রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩২ অপরাহ্ন
এম আই ফারুক আহমেদ, কালের খবর :
‘আমার না হয় একটু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। কিন্তু কত মানুষের নিরাপত্তা তো দিতে পারছি আমি। তাতেই তৃপ্তি । এই নিয়েই গর্ববোধ করি।’ঈদের দিন দায়িত্ব পালনেও তৃপ্তি আছে। কথাগুলো বলছিলেন ঈদুল ফিতরের দিন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্ট আনিসুল ইসলাম। রাজধানীতে ঈদের দিন সকাল থেকে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই ঈদ কাটছে আনিসুলের মতো হাজারো পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের।
অনেকের পরিবার-পরিজন ঢাকায় থাকলেও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য তারা সকাল থেকেই নেমে পড়েন পেশাগত কাজে। আনিসুল ইসলাম যেমন বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় শ্যামলীর বাসা থেকে বের হয়ে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে আসা ভিআইপি প্রটোকলের কাজে যুক্ত ছিলেন। নামাজ শেষে রাষ্ট্রপতিসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদগাহ ছেড়ে যাওয়ার পর পুলিশ বক্সে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বেলা ১১টার দিকে যখন তার সঙ্গে কথা হয় তখন সড়ক একেবারেই ফাঁকা। বক্সের বাইরে থাকা ট্রাফিক কনস্টেবল আশরাফ হোসেনকে দেখা গেল আরেক সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ করছেন। ফাঁকে ফাঁকে দু-একটা গাড়ি যা আসছে তা ঠিকঠাক যেন যায় সেজন্য হাত দিয়ে ইশারা করছেন।
বক্সের ভেতরে গিয়ে সার্জেন্ট আনিসুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়ের পরই জানতে চাওয়া হলো- কেমন কাটছে আজকের দিন। হাসিমুখে জবাব দিলেন, ‘ভালো। এই তো যেমন দেখছেন। আপনারা (সাংবাদিক) অফিস করছেন, আমরাও ডিউটি করছি।’
বাসায় স্ত্রীকে রেখে সকালে বের হয়েছেন আনিসুল। বেলা আড়াইটায় ডিউটি শেষ হলে বাসায় ফিরবেন। ঈদের সকালের আনন্দটা পরিবারকে দেয়ার সুযোগ পাননি। পথে পাজামা-পাঞ্জাবি আর টুপি পরে দলে দলে মানুষকে ঈদের জামাতের দিকে যেতে দেখলে হঠাৎ হঠাৎ এক-আধটু পীড়া উঁকি দেয় বটে, কিন্তু দায়িত্বের কথাটাই সবার সামনে থাকে। তাই তাই ঈদের দিনের এই দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছেন আনিসুলের মতো পুলিশ সদস্যরা।
আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘যদি মনে করেন দেশের নাগরিক হিসেবে এমন আনন্দকে বিসর্জন দেয়ার পর কেমন লাগছে, তাহলে অবশ্যই বলব ভালো লাগছে। কারণ যে যা-ই বলুক, আমি তো জানি আমার দায়িত্ব পালন করার কারণে অনেকে নিরাপত্তাবোধ করছেন। সড়কে শৃঙ্খলা বজায় থাকছে।’
‘আর পারিবারিক দিক থেকে চিন্তা করলে অবশ্যই কিছুটা খারাপ লাগে।’ বলতে থাকেন আনিসুল, ‘কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে আমরা যারা এসব উৎসবের দিনেও দায়িত্ব পালন করি তাদের এতেই শান্তি। তবে দুই ঈদের অন্তত একটি যারা পরিবারের সঙ্গে করতে পারে তাদের কিছুটা হলেও ভালো লাগে। কিন্তু যারা দুই ঈদই পরিবারের বাইরে কাটান তাদের জন্য এটা কষ্টের।’
জানা গেছে, রাজধানীতে দায়িত্বপালনকারী সব পুলিশ সদস্যের জন্য ঈদের দিনে ‘খিচুরি’ দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়।
পুলিশ বক্স থেকে বের হওয়ার পর কথা হয় ট্রাফিক কনস্টেবল আশরাফ হোসেনের সঙ্গে। ২৭ বছরের চাকরিজীবনে কয়টি ঈদ পরিবারের সঙ্গে করার সুযোগ পেয়েছেন তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তিনি। তবে তাতে খুব বেশি আক্ষেপ নেই আশরাফ হোসেনের। বললেন, ‘দেশের জন্য কাজ করি এটাই তো গর্বের। পরিবারকে সময় দিতে পারি না ঈদের দিন, কিন্তু অন্যভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলি, যাতে কোনো সমস্যা না হয়।’
তবে আশরাফ হোসেনের নিজের চেয়ে সার্জেন্টদের জন্য কষ্ট হয়। তার ভাষায়, ‘আমরা না হয় একভাবে ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু স্যারদের অনেক কষ্ট। তারা তো সময়ই বের করতে পারেন না।’