সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
সীরাত বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা পুরস্কার বিতরণ সম্পূর্ণ। কালের খবর “হাই কোর্টে রিট ” নড়াইল ২ আসনের সতন্ত্র প্রার্থী লায়ন নূর ইসলাম। কালের খবর বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘন্টা অবরোধের সমর্থনে ডেমরা থানা ছাত্রদলের মশাল মিছিল। কালের খবর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র উৎসব ২০২৩-এর প্রস্তুতি সম্পন্ন। কালের খবর নড়াইল-২ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী লায়ন নূর ইসলাম। কালের খবর বিএফইউজে’র রিপোর্ট সাংবাদিক নিপীড়নের চিত্র : ১১ মাসে খুন, হামলা, মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার ২৯৬ সাংবাদিক। কালের খবর সরকারের চাপে পড়ে যে কজন হেভিওয়েট নেতা বিএনপি থেকে বেরিয়ে ভোটে অংশ নিচ্ছেন। কালের খবর মানবতার সেবায় উদাহরণ হয়ে থাকবেন ঠাকুরগাঁও জেলার পুলিশ সুপার উত্তম প্রসাদ পাঠক। কালের খবর সিরাজগঞ্জ- ৬ শাহজাদপুর আসনে নৌকার মনোনয়ন পেলেন মোঃ চয়ন ইসলাম। কালের খবর আসন্ন সংসদ নির্বাচনে রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের মনোনয়নপত্র জমা। কালের খবর
দিনাজপুরে সালিসের নামে তরুণীকে নির্যাতন করে হত্যা। কালের খবর

দিনাজপুরে সালিসের নামে তরুণীকে নির্যাতন করে হত্যা। কালের খবর

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি, কালের খবর  :

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অন্য ধর্মের ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ‘অপরাধে’ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক তরুণীকে সালিসের নামে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে মাতবরদের বিরুদ্ধে। ডিপ্লোমা নার্সিং পড়ুয়া শ্যামলী হাঁসদা (১৯) নামের সাঁওতাল সম্প্রদায়ের দরিদ্র ছাত্রীটির ওপর দিনভর নির্যাতন চলে।

খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে নির্যাতন প্রত্যক্ষ করলেও তাঁকে রক্ষা না করে মীমাংসার প্রস্তাব দিয়ে চলে আসে। রাত ৮টার দিকে রক্তাক্ত মেয়েটি জ্ঞান হারালে জরুরি চিকিৎসার জন্য রাতে হাসপাতালেও নিতে দেওয়া হয়নি। পরদিন হাসপাতালে নিলেও শ্যামলীকে বাঁচানো যায়নি।
নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটে গত রবিবার পার্বতীপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে হরিরামপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মী হোসেনপুর গ্রামে। ঘটনার তিন দিন পর গত বুধবার রাতে তরুণী শ্যামলী দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি ওই গ্রামের শিবচরণ হাঁসদার মেয়ে।

নিহত শ্যামলী হাঁসদা বগুড়া মিশন হাসপাতালের ডিপ্লোমা নার্সিংয়ে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তিনি গত বছর বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করে এ কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর আশা ছিল সরকারি চাকরি করে দরিদ্র মা-বাবার সংসারে অভাব দূর করবেন।

কিন্তু দুর্বৃত্তদের নির্যাতনের শিকার হয়ে সেই আশা পূরণ হলো না শ্যামলীর।
স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রবিবার সকাল ১০টার দিকে একই ইউনিয়নের পল্লীপাড়া গ্রামের তরুণ মোজাহার আলী যান শ্যামলীর বাড়িতে। তিনি শ্যামলী ও তাঁর মা-বাবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরই সাঁওতাল সম্প্রদায় অধ্যুষিত গ্রামটির মাতবর সোম হাঁসদার নেতৃত্বে সাত-আটজনের একটি দল শ্যামলী ও তাঁর বন্ধু মোজাহার আলীকে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ দিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায়। তাঁদের দুজনকে মাতবর সোম হাঁসদার বাড়ির আঙিনায় নিয়ে দিনভর থেকে থেকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। নির্যাতনের সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে যায় হরিরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান ও মেম্বার গোলজার হোসেন এবং স্থানীয় মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মুকুলসহ এক দল পুলিশ। কিন্তু তারা নির্যাতন প্রত্যক্ষ করলেও শ্যামলীকে উদ্ধারে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন নিহত শ্যামলীর বাবা শিবচরণ হাঁসদা, শ্যামলীর পালক বাবা চুড়কা হাঁসদা ও তাঁর ভাই মামুন হাঁসদা।

তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও কাউকে আটক করা তো দূরের কথা বরং উল্টো নির্যাতনকারী সালিসকারীদের মীমাংসা করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। শ্যামলীকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্যাতনকারীরা মাতবরের বাড়িতে আটক রেখে মেম্বার গোলজার হোসেনের মধ্যস্থতায় আপসরফা করা হয়। এ সময় শ্যামলীর বন্ধু মোজাহারের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আর শ্যামলী জ্ঞান হারালে তাঁর বাবা হাসপাতালে নিতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে শ্যামলীর বাবার পীড়াপীড়িতে রাত ১২টার দিকে গ্রাম্য এক চিকিৎসকের দ্বারা তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাত শেষে সোমবার সকালে শ্যামলীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পাশের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক শ্যামলীকে দ্রুত দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলেন।

অভিযোগের ব্যাপারে গতকাল শুক্রবার সকালে তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই মুকুল মুঠোফোনে কালের খবরে’র কাছে দাবি করেন, ঘটনা শোনার পর তিনি তদন্ত কেন্দ্রের আইসি ইন্সপেক্টর মোসলেম উদ্দিনের নির্দেশে সেখানে গিয়ে শ্যামলীকে দেখতে পাননি। তবে তাঁর বন্ধু মোজাহারকে দেখতে পায়। তিনি নির্যাতনের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোসলেম উদ্দিন ও পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি সাহেবকে অবগত করে তাঁদের নির্দেশে সেখানে অবস্থানরত মেম্বারকে আপস-মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে স্থান ত্যাগ করি। মেয়েটির বাবাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তাঁরা তা না করে গ্রাম্য চিকিৎসকদের দ্বারা চিকিৎসা করান। এরপর জানতে পারি মেয়েটি দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। ’

মধ্যপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনার দিন আমি ছুটিতে থাকায় বিস্তারিত অবগত ছিলাম না। আমাকে বিষ পান করার কথা এএসআই মুকুল জানিয়েছিল। ’ পার্বতীপুর মডেল থানার ওসি হাবিবুল হক প্রধান দাবি করেন, তাঁকে এ ব্যাপারে ঘটনার আগে ও পরে কেউ কখনো অবগত করেনি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান তিনি ।

হরিরামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, নির্যাতিতাকে কোনো চিকিৎসা ছাড়াই আটক রাখার কথা তিনি শুনেছেন। পরে রফাদফার মাধ্যমে মোজাহার হোসেনকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ নিয়ে তিনি মেম্বার গোলজারকে শাসিয়েছেন বলেও জানান। পুলিশের এএসআই মুকুলের বিরুদ্ধে তিনি গাফিলতির অভিযোগ করেন।

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com