রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০৫ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, কালের খবর
ঠাকুরগাঁওয়ে সালিসে ডেকে পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও রুহিয়া থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা বলছেন, এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করার পর উত্ত্যক্তকারীর পক্ষ নিয়ে তাঁদের সন্তানদের বিনা অপরাধে শাস্তি দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
পাঁচ ছাত্র হচ্ছে—একই উপজেলার আখানগর ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির সারোয়ার হোসেন, আশরাফুল ইসলাম, রুবেল রানা, আসিফ ও সবুজ।
শাস্তিপ্রাপ্ত ছাত্র সারোয়ার হোসেন বলে, গত শনিবার সকালে তারা পাঁচ বন্ধু প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিল। পথে তারা দেখে রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোন্নাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের বখাটে ছেলে লিটন জমির উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছে। তারা পাঁচ বন্ধু প্রতিবাদ করে বখাটে লিটনকে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। পরদিন দুপুরে জমির উদ্দিন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাদের বিদ্যালয়ে ডেকে এনে সালিস বসান এবং ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার দায় চাপিয়ে দেন উল্টো তাদের পাঁচজনের ওপর। তাদের কোনো কথা না শুনেই প্রধান শিক্ষক জব্বার সেলুনের লোক ডেকে এলাকাবাসীর সামনে পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেন। সেই সঙ্গে এমন অপরাধ আবারও করলে আরো বড় ধরনের শাস্তি দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় অপরাধ না করেও বর্তমানে তারা নিজ এলাকায় লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছে না। এ মিথ্যা অপবাদে গ্রামের অনেক মানুষ তাদের ও তাদের পরিবারকে খারাপ চোখে দেখছে।
শাস্তিপ্রাপ্ত আশরাফুল ইসলাম, রুবেল, আসিফ, সবুজও একই ভাষ্য দিয়েছে।
সালিসে অভিযোগকারী লিটন ও ওই ছাত্রীও উপস্থিত ছিল। সপ্তম শ্রেণির এই ছাত্রী ও তার মায়ের সঙ্গে গতকাল বুধবার তাদের বাড়িতে কথা হয়। ছাত্রীটি কালের কণ্ঠকে বলে, ‘প্রকৃত অপরাধী লিটনের বিচার না করে প্রধান শিক্ষক উল্টো নিরপরাধীদের শাস্তি দিয়েছেন, যা সত্যি দুঃখজনক। ’ ক্ষোভ প্রকাশ করে মেয়েটির মা লিটনের শাস্তি দাবি করেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী লিটনের বাবা সিরাজুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে পাওয়া গেলেও তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। সালিসে উপস্থিত ছিলেন এমন এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার রাজনীতি (বিএনপি) করেন বলে এলাকায় প্রভাবশালী। তিনি অন্যায় করলেও কেউ মুখ খোলে না।
ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্দুল বারেক বলেন, ‘বিষয়টি খুবই নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। ’ তিনি প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের শাস্তি দাবি করেন।
অভিযোগ যাচাই করতে বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষক জব্বারকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করব না। ’
রুহিয়া থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় জানান, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা ভুপেন্দ্র নাথ মুখার্জি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।