভাইরাসের সংক্রমণ সনাক্ত হওয়া তিন ব্যক্তির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। পরিস্থিতি এমন নয় যে, হাজার হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য সচিব বলেন, জনগণ শুধু জানে যে, বিশ্বজুড়ে কতজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বা মারা গেছে, তবে, তারা জানে না যে ভাইরাসে আক্রান্ত কতজন ইতোমধ্যেই সুস্থ্য হয়ে উঠেছে, সেটাও জানা দরকার। সুতরাং, আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। ইতালি থেকে আসা দুই জনের দেহে করোনার অস্থিত্ব বিমানবন্দরে শনাক্ত হলো না কেন-এই প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য সচিব জানান,করোনা সংক্রমিত হলে ১৪ দিন পর্যন্ত তা ধরা পড়ে না। তাই বিষয়টি শনাক্ত করা যায়নি। তবে এই দুই জন ইতালি থেকে আসার সময় কোন ফ্লাইটে ছিলেন, তাতে কারা কারা ছিলেন, আসার পর কাদের সংস্পর্শে এসেছেন,তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে টেস্ট করা হবে তারা সংক্রমিত হয়েছেন কী না। এসময় খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠান স্থগিত নয়,পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। করোনা আতঙ্কে জিনিসপত্রের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন,জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কোনও কারণ নেই।