সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের খবর :
যশোরের শহরের কারবালা রোডের বোরহানশাহ হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার ৫ বছর ধরে খাবার খাচ্ছেন এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। একবেলা মাদ্রাসার ছাত্র, আরেকবেলা শিক্ষকরা তার বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম খয়রাত হোসেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং মাদ্রাসাটির সভাপতি। সম্প্রতি তার বাড়িতে এতিমখানার খাবার নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়,পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ১৩ বছর বয়সী এক কিশোর বাইসাইকেলে চড়ে আসছে। এসময় বিভিন্ন বয়সী কয়েকজন তার পথরোধ করে দাঁড় করান। কিশোরের সাইকেলের ঝুলানো টিফিন ক্যারিয়ার খুলে খাবার দেখছেন তারা।
এরপর ওই ব্যক্তিরা কিশোরের কাছে জানতে চান ‘এই খাবার কোথায় যাবে, কোথায় থেকে এলো’। উত্তরে কিশোর জবাব দেয়, ‘সে যশোর শহরের কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া এতিমখানার ছাত্র। এতিমখানা থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে মাদ্রাসাটির সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খয়রাত হোসেনের বাড়িতে’। এভাবেই প্রতিদিনই শিক্ষার্থীরা সভাপতির বাড়িতে খাবার নিয়ে যায় বলেও জানায় ওই শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যশোরের ঐতিহ্যবাহী এতিমখানা ও মাদ্রাসা কারবালা পীর নূর বোরহান শাহ ফোরকানিয়া। হাফিজিয়া ও এতিমখানা মিলে দুই শাখায় অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের আংশিক অর্থায়নে ও জেলার বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তিদের টাকায় চলে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করার জন্য একটি কার্যনির্বাহী কমিটি রয়েছে। যার সভাপতি যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম খয়রাত হোসেন।
মাদ্রাসাটিতে এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য তিনজন শিক্ষক দায়িত্ব পালন করেন। অর্ধশতাধিক এতিম শিক্ষার্থীর তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেনের তিন বেলা খাবার এই মাদ্রাসা থেকে যায়। দুপুরে শিক্ষার্থীরা দিয়ে আসে। আর রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকরা সভাপতির বাড়িতে দিয়ে আসেন। এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে এতিমদের খাবারে ভাগ বসিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
মাদ্রাসাটির সাংগঠনিক কমিটির এক নেতা জানান, “আওয়ামী লীগ নেতা খয়রাত হোসেন যশোরের বিশিষ্ট ও বিত্তশালী ব্যক্তি। তিন মেয়ে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। খয়রাত হোসেনের শহরে মার্কেট ও বাসা রয়েছে। তারপরও তিনি এতিম শিশুদের খাবার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে।
সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম খয়রাত হোসেন বলেন, “মাদ্রাসার জন্য আমি অনেক কিছু করেছি। আমারও মাদ্রাসা থেকে কিছু পাওয়ার হক রয়েছে।”
পরে তিনি আরও বলেন, “আমি ডায়াবেটিস ও কিডনির রোগী। মাদ্রাসার খাবার খেলে আমি এতদিন বাঁচতাম না। ফলে আমি কখনো মাদ্রাসার খাবার খাইনি।”