সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন
মোঃ মুন্না হুসাইন তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি, কালের খবর : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় শুঁটকি তৈরির ধুম পড়েছে। ছোট-বড় প্রায় শতাধিক চাতালে এ শুঁটকি তৈরির কার্যক্রম চলছে। চলতি বছরে প্রায় ২৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য অফিস। বর্তমানে শুঁটকি চাতালগুলোতে কেউবা মাছ কাটছে কেউবা মাছগুলো রোদের তাপে নেড়ে শুকিয়ে নিচ্ছে কেউবা প্যাকেটজাত করছে। শুঁটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততার কারণে শুঁটকি চাতালগুলো কর্মমুখর হয়ে উঠেছে। শুঁটকি চাতালে কাজ করে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের মৌসুমী কর্মসংস্থান হয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, প্রতিবছর শীত শুরু হওয়ার সময় চলন বিলাঞ্চলের নদী-খাল-বিলের পানি কমে যায়। এতে প্রচুর পরিমাণ দেশীয় মাছ ধরা পড়ে। ছোট-মাঝারি ধরনের মাছগুলোকে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা কমমূল্যে কিনে চাতালে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরির পর প্যাকেটজাত করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে থাকেন। সিরাজগঞ্জের তৈরি শুঁটকি জামালপুর, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন আড়তে চলে যায়। সেখান থেকে দেশের বাইরেও চলে যায়।
এবছর ইতিমধ্যে উল্লাপাড়া উপজেলায় ১২৬ মেট্রিক টন এবং তাড়াশ উপজেলায় প্রায় ৯৫ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছে। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত শুঁটকি তৈরির কার্যক্রম চলবে। এতে প্রায় ২৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন হবে। তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় প্রায় ৭০-৮০ জন শুঁটকি ব্যবসায়ী রয়েছে। ছোট-বড় অন্তত শতাধিক চাতাল রয়েছে। প্রতি চাতালে অন্তত ১০-১৫ জন করে নারী-পুরুষ কাজ করে। এতে সহস্রাধিক নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, প্রতি মণ কাঁচা মাছ পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা মণ দরে কেনা হয়। পরে প্রতি তিন কেজি কাঁচা মাছ থেকে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। চাতালগুলোতে ট্যাংরা, পুঁটি, খলসে, বাতাসি, চ্যালা, মলা, ঢেলা, টাকি, গুতুম, চিংড়ি, গুছি, চান্দা, বোয়াল ও শৈল মাছসহ ছোট-বড় অসংখ্য মিঠাপানির দেশীয় মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি হয়। জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত চলবে শুঁটকি শুকানোর কাজ। সুস্বাদু হওয়ায় চলনবিলের মাছের শুঁটকির চাহিদা সারা দেশেই রয়েছে।
ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমান জানান, চলনবিলে শুঁটকি তৈরির পর বাজারজাত করতে প্রায় একমাস সময় লাগে। শুকানোর পর প্যাকেটজাত করা হয়। তারপর শুষ্ক মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হয়। আবার অনেক ব্যবসায়ী চাতাল থেকেই শুঁটকি পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেন।
ব্যবসায়ী শাহিন হোসেন জানান, চলনবিলের তৈরি শুঁটকি অত্যন্ত সুস্বাদু। এখানকার তৈরি শুঁটকি সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, জামালপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। প্রকারভেদে এখানকার শুঁটকি ৩০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত আয়েশা, হাফিজা ও খাদিজা জানান, তারা ভোরে উঠেই চাতালে চলে যান। শুঁটকি রোদে দিয়ে বাড়ি ফিরে রান্নার কাজ শেষ করে আবার যান শুঁটকি উঠিয়ে রাখতে। এ কাজে প্রতিদিনের মজুরি হিসেবে পান ২৫০ টাকা। কৃষিকাজের পাশাপাশি শীতের আগে-পরে প্রায় চার মাস শুঁটকির চাতালে কাজ করে থাকি। যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার খরচ ও ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার জোগান দেওয়া যায়।
সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান জানান, মাছের উৎপাদন একটু কম থাকলেও চলতি বছর ২৪০ মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। যার দাম হবে প্রায় ১০ কোটি টাকার ওপরে। ভালো মানের এবং কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া শুঁটকি ব্যবসা প্রসারের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেগুলো বাস্তবায়ন হলে শুঁটকি ব্যবসায়ী ও এর সঙ্গে যেসব শ্রমিকরা জড়িত তারা উপকৃত হবে।