শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর : সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা – চট্টগ্রাম মহা-সড়কের চিটাগাং রোডের শিমরাইল মোড়ে ট্রাফিক বক্সের সামনে ২০ টি স্পটে প্রকাশ্যে চলছে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি। চাঁদার টাকা পৌছে যাচ্ছে পুলিশসহ বিভিন্ন মহলে। চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রন করছে কাউন্সিলরসহ কয়েক শতাধিক চাঁদাবাজ। সেই আলোচিত নুর হোসেনের আমল থেকে মহাসড়কে চাঁদা উত্তোলন ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। মহাসড়কে কোথায় কে চাঁদাবাজি করে তা দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক বিভাগের না বলে জানিয়েছে জেলা ট্রাফিক বিভাগ। জেলা পুলিশ বলছে কারা চাঁদাবাজি করছে তাদের তালিকা পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে রয়েছে ট্রাফিক বক্স। এ ট্রাফিক বক্সের সামনেই বসে দেদারসে চলছে পরিবহনে চাঁদাবাজি। ট্রাফিক বক্সের পাশে সড়কের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে পরিবহনের কাউন্টার। প্রতিটি কাউন্টার থেকে মাসে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত চাঁদা তোলা হচ্ছে। কাউন্টার পরিচালকরা পরিবহনের প্রতিটি গাড়ি থেকে জিপি নামে চাঁদা নেয়। সেই চাঁদার টাকা টেবিল ভাড়া ও বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করতে চাঁদাবাজদের হাতে তুলে দেয়। তিনটি কারনে তারা চাঁদা দেয়। প্রথমত, সড়ক ও জনপথের অবৈধ জায়গায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। দ্বিতীয়ত, ট্রাফিক বিভাগ যেন তাদের গাড়ি রিকুয়েজেশন না করে। তৃতীয়ত, স্থানীয় চাঁদাবাজরা যাতে তাদের গাড়ি ক্ষতি না করে সেজন্য।
ট্রাফিক বক্সের পূর্ব উত্তর পাশে ডেমরা নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের স্ট্যান্ড। এ স্ট্যান্ডে প্রতিটি লেগুনা, টেম্পু ও অটো থেকে চাঁদা তোলা হচ্ছে। দৈনিক ১শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত লেগুনা, টেম্পু ও অটো থেকে চাঁদা আদায় করা হয়। এ সকল যানবাহন চলাচলের কোন ধরনের অনুমতি না থাকায় তাদের চাঁদা দিয়ে সড়কে চলতে হয়।
পাশেই রয়েছে আলোচিত নুর হোসেনের আস্তানা হিসেবে পরিচিত শিমরাইল ট্রাক স্ট্যান্ড। ট্রাক স্ট্যান্ডের প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এক সময় এ ট্রাক স্ট্যান্ডটি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ইজারায় চলতো। সাত খুনের পর থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডের ইজারা বন্ধ হয়ে যায়। ইজারা বন্ধ হলেও চাঁদা আদায় বন্ধ হয় নি।
কাঁচপুর ব্রীজের নিচে দুটি স্পটে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। উত্তর পাশে প্রতিদিন দৈনিক ২ শ থেকে আড়াইশ ট্রাক বালি পরিবহন করে। প্রতিটি ট্রাক থেকে দৈনিক ৫০ থেকে ২ শ টাকা আদায় করা হয়। দক্ষিন পাশে ল্যান্ডিং স্টেশনের জায়গায় শতাধিক গাড়ি রাখা হয়। বিআইডব্লিইটিএর তদারকি না থাকায় প্রতিটি গাড়ি থেকে চাঁদাবাজরা চাঁদা আদায় করছে।
শিমরাইল মোড় থেকে বন্ধু পরিবহনের গাড়িগুলো চলাচল করে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাড়কের উপর গাড়ি দাড় করিয়ে টিকিট বিক্রি ও যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। মহাসড়কে কোন গাড়ি দাড় করানো অনুমতি নেই। সড়কে স্ট্যান্ড রাখতে প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫ শ টাকা থেকে চাঁদা উঠানো হয়।
সড়কের উল্টো পাশে কাঁচপুর, মেঘনা, সোনারগাঁ, জাদুঘর, রূপগঞ্জ, গাউছিয়া, আড়াই হাজার, নরসিংদী, ভৈরব রূটের গাড়ির স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। এ স্ট্যান্ডে বাস, লেগুনা ও টেম্পু দাড় করিয়ে যাত্রী ওঠা নামা করানো হয়। এ স্ট্যান্ডে প্রতিটি গাড়ি থেকে তোলা হয় ২ শ থেকে ৫ শ টাকা। এ জায়গায় কোন গাড়ি দাড়ানোর অনুমতি নেই। চাঁদা নিয়ে এখানে গাড়ির স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে।
ট্রাফিক বক্সের উল্টো পাশে কোমল, বেকার, মনজিল, ৭১ সার্ভিস, নীলাচল, সবধরনের লোকাল বাস, লেগুনা স্ট্যান্ড বানানো হয়েছে। স্ট্যান্ড বানানোর ফলে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই লম্বা যানজট লেগে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা সাধারন মানুষকে চরম দুর্ভোগে পোহাতে হয়। এ গাড়িগুলো সড়কের উপর দাড়িয়ে টিকিট বিক্রিসহ যাত্রী উঠা নামা করাতে মিনি স্ট্যান্ড বানিয়ে রেখেছে। এ অবৈধ যাত্রী ওঠানামার স্ট্যান্ডের জন্য প্রতিটি বাসের থেকে দৈনিক ১ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। প্রতিটি লেগুনা থেকে দৈনিক ৭ শ টাকা নেয়া হচ্ছে।
শিমরাইল মোড় থেকে ডেমরা নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে প্রায় ২ হাজার অটোরিক্সা চালানো হচ্ছে। অবৈধ বৈদ্যুতিক অটোরিক্সা চালাতে দৈনিক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিটি অটোরিক্সা লাইনে নামাতে তাদের নাম্বার প্লেট দিয়েছে সর্বদলীয় মাসুদ। প্রতিটি নাম্বার প্লেটের জন্য আদায় করেছে ৩ হাজার টাকা করে। এছাড়া দৈনিক আদায় করা হচ্ছে প্রতিটি অটো থেকে ৩ শ টাকা করে।
এ মোড়ে নারায়ণগঞ্জ রূটে চলছে শীতলক্ষ্যা পরিবহন, দুরন্ত পরিবহন ও লেগুনা। লক্কর ঝক্কর গাড়ি দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে এ দুটি পরিবহন। অবৈধ স্ট্যান্ড সৃষ্টির জন্য প্রতিটি গাড়ি থেকে আদায় করা হচ্ছে ৫ শ টাকা করে।
এ ছাড়া মহাসড়কের উভয়পাশে দুই হাজার দোকান বসানো হয়েছে। অবৈধ প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ৪ শ থেকে ১ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। সড়ক ও জনপথের উচ্ছেদ ঠেকাতে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করতে টাকা দিচ্ছে হকাররা।
মিনার মসজিদের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিএনডি প্রজেক্টের জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ১০ টি বড় মাপের হোটেল। প্রতিটি হোটেল থেকে দৈনিক ৯ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৯০ হাজার টাকা আদায় করছে স্থানীয় প্রভাবশালী হাবিবুল্লাহ হবুল।
জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক বলেন, ২০ টি বহু চাঁদাবাজরা চাঁদা তুলছে। সবকিছু আমার জানা নেই তবে ২৩০২ নামে একটি শ্রমিক সংগঠন মহাসড়কে ট্রাফিক বক্সের পাশে চাঁদা আদায় করছে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল বলেন, আগে সড়ক থেকে চাঁদা আদায় করা হতো। এখন হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারী বলেন, শিমরাইল মোড়ে এক একটি স্পটে এক একজন চাঁদা আদায় নিয়ন্ত্রন করছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিকের পরিদর্শক (টিআই এডমিন) তসলিম বলেন, শিমরাইল মোড়ে কেউ চাঁদাবাজি করে না। দেখাতে পারলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রাফিকের সিনিয়র পুলিশ সুপার আব্দুর রশিদ বলেন, কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে তা দেখার কাজ ট্রাফিক বিভাগের না। চাঁদাবাজির বিষয় দেখবে থানা।
নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান বলেন, আমার জানা মতে নারায়ণগঞ্জের কোথাও কোন চাঁদাবাজি হচ্ছে না। তবে শিমরাইলে চাঁদাবাজদের তালিকা দেয়া হলে সাথে সাথে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন ।