সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২১ পূর্বাহ্ন
শহিদুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিবেদক, কালের খবর : লোকটি কখনো মানবাধিকার কর্মি , কখনো সংবাদকর্মী, আবার কখনো রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন দলের স্বক্রিয়সদস্য বা কর্মী পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন পদে চাকুরী প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়া প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার’কে চট্টগ্রাম মহানগরীর ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ৫ জুলাই র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরের ইপিজেড থানাধীন আলিশাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার (৩০), পিতা-মৃত আব্দুল সাত্তার, সাং-পূর্ব ফুলোহার, থানা-রাজাপুর, জেলা-ঝালকাঠি, বর্তমানে-ফ্রিপোর্ট, থানা-ইপিজেড, চট্টগ্রাম মহানগর’কে আটক করা হয়।জানা যায় ভুক্তভোগী ভিকটিম চট্টগ্রাম মহনগরীর সিইপিজেড এলাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীর স্যাম্পল মেকার হিসেবে চাকুরী করেন। গ্রেফতারকৃত আসামীর আপন বড় ভাই মোঃ আল আমিন একই গার্মেন্টসে স্যাম্পল মেকার পদে কর্মরত থাকায় তার মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত আসামীর সাথে ভিকটিমের পরিচয় হয়। গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার নিজেকে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগী ভিকটিমকে একটি ভিজিটিং কার্ড প্রদান করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার পরিচিত লোক আছে এবং চাকুরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখায়। তখন ভিকটিম বলে তার ১৯ বছরের একটি ছেলে আছে কিন্তু তার এসএসসি’ পাসের সনদপত্র নেই সে সময় মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার সেটা কোন ব্যাপার না বলে ভিকটিমকে আশ্বস্ত করে। পরবর্তীতে আব্দুল ছালাম হাওলাদার ভিকটিমের ছেলেকে ঢাকা বিমান বন্দরে ৪র্থ শ্রেণীর সরকারী চাকুরি দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তার ছেলেকে এসএসসি পাসের সনদপত্রের ব্যবস্থা করে দিবে বলে আশ্বস্ত করে। আব্দুল ছালাম হাওলাদার এর বড় ভাই তার সাথে দীর্ঘদিন চাকুরি করে বিধায় ভিকটিম তার কথায় সরল মনে বিশ্বাস করে। পরতর্বীতে আব্দুল ছালাম হাওলাদার ভিকটিমের ছেলেকে চাকুরি দিবে মর্মে পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার টাকার একটি মৌখিক চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ভিকটিম এর ছেলেকে ঢাকা বিমান বন্দরে চাকুরি বাবদ গত ০৬ জুলাই ২০২২ইং তারিখে প্রথমে এক লক্ষ টাকা এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সর্বমোট পাঁচ লক্ষ ষাট হাজার টাকা প্রতারক আব্দুল ছালাম হাওলাদারকে প্রদান করে। গত ২৯ নভেম্বর ২০২২ইং তারিখে ছেলের চাকুরি চূড়ান্ত হওয়ার কথা বলে ভিকটিম ও তার ছেলেকে ঢাকায় নিয়ে যায় এবং চাকুরি হবে বলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বিপরীতে একটি হোটেলে দীর্ঘ ১৭ দিন অবস্থান করার পর মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদারের কোন খোজঁ না পেয়ে ভিকটিম ছেলেকে নিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। একইভাবে জনৈক মোঃ রাসেল আহমেদ, পিতা-মোঃ মাইন উদ্দিন, সাং-মান্দারী, থানা-লালমাই, জেলা-কুমিল্লা, বর্তমানে-ইপিজেড আলম কলোনী, থানা-ইপিজেড, চট্টগ্রাম মহানগর’কে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের প্রটোকল অফিসারের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে বর্র্ণিত প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার তার নিকট থেকে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও জনৈক মোঃ আক্তার হোসেন, পিতা-মৃত আঃ ছাত্তার বেপারী, সাং-পূর্ব ছিরামদি, থানা-চাঁদপুর, জেলা-চাঁদপুর’কে ঢাকা বিমান বন্দরে প্রটোকল অফিসারের চাকুরির প্রলোভন দেখিয়ে বর্ণিত প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার তার নিকট থেকে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে চার লক্ষ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার এর নিকট বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে উল্লেখিত চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে সে কোন প্রকার সদুত্তর দিতে না পারায় ভিকটিমগণ তাদের দেয়া টাকা ফেরৎ চাইলে প্রতারক মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার টাকা ফেরৎ দিতে অস্বীকৃতি জানায় ও মারমুখী আচরণ করে। বর্ণিত বিষয়ে ভিকটিমদের সন্দেহ সৃষ্টি হলে র্যাব-৭, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। র্যাব-৭, চট্টগ্রাম বিষয়টি গুরুত্বের সহিত আমলে নিয়ে উক্ত প্রতারককে গ্রেফতারে লক্ষে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে। এরই প্রেক্ষিতে গত ০৫ জুলাই ২০২৩ইং তারিখ র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরের ইপিজেড থানাধীন আলিশাপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মোঃ আব্দুল ছালাম হাওলাদার (৩০), কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা আসামীর সহায়তায় পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘদিন যাবৎ চাকুরীর দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা গ্রহণ করতঃ আত্মসাৎ করে আসছে মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।