রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০ অপরাহ্ন
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, কালের খবর :
ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরের দিকটা দেখে মনে হবে বেশ ভালোই চলছে চিকিৎসা সেবা। বিষয় অনেকটা মাকাল ফলের মতোই। ডাক্তারের পদ শূন্যতা, দায়িত্বে উদাসীনতা, সময়মতো না আসা, অনিয়মিতভাবে ডিউটি করা, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকাল আড়াইটা পর্যন্ত কর্মস্থলে থাকার কথা, সেখানে আসেন সকাল ১১-১২টায়, চলে যান ১টায়। আবার কেউ বছরের পর বছর প্রেষণে রয়েছেন, আর বেতন উত্তোলন করছেন এ হাসপাতাল থেকে। এ ছাড়া রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। ফলে হাসপাতালটিতে অনিয়মই যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত ডাক্তারের পদ রয়েছে ২১টি। এর মধ্যে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সহ শূন্য রয়েছে ১২টি পদ। আর এখানে কাগজে কলমে ডাক্তার পোস্টিং রয়েছে ৯ জন। তার মধ্যে মেডিকেল অফিসার ডা. শাহানা পারভীন ঘাটাইল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন গত ১২ই নভেম্বর, ২০১১ সালে। যোগদানের পর তিনি গত ১৬ই মে ২০১২ তারিখ থেকে সাভার কোরিয়া মৈত্রি হাসপাতালে প্রেষণে চলে যান। কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই- অবস্থা এমন। ফলে গত ৫ বছর ধরে এ হাসপাতাল থেকে বেতন উত্তোলন করে দ্বৈত সুবিধা ভোগ করছেন চিকিৎসকরা। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রেষণে থাকার কথা স্বীকার করে ডা. শাহানা পারভীন বলেন- এটাও তো (কোরিয়া মৈত্রি) সরকারি হাসপাতাল এখানেও তো আমি সেবা দিচ্ছি। এছাড়া এটা (সাভার) আমার নিজের এলাকা। যার যার এলাকায় থাকতে কে না চায়। এখানে দালালের দৌরাত্ম্যও কম নয়।
স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতা ফোরামের সভাপতি মাসুদুর রহমান আজাদ বলেন, ফোরামের মাসিক সভায় এ নিয়ে বার বার আলোচনা হয়। আমরা নিজেরাও দালালদের হাসপাতালে ঢুকতে নিষেধ করেছি। হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতা নিয়েও কথা বলেছি। কোনো কাজ হচ্ছে না। হাজী ক্লিনিকের দালাল পারুল ও কহিনূরের সঙ্গে কথা হয়। জানতে চাইলে তারা বলেন-এমআরসি-সহ অন্যান্য রোগী দিতে পারলে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে পাই। এদিকে চক্ষু বিশেষজ্ঞ, নাক কান গলা বিশেষজ্ঞ, চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ও অর্থোপেডিক চিকিৎসকের মঞ্জুরিকৃত পদ থাকলেও সব পদই শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর। ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও সহকারী সার্জন ডা. শুভময় পাল জানান, আউটডোর ও ইনডোর মিলে যে কজন ডাক্তার রয়েছে আর রোগীর যে চাপ তাতে আরও ডাক্তার থাকলে চিকিৎসা সেবা ভাল হতো। তিনি আরও বলেন, ৩ জন ডা. থাকেন জরুরি বিভাগে।
বাকি কয়জনকে আউটডোরে পর্যায়ক্রমে ডিউটি করতে হয়। অপর দিকে ঘাটাইলের ৫ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গত ২০০৬ সালের ৭ই জুন মাসে হাসপাতালটিকে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করণের বর্ধিত কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০০৭ সালের মধ্যে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হওয়ার কথা থাকলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে নির্ধারিত সময়ে উন্নয়ন কাজ শেষ করতে না পারায় ২০১৩ সালের মে মাস থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে হাসপাতালটিতে ৫০ শয্যার কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। কাগজে কলমে ৫০ শয্যা থাকলেও ডাক্তার স্বল্পতার কারণে এলাকাবাসী এর কোনো সুবিধা পাচ্ছেন না। চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগি পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের কমিশনার রুবি বলেন, চিকিৎসার জন্য কয়েকদিন গিয়েও ডাক্তার না পেয়ে ফিরে এসেছি। এ নিয়ে জানতে চাইলে ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাহাঙ্গির আলম অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, পুরো উপজেলায় ডাক্তার দরকার ৩২ জন, সেখানে রয়েছে মাত্র কয়েক জন। আবার জরুরি বিভাগে রাত দিন ডিউটি করতে দরকার ৪ জন ডাক্তারের, এ কয়জন ডাক্তার দিয়ে আমি কিভাবে চালাবো। তিনি আরও বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অতিসম্প্রতি কুতুব উদ্দিন নামে এক ডাক্তারকে পোস্টিং দেয়া হয়েছে কিন্তু তিনি যোগদান করছেন না।
মতামত দিন