বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
কটিয়াদীর করগাঁও ইউনিয়নে এম পি নূর মোহাম্মদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর তিতাসের আ.লীগ নেতার মুক্তির দাবিতে মুক্তিযুদ্ধাদের মানববন্ধন। কালের খবর কিশোরগঞ্জের দানাপাটুলী ইউনিয়নে জন অংশগ্রহণ মূলক বাজেট সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সোনামসজিদ সীমান্তে বিদেশী পিস্তল-গুলিসহ যুবক আটক। কালের খবর বাংলাদেশ সাংবাদিক ক্লাবের উদ্যোগে ঈদ পুনর্মিলনী ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি গঠন সভা অনুষ্ঠিত। কালের খবর সুন্দরগঞ্জে মীরগঞ্জ শাখার জনতা ব্যাংক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অপচেষ্টার প্রতিবাদে দোকান মালিক,গ্রাহকদের মানববন্ধন। কালের খবর মিশনে যাওয়া হলনা সেনা সদস্য সাইফুর রহমানের। কালের খবর প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি,কিশোরগঞ্জে সেই বিএনপি নেতা চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা। কালের খবর ভূমিসেবা সপ্তাহ ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা তাড়াশে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী আবদুস সালাম বি.এস.সি। কালের খবর
রাজবাড়ীতে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব মানুষগুলোর দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। কালের খবর

রাজবাড়ীতে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনে নিঃস্ব মানুষগুলোর দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। কালের খবর

 রাজবাড়ী প্রতিনিধি, কালের খবর  :

রাজবাড়ীর চার উপজেলায় পদ্মার ভয়াবহ ভাঙনের শিকার কয়েক হাজার মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে। খেয়ে না খেয়ে কোনো রকমে চলছে তাদের বাস্তুচ্যুত জীবন।

অন্যের জমিতে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিলেও দোচালা অস্থায়ী একটি কক্ষেই চলছে পরিবারের সবার থাকা-খাওয়া, রান্নাবান্না এবং গবাদি পশুর জায়গা। ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, প্রশাসন থেকে পরিবারপ্রতি ২০ কেজি চাল পেলেও তা খুবই সামান্য।
এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করেন, এবার পদ্মার ভাঙন ভয়াবহ হয়ে ওঠার জন্য পদ্মা নদীতে ঠিকাদারদের অপরিকল্পিত ড্রেজিং দায়ী। তাঁদের অভিযোগ, রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মাঝনদীতে ড্রেজিং করার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা করেছে কূল ঘেঁষে, যা নদীভাঙনকে তীব্র করে তুলেছে।

এই নিঃস্ব পরিবারগুলোর মধ্যে জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া গ্রামের একাংশের বাসিন্দারা রয়েছে। সেখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন রহিমা বেগম। তিনি বলেন, দুটি সন্তান আর স্বামী নিয়ে তাঁর ছিল ছোট্ট সুখের সংসার। দুই বেলা দুই মুঠো খেয়ে ভালোই চলছিল তাঁর সংসার। স্বামী কৃষিকাজ ছাড়াও মাছ ধরে তা বাজারে বিক্রি করে সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন।

তবে পর পর দুবার পদ্মা নদীর ভাঙনে তাঁদের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। কষ্ট আর সীমাহীন অভাব। সর্বনাশা পদ্মা তাঁর ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, গাছপালা সবই গিলে খেয়েছে। পরের জমিতে কোনো রকমে টিনের ঝুপড়ি তৈরি করে এখন বসবাস করছেন। খেয়ে না খেয়ে যাচ্ছে তাঁদের দিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের হরিণবাড়িয়া এলাকার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বসতবাড়ি ও ফসলি জমি এবার পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়াসহ নিঃস্ব হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। মাথা গোঁজার আশ্রয়স্থল ও ফসলি জমি হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে অন্যের জমিতে ভাঙা ঘরের চাল দাঁড় করিয়ে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। রান্না ও থাকা-খাওয়ার স্থান একই। এ ছাড়া উপজেলা শহরে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি ভেঙে একেবারে বেহাল। হেঁটে যাওয়া ছাড়া নেই অন্য কোনো উপায়। এর ওপর নেই বাজার-সদাই করার মতো হাট-বাজার।

এ ছাড়া ভাঙনের শিকার হয়েছে জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়ন, কালুখালী রতনদিয়ার পাশাপাশি কালিকাপুর ইউনিয়ন, সদর উপজেলার মিজানপুর এবং গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলা, দেউগ্রাম ও দৌলতদিয়া ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের মোট ১৯টি স্থানে ভাঙনের মধ্যে রয়েছে; কিন্তু ভাঙন রোধে মাত্র কয়েকটি স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত রবিউল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগে নদীতে যে ড্রেজিং করা হয়েছে সে কারণেই এবার ভাঙন হয়েছে। তিনি বলেন, ২০ কেজি চাল পেয়েছিলেন, কিন্তু সে চাল কত দিন যায়। আশপাশে ভালো বাজার বা দোকানপাট নেই যে সেখান থেকে বাজার-সদাই করবেন।

কালুখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, উপজেলার রতনদিয়ায় এবার ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় দুই হাজার পরিবারের মধ্যে রিলিফ কার্যক্রম চালু করাসহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প চালু করতে পদ্মা নদীতে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করা হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাঝনদী দিয়ে ড্রেজিং না করে করেছে রাজবাড়ী জেলার তীরবর্তী অংশে। ফলে নদীতে পানি বৃদ্ধি এবং স্রোতের তীব্রতায় চোখের নিমেষেই ভেঙে গেছে এসব এলাকা। তিনি নদীভাঙন থেকে রাজবাড়ীবাসীকে রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য ৬০০ বান্ডেল ঢেউটিন ও বান্ডেলপ্রতি তিন হাজার করে মোট ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে আরো ৮০০ বান্ডেল ঢেউটিন ও ২৪ লাখ টাকা চেয়েছেন। জেলা প্রশাসন চেষ্টা করবে ঘরবাড়ি তৈরির জন্য ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ঢেউটিন ও নির্মাণ খরচ হিসেবে তিন হাজার টাকা প্রদানের জন্য।

তবে নদীভাঙনে বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলো ঘর কোথায় তুলবে—এ ব্যাপারে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, তাদের জন্য খাসজমি খোঁজা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পর খাসজমির সন্ধান করা হবে।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com