বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঈশ্বরগঞ্জে সেতু নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। কালের খবর আসামি গ্রেপ্তারে পূর্বানুমতি সংক্রান্ত পুলিশের সার্কুলার স্থগিত ইসরাইলি গণহত্যার প্রতিবাদে সাইনবোর্ড প্রেস ক্লাবের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ বরণ করেছে বিএনপি। কালের খবর জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ পরিষদের উদ্যােগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত আওয়ামী দোসরদের রক্ষা করতে এখনো স্বেরাচারীদের হয়ে কাজ করছে প্রশাসন। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় ওয়াদুদ ভূইয়ার পক্ষ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে মিনারেল ওয়াটার ও কলম বিতরণ। কালের খবর রবিনটেক্স (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও কম্পটেক্স বাংলাদেশ লিমিটেড এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপর হামলা। কালের খবর মা‌টিরাঙ্গায় আওয়ামীলী‌গ নেতা আব্দুল কাদের গ্রেফতার। কালের খবর ইসরাইয়েলের বর্বর গণহত্যার প্রতিবাদে উত্তাল মাটিরাঙ্গা। কালের খবর
সর্বনাশী পদ্মা ৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ২৫৬ বর্গমাইল

সর্বনাশী পদ্মা ৫১ বছরে পদ্মায় বিলীন ২৫৬ বর্গমাইল

কালের খবর ডেস্ক : শিল্পী আব্দুল আলীমের কণ্ঠে ‘সর্বনাশা পদ্মা নদী…তোর কি রে আর কূলকিনারা নাই’ গানটি আজও হাহাকার তোলে শ্রোতার মনে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সেই ‘সর্বনাশা’ নদী পদ্মা গত ৫১ বছরে সর্বগ্রাসীও হয়ে উঠেছে।

এই সময়ে ২৫৬ বর্গমাইলের বেশি গ্রাস করেছে পদ্মা, যা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহত্তম শহর শিকাগোর প্রায় সমান এবং ঢাকা শহরের প্রায় আড়াই গুণ। দুর্বল নদীশাসন ও প্রাকৃতিকভাবে বালুচরে অবস্থানের কারণে এই ভাঙনপ্রবণতা তৈরি হয়েছে।
নাসার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান নাসা আর্থ অবজারভেটরি ‘ওয়ার্ল্ড অব চেঞ্জ : পদ্মা রিভার’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গত আগস্টে প্রকাশ করেছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবি বিশ্লেষণ এবং দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ শেষে এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৬৭ সাল থেকে পদ্মা নদীর ভাঙনে ৬৬ হাজার হেক্টরের বেশি (প্রায় ২৫৬ বর্গমাইল বা ৬৬০ বর্গকিলোমিটার) জমি হারিয়ে গেছে। তুলনা করলে এর পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের প্রায় সমান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি প্রধান কারণে পদ্মায় তীব্র ভাঙন তৈরি হয়। প্রথমত, দুর্বল তীর সংরক্ষণের কারণে মুক্ত প্রবাহিত নদী প্রাকৃতিকভাবেই দুই তীর ভেঙে চলেছে। দ্বিতীয়ত, নদীর তীর অবস্থান করছে বৃহৎ আকারের বালুচরে, যা দ্রুত ভেঙে যেতে পারে।

উপগ্রহের ছবিতে পদ্মা নদীর প্রস্থ, গভীরতা ও গঠন এবং সামগ্রিক আকারে নদীটির ভাঙন পরিমাপ করেন বিজ্ঞানীরা।

তাঁরা স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া সাম্প্রতিক ছবিগুলোর সঙ্গে ১৯৮৮ সাল থেকে পদ্মার আকৃতি এবং প্রস্থের পরিবর্তনগুলো তুলনা করেছেন। এতে জানানো হয়, বহু বছর ধরে গবেষকরা নদীটির বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রতিটি ‘পাকানো ও আঁকাবাঁকা’ উপগ্রহ ছবি নদীর একটি ভিন্ন কাহিনি তুলে ধরছে। যাতে দেখা যাচ্ছে নদীটি কিভাবে সর্পিল অবস্থা থেকে বেণী আকৃতি ধারণ করে আবার আঁকাবাঁকা হয়ে যাচ্ছে। নাসার ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট থেকে ধারণ করা ছবিগুলো শুষ্ক মৌসুমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা হয়েছিল।
এ ধরনের নদী ওপরের দিকের প্রান্তকে বেশি গ্রাস করে। কারণ অভ্যন্তরীণ দিকে তার শক্তি কম থাকে, কারণ সেখান অনেক বেশি পরিমাণে পলি জমা আছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নদীর নিচে এই পলি মাটি বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে। এক তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু পলি মাটি ১৯৫০ সালে সৃষ্ট ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধসের অবশিষ্টাংশ। গবেষকরা মনে করেন, এসব বালুর মতো ক্ষুদ্র উপাদান নদীর মধ্য দিয়ে অর্ধশতাব্দী ধরে সৃষ্টি হয়েছে।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থেকে মাদারীপুরের চরজানাজাত এলাকা পর্যন্ত ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০১৮ সালে পদ্মার আকৃতি ও প্রস্থের পরিবর্তনের দৃশ্য। ছবি : নাসা

তিন দশক ধরে পদ্মা নদী তুলনামূলকভাবে সংকীর্ণ, সোজাসুজি অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ফের আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা যায়, সবচেয়ে লক্ষণীয় পরিবর্তন হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার অঞ্চলের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে। এখানে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয়েছে। ১৯৯৮ সালে ভারতে ফারাক্কা বাঁধ উদ্বোধনের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে বন্যা দেখা দেয়, যে কারণে বাংলাদেশে আরো বেশি পানি ঢুকে পড়ে। এর আগে, ‘চরজানাজাতের’ কাছে পদ্মা নদী বেঁকে যায়। এখানে ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে নদীর রেখাচিত্র তীব্রভাবে বেঁকে যায়। পরে বক্ররেখাটি ১৯৯২ সাল থেকে আবার বাড়তে শুরু করে। ২০০২ সালে বক্ররেখার পতন শুরু হয় এবং এর পর থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়।

প্রতিবেদনটিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টিতেও আলোকপাত করা হয়েছে। তাতে নদীভাঙনের ফলে এই সেতুটি কিভাবে প্রভাবিত হতে পারে সেদিকটিও উঠে এসেছে। পদ্মার এই ভাঙন সেতুটির নির্মাণকে হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে। তবে কয়েকজন গবেষক মনে করেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে ওখানকার মাটি প্রকৃতপক্ষে আরো স্থির হতে পারে এবং নদীভাঙনের পরিমাণ কমিয়ে একসময় তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনের শেষে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পদ্মার ভাঙনের হার, এর সর্পিলতা ও বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে। নদীটি বক্ররেখার পরিবর্তে জমির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে তা ভাঙন থেকে মুক্ত। সূত্র : নাসা ওয়েবসাইট।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com