রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি, কালের খবর :
ঈশ্বরদীতে ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ করার জন্য শত শত গাছপালা, বসতবাড়ি ও আবাদী জমির ক্ষতি হচ্ছে। তবে সেই ক্ষতিপূরণ না দিয়েই চলছে ‘ঈশ্বরদী-রূপপুর ১৩২ কেভি সঞ্চালন লাইন’ নির্মাণ কাজ। উল্টো ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসবের প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রামের শত শত নারী ও পুরুষ। ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত তাদের বসতবাড়ী, আবাদী জমি ও গাছপালা নষ্ট করতে দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তারা। গতকাল শনিবার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর মল্লিকপাড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব কথা জানানো হয়।
এলাকাবাসী জানায়, জয়নগর পিজিসিবি থেকে রূপপুর প্রকল্প পর্যন্ত ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য প্রায় এক বছর পূর্বে জয়নগর মল্লিকপাড়া গ্রামে ক্ষতিপূরণের প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সে সময় হাই ভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন যেসব জায়গা দিয়ে যাবে আর কী পরিমাণ ক্ষতি হবে তার একটি তালিকাও প্রস্তুত করা হয়। সম্প্রতি সেই ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপনের কাজ শুরু হলে স্থানীয় এলাকাবাসী বাধা দিয়ে তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। তারা গ্রামবাসীকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ না দিয়েই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যেতে থাকলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পুলিশকে গোপনে ‘ম্যানেজ’ করে গ্রামবাসীকে নানা রকম ভয়ভীতি দেখানো হয়। সরকারী কাজে বাধা দিলে গুলি করার নির্দেশ রয়েছে বলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপরও ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসী তাদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় থাকলে প্রতিদিনই ঈশ্বরদী থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। কাজে বাধা দেওয়ার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে ইয়াবা দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেন ঈশ্বরদী থানার একজন উপ-পরিদর্শক- এমন অভিযোগ করেন গ্রামের অসংখ্য মানুষ। তারা অভিযোগ করেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষমতার দাপটে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্ষতিপূরণ না দিয়েই অন্যায়ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে সার্ভে করা এলাকায় যেসব গাছ কেটে ফেলা হবে তা চিহ্নিত করে গেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। অথচ তাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোষ চলছে ওই গ্রামে। তারা আরও অভিযোগ করেন, তিন জন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির বাড়ির ওপর দিয়ে এই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুতের লাইন টানা হচ্ছে। এছাড়াও তাদের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন অসংখ্য লিচু গাছ কাটা পড়লেও তাদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না।
ক্ষতিগ্রস্থ আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান মল্লিক নামের এক ব্যক্তি জানান, ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি টানা হচ্ছে তার শত বছরের বসত বাড়ির ওপর দিয়ে। আরো তিনটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে তার নিজস্ব মালিকানাধীন জমির উপর। এজন্য কাটা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশ’ গাছ। অথচ তাকে কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না। তার ছেলে আলহাজ্ব বাবুল মল্লিক জানান, জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে ক্ষতিপূরণের কথা বলে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার অবৈধ ক্ষমতার দাপটে নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বাবুল প্রশ্ন রাখেন তাহলে- “আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ১৩২ কেভি লাইনটি টানা হচ্ছে তাহলে আমাদের ক্ষতি হলে আমরা কোথায় যাবো?” অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন ঈশ্বরদী উপজেলা ধান-চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মজিবর রহমান মোল্লা, আলহাজ্ব আতিয়ার রহমান মল্লিক, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, শামসুল আলম, মাহারুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, খবির মল্লিক ও আবান মল্লিক প্রমুখ।
এসব বিষয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ জানান, কৃষি জমির ওপর দিয়ে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নিয়ে যাওয়ার আগে কৃষি অফিসের কোন মতামত নেয়া হয়নি। তার ধারণা, যে এলাকার ওপর দিয়ে হাই ঋৃঋঋভোল্টেজের বিদ্যুৎ লাইন যাবে সে এলাকায় কৃষির চাষাবাদ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
পিজিসিবির প্রধান প্রকৌশলী অরুন সাহার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য রূপপুরে বিদ্যুতের একটি উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। যে এলাকা দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন যাবে সেই এলাকার মানুষদের তারা ক্ষতিপূরণ দিতে চান। কিন্তু তাদেরকে মৌখিকভাবে একাধিকবার বলার পরও তারা যোগাযোগ করছেন না। এসব বিষয়ে তাদের কাছে কাগজও পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটা সরকারী কাজ, এই কাজে সকলকে সহযোগিতা করা উচিত। পুলিশ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামবাসীদের হয়রানির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ হয়রানী করবে কেন। কাউকে হয়রানি করার খবর তিনি পাননি।